পথরেখা অনলাইন : ধনকুবের দল হলেও এখন পর্যন্ত উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগের শিরোপা জিততে পারেনি প্যারিস সেন্ট জার্মেই (পিএসজি)। অনেক নামী খেলোয়াড় দলে ভিড়িয়েও শিরোপার দেখা পায়নি। যেমন করে এবারও কিলিয়েন এমবাপ্পে শত চেষ্টা করে দলকে ফাইনালে নিতে পারেনি। চ্যাম্পিয়নস লিগ জেতার স্বপ্ন পূরণের জন্য এই ফরাসী সুপারস্টটারকে ঘিরে বারবার দল সাজিয়েছিল প্যারিসিয়ানরা। তবে পিএসজির সেই ’প্রজেক্ট-এমবাপ্পে’ শেষ পর্যন্ত ব্যর্থতায় পর্যবসিত হলো। বুধবার রাতে চ্যাম্পিয়নস লিগের সেমিফাইনালের ফিরতি লেগে ঘরের মাঠে বরুশিয়া ডর্টমুন্ডের কাছে ১-০ গোলে হেরেছে পিএসজি। দুই লেগ মিলিয়ে হারটা ২-০ গোলের। এমবাপ্পের মতো খেলোয়াড় থাকা সত্ত্বেও বুন্দেসলিগার পয়েন্ট টেবিলের পাঁচে থাকা ডর্টমুন্ডের বিপক্ষে জালের খোঁজ পায়নি ফরাসি চ্যাম্পিয়নরা। তবে পোস্টে বল লেগে ফিরে আসার রেকর্ড গড়েছে তারা। অর্থাৎ এক ম্যাচেই ভাগ্য তাদের সহায় হয়নি চার বার! তবে অবাক করা ব্যাপার হচ্ছে, পুরো ম্যাচে গোল না করতে পারলেও ৩০টি শট নিয়েছে পিএসজি। চ্যাম্পিয়নস লিগের নকআউট পর্বে কোনো দলের এতগুলো শট নিয়েও গোল করতে না পারার ঘটনা সর্বশেষ ঘটেছিল ২০০৩/০৪ মৌসুমে।
এমনকি ম্যাচে পিএসজি ৪বারের প্রচেষ্টা প্রতিপক্ষের পোস্টে লেগে ফিরে আসে। চ্যাম্পিয়নস লিগের নকআউট পর্বে এমন নজির আর নেই। পিএসজির জন্য অবশ্য চ্যাম্পিয়নস লিগ থেকে হতাশ হয়ে ফেরা নতুন কিছু নয়। এ নিয়ে চ্যাম্পিয়নস লিগ সেমিফাইনালে ৭ ম্যাচ খেলে ৬টিতেই হারল তারা; ব্যর্থতার হার ৮৩ শতাংশ! কমপক্ষে ৫ ম্যাচ খেলেছে, এমন যেকোনো দলের ক্ষেত্রে এই হার সর্বোচ্চ। এ নিয়ে চার বছরে দ্বিতীয়বার ফাইনাল খেলার খুব কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছিল পিএসজি। আগেরবার লিসবনের ফাইনালে বায়ার্ন মিউনিখের কাছে হেরে শিরোপা স্বপ্ন শেষ হয়েছিল তাদের। সেবারই পিএসজির হয়ে জেতার খুব কাছাকাছি ছিলেন ইউরোপের শীর্ষ ক্লাব প্রতিযোগিতায় ৪২ গোল করা এমবাপ্পে। ২০১১ সালে পিএসজির মালিকানা কেনার পর থেকে অঢেল অর্থ খরচ করেছে কাতারি মালিকপক্ষ। কিন্তু প্রতিবারই চ্যাম্পিয়নস লিগের নকআউট পর্ব থেকে বিদায় নেওয়া তাদের জন্য স্বাভাবিক ঘটনা যে। এমনকি দলে নেইমার জুনিয়র, লিওনেলে মেসির মতো মহাতারকাদের ভিড়িয়ে এমবাপ্পের সঙ্গে জুটি বাঁধার ব্যবস্থা করেও সাম্প্রতিক আসরগুলোতে ব্যর্থ হয়েছে পিএসজি।
এর আগে নেইমার ও মেসি দু'জনেই আগের মৌসুমে ক্লাব ছেড়ে চলে গেছেন। পিএসজির জার্সিতে রেকর্ড ২৫৫ গোল করা এমবাপ্পেও এখন যাওয়ার পথে। এই গ্রীষ্মেই তিনি পাড়ি জমাতে পারেন তার স্বপ্নের ক্লাব রিয়াল মাদ্রিদে। পিএসজি অবশ্য এরইমধ্যে ফরাসি লিগ ওয়ানের শিরোপা ঘরে তুলেছে। আগামী ২৫ মে ফরাসি কাপে লিঁওর মুখোমুখি হবে তারা। ৭ বছর প্যারিসে থাকার পর এটাই পিএসজির জার্সিতে জার্সিতে এমবাপ্পের শেষ ম্যাচ হতে যাচ্ছে। এর মাধ্যমে শেষ হচ্ছে পিএসজির ’প্রজেক্ট-এমবাপ্পে’। এরপর রিয়ালে গিয়ে হয়তো ইউরোপ সেরা হওয়ার স্বপ্ন পূরণের লড়াইয়ে নামবেন এমবাপ্পে। যেখানে তার স্বপ্ন পূরণের যথেষ্ট সম্ভাবনাও রয়েছে। এখন প্রতীয়মান হয়েছে যে, ভাল খেলোয়াড়ের পাশাপাশি একজন কড়া হেডমাস্টার না থাকলে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের শিরোপা জেতা সম্ভব নয়। যেমনটা এবারও পারেনি পিএসজি। যার ফলস্বরুপ পিএসজিকে হারিয়ে দীর্ঘ ১১ বছর পর ফাইনালে পৌছে গেছে জার্মান ক্লাব বরুশিয়া ডর্টমুন্ড।
ফাইনালের আশা পুনরুজ্জীবিত করতে, লড়াইয়ে ফিরতে যেকোনো মূল্যে দরকার ছিল গোল, কিন্তু অনেক চেষ্টা করেও পারল না পিএসজি। দলটির চারটি প্রচেষ্টা বাধা পেল পোস্ট আর ক্রসবারে। মাঝে বরং তাদের জালেই বল পাঠাল বরুশিয়া ডর্টমুন্ড। ফরাসি চ্যাম্পিয়নদের আবার হারিয়ে এক দশকের বেশি সময় পর চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে উঠল জার্মান দলটি। সেমিফাইনালের ফিরতি লেগে মাটস হুমেলসের একমাত্র গোলে জিতেছে ডর্টমুন্ড। ডর্টমুন্ড সবশেষ চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনাল খেলেছিল ২০১৩ সালে, ওয়েম্বলিতে হেরেছিল বায়ার্ন মিউনিখের বিপক্ষে। আর ইউরোপ সেরার প্রতিযোগিতায় নিজেদের একমাত্র শিরোপাটি তারা জিতেছিল ১৯৯৭ সালে, মিউনিখের ফাইনালে জুভেন্তাসকে হারিয়ে। দ্বিতীয় শিরোপার লক্ষ্যে আগামী ১ জুন ওয়েম্বলিতে বায়ার্ন অথবা রিয়াল মাদ্রিদের মুখোমুখি হবে ডর্টমুন্ড। ঘরোয়া প্রতিযোগিতায় এবার মৌসুমটা ভালো কাটেনি ডর্টমুন্ডের। জার্মান কাপে তাদের পথচলা থামে শেষ ষোলোয়। দুই রাউন্ড বাকি থাকতে বুন্ডেসলিগার টেবিলে তারা আছে পাঁচ নম্বরে। চ্যাম্পিয়ন্স লিগেও তাদের শুরুটা ভালো ছিল না। গ্রুপ পর্বে প্রথম ম্যাচে পিএসজির মাঠে হেরেছিল ২-০ গোলে। সেই মাঠেই এবার দারুণ জয়ে শেষ ধাপে পৌঁছে গেল এদিন তেরজিচের দল। অন্যদিকে, মৌসুমে এরই মধ্যে দুইটি শিরোপা জেতা পিএসজি চার ট্রফির আশায় ছিল। একটির আশা শেষ হয়ে গেল ফাইনালের আগেই।
পথরেখা/আসো