পথরেখা অনলাইন : মুধু স্প্যানিশই নয় বিশ্ব ফুটবলের দুই নন্দিত আর সফল দুটি দলের নাম রিয়াল মাদ্রিদ ও বার্সেলোনা। এই দুই দলের লড়াই নাম পেয়েছে এল ক্লাসিকো হিসেবে। দুনিয়াজোড়া খ্যাতির পাশাপাশি চোঁখও আটকে থাকে এই লড়াইয়ে। যেমনটি ছিল বরিবার মধ্যরাতে। সেখানে আরেকবারের মতো হেরেছে বার্সেলোনা। সে কারণে রিয়াল মাদ্রিদ যেন দুর্ভেধ্য হয়ে গেছে জাভি হার্নান্ডেজের দলের। ৩-২ গোলে জয়ের ফলে স্প্যানিশ লা লিগার শিরোপা জয়ের আরো কাছে চলে এসেছে কার্লোস আনচেলত্তির দল। লা লিগায় এবারের মৌসুমে প্রথম এল ক্ল্যাসিকো যেন ফিরে এলো ফিরতি দেখায়। এবারও ম্যাচের নায়ক জুড বেলিংহ্যাম। রিয়ালের দুর্গ সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে উল্লাস, দারুন আর রোমাঞ্চকর জয়ের কারণে। ম্যাচের শেষ মুহূর্তে রিয়াল সমর্থকদের উল্লাসে ভাসিয়েছেন বেলিংহ্যাম। বার্নাব্যুতে ম্যাচের শুরুতেই জমে উঠে এল ক্ল্যাসিকো। মাত্র ৬ মিনিটে এগিয়ে যায় জাভির শিষ্যরা। রাফিনিয়ার ক্রস থেকে দারুণ হেডে বার্সেলোনার প্রথম গোলটি করেন ক্রিস্টেনসেন। তবে সমতায় ফিরতে বেশি সময় নেয়নি রিয়াল। ম্যাচের ১৬ মিনিটে কাউন্টার অ্যাটাকে যায় স্বাগতিকরা।
জোয়াও কানসেলোকে পাশ কাটিয়ে বক্সে ঢুকেছিলেন লুকাস ভাসকেস। কিন্তু তাকে ফাউল করে বার্সার জন্য বিপদ ডেকে আনেন কুবারসি। পেনাল্টিতে গোল আদায় করে নেন ভিনিসিয়ুস। বিরতির পর দু’দলই সমান তালে লড়াই চালিয়ে যায়। ম্যাচের ৬৯ মিনিটে ইয়ামালের শট লুনিন ঠেকিয়ে দিলেও ফিরতি শটে গোলে এগিয়ে যায় কাতালানরা। ফারমিন লোপেসে পা থেকে সাফল্য পায় বার্সা। কিন্তু লিড চার মিনিটের বেশি ধরে রাখতে পারেনি বার্সা। ভিনির নিখুঁত ক্রসে জোরালো শট নিয়ে বার্সা গোলরক্ষক টার স্টেগানকে পরাস্ত করেন ভাসকেস। ম্যাচে সমতা ফিরলে জয়ের জন্য মরিয়া হয়ে ওঠে দুদল। তবে বার্সার দুর্গে একের পর এক হানা দেয় রিয়াল। অতিরিক্ত সময়ের শুরুতেই ভাসকেসের দূরপাল্লার ক্রস পেছনে থাকা বেলিংহ্যামের জন্য ছেড়ে দেন হোসেলু। বার্সা ডিফেন্ডারকে বোকা বানিয়ে দুর্দান্ত শটে বার্সার কফিনে শেষ প্যারেক ঠুকে দেন বেলিংহ্যাম। এই জয়ে ৩২ ম্যাচে ৮১ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষস্থান আরও শক্ত করল রিয়াল।
তালিকার দুইয়ে থাকা চিরপ্রতিদ্বন্ধী বার্সার সঙ্গে তাদের ব্যবধান বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১১ পয়েন্টে। সমান ম্যাচ খেলে ৭০ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের দুই নম্বরে জাভি হার্নান্দেজ বাহিনী। লা লিগা মৌসুমের প্রথম এল ক্লাসিকোয় ঠিক এমনটাই হয়েছিল। দুইবার পিছিয়ে পড়ার পরও শেষ মুহূর্তে সেই বেলিংহ্যামই রিয়ালকে ভাসান জয়ের উল্লাসে। তার গোলে ভর করে ঘরের মাটিতে বার্সেলোনার বিপক্ষে রোমাঞ্চকর জয় পায় রিয়াল। এর আগে ২০০৭ সালে রুড ফন নিস্তরলয়ের পর লা লিগায় নিজের প্রথম দুই এল ক্লাসিকোতে জয়সূচক গোল করা রিয়ালের প্রথম ফুটবলার বেলিংহ্যাম। লা লিগায় চলতি মৌসুমে এটি ইংলিশ মিডফিল্ডারের ১৭তম গোল। লিগ জয়ের স্বপ্নটা তাদের জন্য বলতে গেলে আরও ফিকে হয়ে গেল বার্সার জন্য। এল ক্ল্যাসিকোতে রিয়ালের কাছে হেরে ক্ষুব্ধ জাভি, অন্যদিকে আনচেলত্তি খোঁচা মেরেছেন প্রতিপক্ষকে। চ্যাম্পিয়নস লিগের কোয়ার্টার ফাইনালে বিদায়ের পর এল ক্লাসিকোতে হার, দুঃসময়ের সংজ্ঞাটা বার্সেলোনা কোচ জাভি হার্নান্দেজের চেয়ে আর কে-ইবা ভালো বুঝবেন? একের পর এক ম্যাচ হারার হতাশা তো রয়েছেই।
পাশাপাশি একই সঙ্গে জাভির ক্ষোভ ম্যাচ পরিচালনাকারী কর্মকর্তাদের ওপর। খোচা দিতে ছাড়েননি রিয়াল মাদ্রিদ কোচ কার্লো আনচেলত্তি। সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে অনুষ্ঠিত এল ক্লাসিকোয় জাভির হতাশা বার্সেলোনার গোল বাতিল নিয়ে। ৬ ও ১৮ মিনিটে বার্সেলোনা ও রিয়াল করেছে একটি করে গোল। ২৮ মিনিটে বার্সা এগিয়ে যেতে পারত ২-১ গোলে। ল্যামিন ইয়ামালের শট ঠেকিয়েছেন রিয়াল গোলরক্ষক আন্দ্রিই লুনিন। ইয়ামালের শট গোললাইন পেরোনোর আগে না পরে, লুনিন কখন ফিরিয়েছেন, তা অবশ্য নিশ্চিত হওয়া যায়নি। ভিডিও অ্যাসিস্ট্যান্ট রেফারির (ভিএআর) মাধ্যমে সেটা অনেকক্ষণ দেখার পর বাতিলের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। গোল বাতিল নিয়ে ক্ষোভ ঝেরেছেন জাভি ম্যাচ শেষে। সাংবাদিকদের বার্সা কোচ বলেন, ‘ম্যাচে কি হয়েছে প্রত্যেকেই এটা দেখেছে। তারা চাইলে আমাকে শাস্তি দিতে পারে। ছবিগুলো সেখানেই রয়েছে। ম্যাচ বিশ্লেষণ করে বলতে পারি, আমরা মাদ্রিদের চেয়ে ভালো অবস্থায় ছিলাম। গোল লাইন প্রযুক্তির ব্যাপারে আমি ভাষা হারিয়ে ফেলেছি। যাচাই করে দেখার জন্য ভালো কোনো অ্যাঙ্গেল পাওয়া গেল না।’
রিয়াল কোচ আনচেলত্তির কণ্ঠে ছিল উচ্ছ্বাসের ধ্বনি। রোমাঞ্জকর জয়ের পর আনচেলত্তি বলেন, ‘বার্সা কোচ জাভি কী ভাবছেন, তা নিয়ে মন্তব্য করতে চাই না। প্রত্যেকেই এখানে মুক্ত। যে যান চান, সেটা ভাবতে পারেন। এটা কঠিন ও অসাধারণ এক ম্যাচ হয়েছে। গোলটা গোল হয়েছে বলে আমি মনে করি না। কারণ এর তো পরিষ্কার কোনো ছবি নেই।’ এল ক্লাসিকো জিতে লা লিগা জয়ের পথে আরও একধাপ এগিয়ে গেল রিয়াল মাদ্রিদ।
পথরেখা/আসো