১৯৭৫ সনের নভেম্বর মাসে হকির আবাসিক ক্যাম্প ছিল। সবাই জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের বিল্ডিংয়ে থাকতাম। প্রাকটিস শেষে ব্রেক-ফাস্ট করতে ডাইনিং হলে যেতাম। সেনাবাহিনীর তিনজন আমাদের সাথে ক্যাম্পে ছিল। আর্মি অফিসার ক্যাপ্টেন আনোয়ার, ১৬ ইস্ট বেঙ্গলের; ব্যাকে খেলতেন আর লেফটানেন্ট মুস্তাফিজ ইন্জিনিয়ার্সের খেলতেন ফরোয়ার্ড। সুবেদার মতিন আর্টিলারির। লক্ষ করতাম সুবেদার মতিন কখনই ডাইনিং টেবিলে আর্মি অফিসার দুই জন থাকলে ডাইনিং রুমে ঢুকতেন না। সুবেদার মতিন আজাদ স্পোর্টিংয়ের গোলকিপার ছিলেন। তাই চিনতামও, তাকে মতিন ভাই বলতাম।
ক্যাম্পে থাকতে থাকতেই ৭ নভেম্বরের আর্মি ক্যু হল। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের দোতালার বারান্দা থেকে আর্মি ট্যান্ক, থ্রিটন ভড়া সোলজার দেখতে থাকলাম। সকাল থেকেই সুবেদার মতিন হকি ক্যাম্পে ছিলেন না। যখন আর্মিরা রাস্তা দিয়ে যাচ্ছে তখন মতিন সাব আসলেন। আমাদের সাথে বারান্দায় দাঁড়িয়ে ক্যাপ্টেন আনোয়ার আর লেফটানেন্ট মোস্তাফিজও আর্মির ম্যুভ দেখছিল। মাঝে মাঝে হাত নাড়ছিলও। হঠাৎ আর্মি পিকআপ থেকে তিনজন নামল। নিদ থেকেই বলল, স্যার নীচে আসেন। ওরা দুই জন নীচে নামার পর লেফটানেন্ট মোস্তাফিজ বলল, মোটর সাইকেলের চাবিটা দিয়ে আসি। তারপর উপরে এসে চাবিটা অফিসে দিয়ে এদের সাথে চলে গেল। সেই শেষ দেখা। এই অস্থির পরিস্থিতিতে ক্যাম্প বন্ধ হয়ে যায়। পরে শুনেছি লেফটানেন্ট মোস্তাফিজের ভাই এসে মোটর সাইকেল নিয়ে গেছে। দুই জনকেই মেরে ফেলা হয়। মনে প্রশ্ন আসতেই পারে দুইজন অফিসার হকি ক্যাম্পে আছে। এটা সুবেদার মতিন জানিয়ে আসে নাইত।
১৯৭৬ সনে বিএমএ তে যাই। আমি হকি ক্যাম্পে ছিলাম। তাই ইন্টারভিউর সময় দুইজন আর্মি অফিসার নিয়ে জিজ্ঞাসা করেছিল। যদি ওরা শিশুর আগ্রহে এই ম্যুভ দেখতে বারান্দায় না যেতেন! নিয়তি মানতেই হবে ।
লেখক : জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কার প্রাপ্ত , জাতীয় হকি দল অধিনায়ক এবং কলামিস্ট
পথরেখা/আসো