বিশেষ প্রতিবেদন : আবারো নাটক ঘরোয়া হকিতে। শুক্রবার শেষ হওয়া আসর শেষ হয়েও হয়নি শেষ। নাটকের পরে সিরিয়াল রয়ে গেছে। প্রিমিয়ার হকি লিগে মোহামেডান ৩-২ গোলে এগিয়ে থাকার সময় লালকার্ডের একটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে খেলতে অস্বীকৃতি জানায় তারা। নির্দিষ্ট সময় পর আম্পায়াররা আবাহনীকে জয়ী ঘোষণা করেন। হারলেও মোহামেডানের দাবি তারাই চ্যাম্পিয়ন। ক্ষুব্ধ মোহামেডানের ম্যানেজার আরিফুল হক বলেন, ম্যাচে এগিয়ে থাকায় ৩৮ পয়েন্ট নিয়ে আমরাই চ্যাম্পিয়ন। শিরোপা আমাদেরই। কারণ একটি রেফারেল বেঁচে থাকলেও তা আমাদের দেননি আম্পায়াররা।
এদিকে লিগের বাইলজ অনুযায়ী শীর্ষ স্থানে একাধিক পয়েন্টধারী হলে দুদলের মধ্যে পুনরায় ম্যাচ হবে। এখন আবাহনী ও মেরিনার্সের সমান ৩৭ পয়েন্ট হওয়ায় প্লে-অফ আয়োজনের জন্য বলেছেন ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক মমিনুল হক সাঈদ, আমরা বাইলজ অনুযায়ী দুই ক্লাবকে চিঠি দেব। চিঠিতে প্লে অফের সময় জানিয়ে দেওয়া হবে। তিনি যোগ করেন, দেখি ক্লাবগুলো কী বলে। বাইলজে সব কিছুর উল্লেখ রয়েছে।
এদিকে ম্যাচের পর আবাহনীর ম্যানেজার মাহবুব হারুন অবশ্য বলেন, আমরা শিরোপা নির্ধারণের জন্য প্লে অফ খেলতে চাই। ম্যাচ হারলেও মোহামেডানের নির্লজ্জ উদযাপন প্রশ্নের উদ্রেক করেছে। হকি লিগের অলিখিত ফাইনাল ম্যাচের ৪২ মিনিটে লিডে থাকাবস্থায় আবাহনীর খেলোয়াড়দের সঙ্গে অযথা মারামারিতে জড়িয়ে যান মোহামেডানের খেলোয়াড়রা। মুহূর্তেই পরিস্থিতি বদলে যায়। যার ফলশ্রুতিতে আম্পায়ারের দেখানো কার্ডের সিদ্ধান্তে খেলতে অস্বীকৃতি জানায় মোহামেডান। বিদেশি আম্পায়াররা মোহামেডানের দুইজন ও আবাহনীর একজন খেলোয়াড়কে লালকার্ড দেখালে তাদের জন্য প্রায় ১৫ মিনিট অপেক্ষার পর ‘রিফিউজড টু প্লে' শাস্তিস্বরূপ আবাহনীকে ৫-০ গোলে জয়ী ঘোষণা করা হয়। মোহামেডানের ম্যানেজার আরিফুল হক প্রিন্সের বক্তব্য, ‘আমাদের দুজন খেলোয়াড়কে লাল কার্ড দেখানো হয়েছে এবং একজনকে হলুদ কার্ড দেখানো হয়েছে। এ অবস্থায় আবাহনীর সঙ্গে এমন গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ খেলা আমাদের জন্য অসম্ভব ছিল। তাই আমরা খেলতে অস্বীকৃতি জানিয়েছি। এরপর শেষ বাঁশি বাজার পর আমরা এগিয়ে থাকার কারণেই জয়োৎসব করেছি।’ ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক মোমিনুল হক সাঈদ মোহামেডানের এই দাবির বিপক্ষে দিয়েছেন পাল্টা যুক্তি, ‘মাঠের আম্পায়াররা ভিডিও রেফারেলের সুবিধা নিয়েই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এ অবস্থায় কোনো দলের নতুন ভিডিও রেফারেল চাওয়ার কোনো যুক্তি নেই।’ ‘বিতর্কিত’ তকমা পাওয়া ম্যাচে তিন লাল কার্ড, পন্ড ফাইনালে আবাহনী জয়ী। প্রিমিয়ার ডিভিশন হকি লিগের অলিখিত ফাইনালে মুখোমুখি হয়েছিল আবাহনী-মোহামেডান।
জিতলে মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের সামনে ছিল ছয় বছর পর লিগ জয়ের সুযোগ। দুই গোলে পিছিয়ে পড়েও নাটকীয়ভাবে তৃতীয় কোয়ার্টারে ঘুরে দাঁড়িয়ে এগিয়ে যায় তারা। কিন্তু আম্পায়ারের 'বিতর্কিত' সিদ্ধান্তে নাখোশ হয়ে খেলা শেষ হওয়ার আগেই মাঠ ছেড়ে দেয় তারা। ফলে জয়ী ঘোষণা করা হয় আবাহনীকে। মওলানা ভাসানী স্টেডিয়ামে তৃতীয় কোয়ার্টারের দুই মিনিট ২৭ সেকেন্ড সময় বাকি থাকতেই বাঁধে বিপত্তি। তার কিছুক্ষণ আগে আবাহনীর পেনাল্টি কর্নার রুখে দেয় মোহামেডান। কিন্তু এরপর যা ঘটে যায় অনাকাঙ্খিত ঘটনা। দুই দলের খেলোয়াড়রা লিপ্ত হয়ে পড়েন ধাক্কাধাক্কিতে। যা সামলাতে হিমশিম খেতে হয় ম্যাচ অফিসিয়ালদের। পরিস্থিতি অনুকূলে আসার পর মোহামেডানের জুল পিদাউস ও আবাহনীর আফ্ফান ইউসুফকে হলুদ কার্ড দেখান আম্পায়ার। প্রায় মিনিট খানেক বাদে আবাহনীর মো. নাঈমুদ্দিন এবং মোহামেডানের দুই খেলোয়াড় দ্বীন ইসলাম ও তানভীর সিয়ামকে দেখানো হয় লাল কার্ড। তখনই বেঁকে বসে মোহামেডান।
আবাহনী খেলতে রাজি থাকলেও মাঠের বাইরে চলে যায় সাদা-কালোরা। ম্যাচের আগের দিন হলুদ কার্ডের কারণে রাসেল মাহমুদ জিমির নিষেধাজ্ঞা নিয়ে কম ‘নাটক’ হয়নি। শেষ পর্যন্ত জিমিকে ছাড়াই খেলতে নামে মোহামেডান। দারুণভাবে প্রত্যাবর্তনের পর ৩-২ গোলে এগিয়ে থেকে শিরোপা জয়ের পথেই ছিল তারা। কিন্তু মাঠ ছেড়ে যাওয়ার কারণে শেষ পর্যন্ত আবাহনীকে ৩-০ গোলে জয়ী ঘোষণা করেন আম্পায়ার। এ জয়ে আবাহনীর পয়েন্ট হল ৩৭। নিজেদের শেষ ম্যাচে জয় তুলে নেওয়া মেরিনার্সের পয়েন্টও একই। তাই বাইলজ অনুযায়ী, শিরোপা নির্ধারণের জন্য প্লে-অফ ম্যাচ খেলার কথা। জমে ওঠা লিগের অঘোষিত ফাইনাল হিসেবে দেখা হচ্ছিল আজকের আবাহনী-মোহামেডান ম্যাচটি। তবে নাটকীয়তা থাকে ম্যাচের পড়তে পড়তে।
পথরেখা/আসো