• রবিবার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪
    ৭ আশ্বিন ১৪৩১
    ঢাকা সময়: ০৫:২৯

প্রাণি ও মৎস্যসম্পদ উন্নয়নে বেসরকারি খাতকে এগিয়ে আসার আহ্বান

  • জাতীয়       
  • ১৮ এপ্রিল, ২০২৪       
  • ৩১
  •       
  • ১৮-০৪-২০২৪, ১৮:০৪:৪৬

পথরেখা অনলাইন : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের পোল্ট্রি, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ খাতের উন্নয়নে বেসরকারি খাতকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে নিজেদেরই নিজস্ব খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন। তিনি বলেন, “আমি চাই বেসরকারি খাত এগিয়ে আসুক। বেসরকারী খাতকেই উদ্যোক্তা হিসেবে দেখতে চাই। তাদের সবরকম সহযোগিতা করতে চাই। এর ফলে আমার দেশের মানুষের কর্মসংস্থান বাড়বে। আমরা তাই চাই।”
 
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ সকালে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রের (বিআইসিসি) পাশে শেরে বাংলানগরের পুরাতন বাণিজ্য মেলা মাঠে আয়োজিত দুই দিনব্যাপী ‘প্রাণিসম্পদ সেবা সপ্তাহ ও প্রদর্শনী-২০২৪’ এর উদ্বোধনকালে প্রধান অতিথির ভাষণে একথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা বেসরকারী খাতকেই বেশি উৎসাহিত করতে চাই। তাদেরকেই বেশি সুবিধা দিতে চাই। কারণ এগুলো সব সরকারিভাবে হয় না। এটা বেসরকারি খাতে হলে তাতে কর্মসংস্থানেরও সৃষ্টি হয়। আমাদের শিক্ষিত যুবসমাজ এক্ষেত্রে এগিয়ে আসুক সেটাই আমরা চাই।
 
তাঁর সরকারের দেয়া সুযোগ-সুবিধাকে কাজে লাগিয়ে যুব সমাজকে উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে ওঠার আহবান জানিয়ে তিনি বলেন, শুধু একটা পাস করে চাকরির পেছনে না ছুটে যুব সমাজ যদি নিজের উদ্যোগে একটু ব্যবসা-বাণিজ্য করে তাহলে কিন্তু আমরা যথেষ্ট এগিয়ে যেতে পারবো। এসব ক্ষেত্রে আমাদের যুব সমাজকে এগিয়ে আসার জন্য আরো উৎসাহিত করতে হবে। যাতে কখনো আমাদের কারো উপর নির্ভরশীল হতে না হয়। খাদ্য নিরাপত্তার সাথে সাথে আমাদের নিজস্ব পুষ্টির ব্যবস্থা আমরা নিজেরাই করতে পারি সে বিশ্বাস আমার আছে।
 
প্রধানমন্ত্রী উৎপাদন বৃদ্ধিতে গবেষণার উপর গুরুত্ব আরোপ করে বলেন, এক্ষেত্রে আমাদের গবেষণা আরও বাড়াতে হবে। আজ আমরা ৪০ ভাগের উপরে পেঁয়াজ উৎপাদন করতে পারি। আমরা কারো মুখাপেক্ষী হয়ে থাকতে চাই না। প্রতিটি পণ্য আমরা নিজেরাই উৎপাদন করব। তার সরকার খামারিদের সব ধরনের সহযোগিতা দিয়ে উৎসাহিত করে যাচ্ছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী মো. আব্দুর রহমানের সভাপতিত্বে স্বাগত বক্তব্য রাখেন মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. সেলিম উদ্দিন। অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ডেইরি ফার্মার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ইমরান হোসেন দেশের ডেইরি খাতের প্রতিনিধি হিসেবে এবং বাংলাদেশ পোল্ট্রি ইন্ডাস্ট্রি সেন্ট্রাল কাউন্সিলের (বিপিআইসিসি) যুগ্ম আহ্বায়ক মশিউর রহমান পোল্ট্রি খাতের প্রতিনিধি হিসেবে বক্তব্য রাখেন। শুরুতে প্রাণিসম্পদ খাতে বর্তমান সরকারের অগ্রগতি ও অর্জনের ওপর একটি তথ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় এবং প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের এ আয়োজনের এবারের প্রতিপাদ্য হচ্ছে- “প্রাণি সম্পদে ভরবো দেশ, গড়বো স্মার্ট বাংলাদেশ।” উদ্বোধন শেষে প্রধানমন্ত্রী প্রদর্শনীর বিভিন্ন স্টল ঘুরে দেখেন।
 
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর সরকার একটি  প্রাণিসম্পদ ও ডেইরি উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। যেসব পশু পালন করা হয় তা স্বাস্থ্যসম্মতভাবে পালনের ব্যবস্থা নিতে হবে। মাছ, হাঁস-মুরগি, পশু পালন এবং উৎপাদন ও প্রক্রিয়াজাতকরনও স্বাস্থ্যসম্মত ভাবে করতে হবে। এটাও গুরুত্বপূর্ণ। এ বিষয়ে আরো যতœবান হতে হবে। দেশের চাহিদা মিটিয়ে হালাল মাংস রপ্তানির মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের সুযোগ আমাদের রযেছে। সরকার প্রধান বলেন, অনেক দেশ হালাল মাংস আমাদের থেকে ক্রয় করতে চায়। সেই সুযোগ আমাদের নিতে হবে। আর সে জন্য আমাদের পশু পাখিগুলোকে স্বাস্থ্য সম্মতভাবে লালন পালন ও নিয়ম মেনে জবাই করতে হবে  এবং প্যাকেটজাত করার ক্ষেত্রে নিয়ম মেনে হচ্ছে কিনা সে বিষয় আমাদের বিবেচনায় নিতে হবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, এভাবে যদি করতে পারি তাহলে দেশের মানুষের চাহিদা মিটিয়ে আমরা বিদেশেও রপ্তানি করতে পারবো। তিি বলেন, ‘ইতোমধ্যে কিছু কিছু রপ্তানি হচ্ছে। কিন্তু আরো বেশি রপ্তানি করার সুযোগও আমাদের আছে, অনেক দেশের কাছ থেকে আমরা সেই অনুরোধও পাচ্ছি।’
 
প্রধানমন্ত্রী পশু জবাইয়ের ক্ষেত্রে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের উপর গুরুত্বারপ করে বলেন, আমরা যাতে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করতে পারি সেজন্য কিছু আধুনিক প্রযুক্তি সম্পন্ন বুচার হাউস (কসাই খানা) আমাদের তৈরি করা দরকার। বিশেষ করে কোরবানির সময় রাস্তাঘাটে যেখানে সেখানে ফেলে পশু জবাই করা আমাদের বন্ধ করতে হবে। সুনির্দিষ্ট একটি স্থান থাকবে যেখানে পশু জবাই হবে এবং যার যার চিহ্নিত পশু সে নিয়ে যাবে। তাহলে পুরো প্রক্রিয়া যেমন স্বাস্থ্যসম্মত হবে তেমনি পশুর পরিত্যক্ত অংশ এবং চামড়া যথাযথভাবে কাজে লাগানো যাবে। না হলে চামড়ার মান নষ্ট হয় তেমনি অনেক কিছুই অপচয় হয়ে যায়। তিনি বলেন, পশুর কেবল মাংসই আমাদের প্রয়োজন হয় না এর হাড়, রক্ত, চামড়া এমনকি বর্জ্যও আমাদের কাজে লাগে। আমরা যদি এগুলো যথাযথভাবে সংরক্ষণ ও প্রক্রিয়াজাত করে  ব্যবহার করতে পারি তাহলে আমাদের অনেক কাজে আসতে পারে। এগুলো যথাযথভাবে সংরক্ষণ এবং কাজে লাগানোর ব্যবস্থা আমাদের করতে হবে । এ ব্যাপাওে সংশ্লিষ্টদেওর ব্যবস্থা নেয়ারও পরামর্শ দেন তিনি।
 
শেখ হাসিনা বলেন, এ বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেয়া দরকার বলে আমি মনে করি এবং সংশ্লিষ্ট মহল এ উদ্যোগ নেবেন বলে আমি আশা করি।
তিনি বলেন, তার সরকার ৪৭০ টি উপজেলায় ভ্রাম্যমান পশু চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছে। এই ভেটেরনারী সেক্টরটার দিকে আরও দৃষ্টি দেয়া দরকার উল্লেখ করে তিনি আটটি বিভাগ ও ৬৪ টি জেলায় ভেটেরনারী ফার্ম, পশু চিকিৎসালয় ও সংরক্ষণাগার গড়ে তোলার উপরও জোর দেন।
 
তিনি বলেন, ধান চালের পাশাপাশি পশু সম্পদ সংরক্ষণাগার গড়ে তুলে কোন সম্পদই যেন অপচয় না হয় সেদিকে লক্ষ্য রেখে এগুলোকে যেন আমাদের আর্থিক কাজে আমরা ব্যবহার করতে পারি সেদিকে দৃষ্টি দিতে হবে। মৎস্য ও পশু পাখির খাদ্যও যেন নিরাপদ হয় এবং এগুলো যাতে পরবর্তীতে মানবদেহে কোন রোগের সৃষ্টি করতে না পারে সেদিকে লক্ষ্য রাখার ওপরও তিনি গুরুত্ব দেন। বাংলাদেশে ফার্মাসিউটিক্যাল শিল্প অনেক দূর এগিয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন ,আমরা পশু পাখির জন্য নিজেরাই নানা রকম ভ্যাকসিন তৈরি করে স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে পারি। শেখ হাসিনা বলেন, এটা দুর্ভাগ্যের বিষয় যে বাংলাদেশ বিস্তীর্ণ সমুদ্রসীমা অর্জন করলেও এখনও গভীর সমুদ্র থেকে সম্পদ আহরণ করতে পারেনি। তিনি বলেন,“আসলে আমরা এই উদ্দেশ্যে কোনো উদ্যোক্তা পাচ্ছি না। এটাই বাস্তবতা।”
 
তিনি ১৯৯৮ সালের প্রলংকারি বন্যার উল্লেখ করে বলেন, তাঁর সরকারের প্রচেষ্টায় বীজ ও কীটনাশকসহ প্রয়োজনীয় কৃষি সামগ্রি কৃষকের দোড়গোড়ায় পৌঁছে দেয়ায় এরপরই বাম্পার ফসল উৎপাদন হয়। যেখানে বিভিন্ন বিদেশি মিডিয়া বলেছিল এক কোটি মানুষ এই বন্যায় না খেতে পেয়ে মারা যাবে সেখানে একটি মানুষও না খেয়ে মরেনি। অথচ তিরি সরকার প্রধান হিসেবে সংসদে যখন দেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ন হবার ঘোষণা দিলেন তখন বিরোধি দলীয় নেত্রী খালেদা জিয়ার উপস্থিতিতে তার সাবেক অর্থমন্ত্রী সাইফুর রহমান সংসদে দাঁড়িয়ে বলেন খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়া ভাল না, তাহলে বিদেশি সাহায্য পাওয়া যাবেনা। আসলে এটা হচ্ছে নীতির বিষয়। তারা দেশকে অন্যে মুখাপেক্ষী করেই রাখতে চায়। 
 
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর সরকার প্রতি ইঞ্চি অনাবাদি জমি চাষের আওতায় আনার মাধ্যমে সার্বিক উৎপাদন বাড়ানোর প্রচেষ্টা চালানোর পাশাপাশি পরিত্যক্ত চরাঞ্চলে মহিষ, ভেড়া হাঁস-মুরগি চাষে উৎসাহিত করছে। তিনি বলেন, এমনকি ভাষানচরে য়ে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছি সেখানেও প্রচুর ভেড়া ও মহিষ লালন পালন হচ্ছে। হাঁস-মুরগি প্রতিপালন ও মাছের চাষ হচ্ছে। আমরা এভাবে উৎসাহ দিয়ে যাচ্ছি। আমাদের যেটুকু মাটি ও সম্পদ রয়েছে তা ব্যবহার করেই আমরা স্বয়ং সম্পূর্ণ হতে পারব। জনগণ মৎস, পশু ও হাঁস মুরগি পালনে আরো এগিয়ে আসবেন এবং আমাদের খামারগুলো আরো উন্নত হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
পথরেখা/আসো

  মন্তব্য করুন
আরও সংবাদ
×

পথরেখা : আমাদের কথা

আমাদের পোর্টালের নাম— pathorekha.com; পথরোখা একটি অনলাইন নিউজ পোর্টাল। আমরা এই প্রতিষ্ঠানকে প্রতিদিনের সত্য-সংবাদের পথরেখা হিসেবে প্রমাণ করতে চাই। পথরেখা সারাদেশের পাঠকদের জন্য সঠিক ও বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ এবং মতামত প্রকাশ করবে। পথরোখা নিউজ পোর্টাল হিসেবে ২০২৩ সালের জুন মাসে যাত্রা শুরু করলো। অচিরেই পথরেখা অনলাইন মিডিয়া হিসেবে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ে নিবন্ধনের প্রক্রিয়া শুরু করবে। পথরোখা  দেশ কমিউনিকেশনস-এর অঙ্গ প্রতিষ্ঠান।
 
পথরোখা জাতীয় সংবাদের উপর তো বটেই এর সঙ্গে রাজনীতি, আন্তর্জাতিক, খেলাধুলা, কৃষি, বিনোদন, অর্থনীতি, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, তথ্য ও প্রযুক্তিসহ বিভিন্ন বিভাগকেও গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করে। মাল্টিমিডিয়া সাংবাদিকতা এবং চৌকস ফটোগ্রাফিকে বিশেষ বিবেচনায় রাখে।
 
পথরোখা’র সম্পাদক আরিফ সোহেল এই সেক্টরে একজন খুব পরিচিত ব্যক্তিত্ব। সাংবাদিক হিসেবে তার দীর্ঘ ৩০ বছর কর্মজীবনে তিনি দৈনিক বাংলাবাজার পত্রিকা, আজকের কাগজ, রিপোর্ট২৪ ডটকম প্রভৃতি প্রতিষ্ঠানে কাজ করেছেন। এ ছাড়া তিনি সরকারী ক্রীড়া পাক্ষিক ‘ক্রীড়া জগত’ ও লাইফস্টাইল ম্যাগাজিক অপ্সরা নির্বাহী সম্পাদক হিসেবে দীর্ঘদিন কাজ করেছেন। তিনি জনপ্রিয় অনলাইন দেশকণ্ঠের নির্বাহী সম্পাদক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন।
 
পথরেখা দেশের মৌলিক মূল্যবোধ, বিশেষ করে জাতীয় সার্বভৌমত্ব, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতার প্রতি অঙ্গীকারবদ্ধ। এছাড়াও, এটি দেশের নাগরিকের মানবিক ও নাগরিক অধিকারের পক্ষে কথা বলবে। ন্যায়পরায়ণতা, নির্ভুলতা এবং বস্তুনিষ্ঠতা বজায় রাখতে আমরা অঙ্গীকারাবদ্ধ। আমরা বিশ্বাস করি যে জনগণের বিশ্বাসযোগ্যতা আমাদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ। পথরেখা রাজনৈতিক ইস্যুতে নির্দলীয় অবস্থান বজায় রাখবে। একটি নিরপক্ষ অনলাইন হিসেবে আমরা নিজেদের কর্মকাণ্ডে প্রমাণ করার শতভাগ প্রছেষ্টা করব। তবে সঠিক পদ্ধতি অনুসরণ করেও কিছু ভুল হতেই পারে। যা ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ রাখছি সব মহলেই। সততা পথে অবিচল; আলোর পথে অবিরাম যাত্রায় আমাদের পাশে থাকুন; আমরা থাকব আপনাদের পাশে।
 
উল্লেখ্য, পথরেখা হিসেবে একটি প্রকাশনী দীর্ঘদিন থেকে প্রকাশিত হয়ে আসছে। এবার উদ্যোগ নেওয়া হলো অনলাইন অনলাইন নিউজ পোর্টাল হিসেবে প্রকাশ করার।