ঢাকাতে হকি খেলি নিয়ে আসেন নবাব সলিমুল্লাহ। কোলকাতার হোয়াইট ওয়েজ ডিপার্টমেন্টাল শপে হকি স্টিক দেখে চিনি নবাব বাড়ির উঠতি ছেলাদের জন্য নিয়ে আসেন। ঢাকাতে হকির সেই শুরু, সন ১৯০৭/৮। ইউসুফ রেজা এতই পারদর্শী হয়েছিলেন যে ধ্যানচাঁদের ভারতীয় অলিম্পিক দলে সিলেক্টেড হয়েছিলেন। ঝাসি হিরোজ ব্যাটালিয়নে ধ্যানচাঁদ, তার ভাই রুপচাঁদ ছিলেন, পিলখানাতে এই ইউনিট ছিল এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মাঠে এনারা প্রাকটিস করতেন, আমার বাবা শামসুদ্দিন ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয় হকি দলের ক্যাপটেন, এক সাথেই অনুশীলন করতেন। বাবার সাথে ১৯৭০ সনে পূর্বপাকিস্তান বনাম বিশ্বজয় করে আসা পাকিস্তান দলের খেলা দেখে ছিলাম। খেলেছিলেন আব্দুস সাদেক, হারবো না হারাও ত দেখি এই ব্রতে হকচকিত করে দিয়েছিলেন বিশ্বজয়ীদের, শেষমেষ তানভির দারের পেনাল্টি কর্নার থেকে গোল করে কোনমতে পাকিস্তান জয়ী হয়ে মাঠ ছাড়ে।
১৯৭০ সনের সেই খেলা মাথায় রেখেই ১৯৮৫ সনে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে মাঠে নেমেছিলাম। দলের লেফট হাফ পিরুর বয়স তখন মেরেকুটে ১৭ বছর হবে, হোটেল পূর্বানিতে আগের রাতে ক্যাপ্টেন হিসাবে তাকে বলেছিলাম তুমি মুক্তিযুদ্ধ কি বুঝলি, কাল তোমার মুক্তিযুদ্ধ, মাঠে পিরু বিশ্ব হকির ত্রাস কলিমউল্লাহকে একবারও বের হতে দেয়নি। পেপটক গুছিয়ে বলা ক্যাপ্টেন্র অন্যতম দায়িত্ব।মাঠে পাকিস্তানকে বুঝিয়ে ছিলাম তোরা সব জয়ধ্বনি কর, ঐ নতুনের কেতন উড়ে কাল বোশেখির ঝড় কারে বলে।
টিসা একবার কিসমত দুইবার, গোলকিপারকে একা পেয়েও তাড়াহুরা করে গোল মিস করে। আর হকি ইতিহাসের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফরওয়ার্ড হাসান সরদার একবারই গোলের সুযোগ পায়। গোলকিপার ওসমান গোল লাইন না ছেড়ে লাইনের উপর দাড়িয়ে থাকাতে গোল পোষ্টের দুই দিকেই গোল করার অ্যাংগেল ওয়াইড ওপেন ছিল, সুযোগ টা কাজে লাগিয়ে টপ অব দ্য ডি থেকে শটে গোল করে দেয়।
এই মুহূর্তে হকি বিভিন্ন ইগোতে প্রায় স্টেলমেট অবস্থা। দর্শক আসেনা, মানহীন আম্পায়ারিং, ঢাকার বাইরে প্লেয়ার তৈরি হয় না। বাইরের থেকে আসা প্লেয়াররা মাঠ কাপাচ্ছে এর পঁচানব্বই ভাগই তাদের দেশের জাতীয় দলের নয়। কবিরা অনেক আগাম ভাবনা লিখে ফেলেন, মোর না মিটিতে আশা ভাঙ্গিল খেলা, ঢাকার বর্তমান হকি নিয়েই মনে হয় লিখেছিলেন।
লেখক : সাবেক অধিনায়ক জাতীয় ও সেনাবাহিনী হকি দল, জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কার প্রাপ্ত এবং কলামিস্ট ।
পথরেখা/আসো