পথরেখা অনলাইন : একদিন আগে পিএসজি ও বরুশিয়া ডর্টমুন্ডের জয় দেখার পর এবার রিয়াল মাদ্রিদ ও বায়ার্ন মিউনিখের জয় দেখল ফুটবলবিশ্ব। উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগের সেমিফাইনালে ওঠেছেন স্পেন ও জার্মানীর দুই ক্লাব। সেমিফাইনালের রিয়ালের প্রতিপক্ষ বায়ার্ন আর পিএসজির মোকাবেলা করবে বরুশিয়া। শেষ চারে ওঠার লড়াইয়ে রিয়াল বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ম্যানচেস্টার সিটিকে টাইব্রেকারে ৪-৩ গোলে এবং বায়ার্ন ১-০ গোলে হারিয়েছে ইংলিশ জায়ান্ট আর্সেনালকে। অনেক বছর পর এবার চ্যাম্পিয়ন্স লিগের সেমিফাইনাল হচ্ছে কোন ইংলিশ ক্লাবের অংশগ্রহন ছাড়া। রিয়াল-সিটি ম্যাচে সবার মধ্যমণি অ্যান্তোনি রুডিগার। তাকে ঘিরেই সবার উচ্ছ্বাস, উৎসব। টাইব্রেকার শেষে এমন চিত্রনাট্যই মঞ্চস্থ হলো ইত্তিহাদ স্টেডিয়ামে। এমনটা তো হবেই। রুডিগার যে রিয়াল মাদ্রিদের জয়ের নায়ক। এ জার্মান সেন্টারব্যাকই স্প্যানিশ জায়ান্টদের পৌঁছে দিয়েছেন চ্যাম্পিয়নস লিগের সেমিফাইনালে। নিজেদের মাঠে ৪-৩ গোলে হেরে ম্যানচেস্টার সিটি পড়েছে এখন স্বপ্নভঙ্গের যন্ত্রণায়। অথচ রিয়ালের নায়ক নয়, খলনায়ক হতে পারতেন রুডিগার। তার ভুলের সুযোগ কাজে লাগিয়ে সমতায় ফিরেছিল সিটি। ম্যাচের অতিরিক্ত সময়ে গোলের সুবর্ণ সুযোগও মিস করেছিলেন তিনি।
নিজের সেই ভুলের প্রায়শ্চিত্তই যেন করলেন রুডিগার টাইব্রেকারে এসে। শেষ শট জালে জড়িয়ে প্রিয় দল রিয়ালকে উপহার দিলেন সেমির টিকিট। একটি রেকর্ড করল রিয়াল। ১৭তম বারের মতো চ্যাম্পিয়নস লিগের শেষ চারে নিজেদের নাম লিখল তারা। রোমাঞ্চকর এ জয়ে রিয়াল শুধু চ্যাম্পিয়নস লিগের শেষ চারের টিকিটই কাটেনি। ইউরোপের সেরাদের আসরে একই সঙ্গে একটি শোধও তুললো টুর্নামেন্টের ১৪বারের চ্যাম্পিয়নরা। গত মৌসুমে এই সিটিই সেমিফাইনাল থেকে রিয়ালকে ছিটকে দিয়েছিল। আর এবার কোচ কার্লো আনচেলত্তির শিষ্যরা ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়নদের বিদায় করে পুরোনো হিসাবটা মেটালো শেষ আটেই। রিয়ালের দুর্ভেদ্য রক্ষণ দেয়াল ভাঙতে গিয়েই বেশি গলদঘর্ম হয়েছেন কোচ পেপ গার্দিওলার শিষ্যরা। তাদের হারের মূল কারণ তো এটাই। আর গোলপোস্টের সামনে চীনের মহাপ্রাচীর হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন অতন্দ্রপ্রহরী আন্দ্রে লুনিন। যে কারণে ম্যাচে বল দখল আর আক্রমণে আধিপত্য দেখিয়েও নাস্তানাবুদ হতে হয়েছে স্বাগতিকদের।
আর্লিং হালান্ড ছিলেন নিজের ছায়া হয়ে। কেভিন ডি ব্রুইনা, ফিল ফোডেন, জ্যাক গ্রিলিশরা আলো ছড়ালেও ফিরতি লেগে অমীমাংসিত থেকে যায় ১-১ গোলে। টাইব্রেকারে রিয়াল গোলরক্ষক রুখে দিয়েছেন বার্নার্দো সিলভা ও মাতেও কোভাচিচের শট। কিন্তু সিটি গোলরক্ষক এদেরসন হতাশ করেন কেবল লুকা মদরিচকে। কোয়ার্টার ফাইনালের প্রথম লেগে সান্টিয়াগো বার্নাব্যুতে ৩-৩ গোলের সমতা নিয়ে ম্যানচেস্টার সফরে গিয়ে রিয়াল। ফিরতি লেগের ১২ মিনিটেই রিয়ালকে ৪-৩ গোলে এগিয়ে নেন রদ্রিগো। এদেরসন শুরুতে তার শট রুখে দিলেও ফিরতি বল পেয়ে ঠিকই লক্ষ্য ভেদ করেন এ ব্রাজিলিয়ান তারকা। ম্যাচের ৭৬ মিনিটে রুডিগারের ভুলের সুযোগ নিয়ে সিটির হয়ে স্কোর লেভেল করেন ডি ব্রুইনা। পরে আর কোনো গোল না হওয়ায় ৪-৪ গোলের সমতা রয়ে যায় অতিরিক্ত সময়ে। আরও একবার অ্যালিয়াঞ্জ অ্যারেনায় এসে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ থেকে বিদায় নিতে হলো ইংলিশ ক্লাব আর্সেনালকে। ২০১৫ আর ২০১৭, দুই বছরই এই মাঠে ৫-১ গোলে বিধ্বস্ত হয়ে নিজেদের ইউরোপিয়ান যাত্রা থামিয়েছিল ইংলিশ ক্লাবটি। সেই গল্পটা বদলাল না ২০২৪ সালে এসেও।
ঘরের মাঠ এমিরেটসে ২-২ গোলের ড্রয়ের পর অ্যালিয়াঞ্জ অ্যারেনায় আর্সেনাল হারল ১-০ গোলে। লম্বা সময় পর চ্যাম্পিয়ন্স লিগে আসার পর তাই আর্সেনালের যাত্রা চলল কোয়ার্টার ফাইনাল পর্যন্তই। জশুয়া কিমিখের একমাত্র গোলে নিশ্চিত হয়েছে আর্সেনালের বাড়ি ফেরা। সেইসঙ্গে এও নিশ্চিত হয়েছে, ২০২৪ চ্যাম্পিয়মস লিগের ফাইনাল ইংল্যান্ডে হলেও, সেখানে থাকছে না কোনো ইংলিশ ক্লাব। এ নিয়ে ১৩তম বার ইউরোপীয় প্রতিযোগিতার শেষ চারে উঠল জার্মান ক্লাব বায়ার্ন মিউনিখ। চলতি মৌসুমটা খুব একটা ভাল যায়নি টমাস টুখেলের দলের। বিপরীতে প্রিমিয়ার লিগে রীতিমত উড়েছে আর্সেনাল। ১-০ ব্যবধানের জয় হলেও তাই বেশ ঘাম ঝরাতে হয়েছে বায়ার্নকে। শুরু থেকে আর্সেনালই অবশ্য রক্ষণে বেশি মনোযোগ দেয়। প্রথম ২০ মিনিটে বায়ার্ন গোলে শটই নিতে পারেনি। ২৪তম মিনিটে জামাল মুসিয়ালার দূর থেকে নেওয়া শট আর্সেনাল গোলকিপার ডেভিড রায়া ঝাঁপিয়ে রুখে দেন। ৩১ মিনিটে ভালো সুযোগ পেয়েছিলেন আর্সেনালের গ্যাব্রিয়েল মার্তিনেল্লি। মার্টিন ওডেগার্ডের কাছ থেকে পাওয়া বলে শট নিয়েছেন মানুয়েল নয়ারের হাত বরাবর। প্রথমার্ধে গোলমুখে বলার মতো সুযোগ ছিল দুটিই। গোলশূন্য ব্যবধানেই বিরতিতে যায় দুই দল।