বিচারপতি শরিফ উদ্দিন চাকলাদার রাশভারি মানুষ। তখন নামকরা উকিল। আমাকে বললেন এভাবে ডানে বামে ঘুরাঘুরি না করে বিয়ে করে ফেল। তখন পাবলিকা গাড়ি। দুই দরজার। সামনের বাম দিকের সিট ভাজ করে পিছনের সিটে যেতে হয়। এ গাড়ি চড়েতো আর বিয়ে করতে যাওয়া যায় ন। বর্তমান উপদেষ্টা মেজর জেনারেল তারিক তখন ক্যাপ্টেন। উনি সবসময় আমার রুমে ফেরদৌস স্যার, কায়সার হামিদ, ফুটবলের গোল কিপার সান্টু , হেলাল, হকির জামাল, নূরুল ইসলাম, সান্টা আর অনান্য নিয়ে তুমুল আড্ডা এবং খেলার ভুল ত্রুটিসহ বহু কথাই হত।
বান্দরবানে তখন আমার ইউনিট ফার্স্ট বেংগল। যারা লাহোরে ১৯৬৫ সালে ভারতের সাথে যুদ্ধে আবার ১৯৭১ সনের আমাদের মুক্তিযুদ্ধের জয়ের গৌরবের অংশীদার। প্রত্যেক সৈন্য অভিজ্ঞ; এমন ইউনিটে পোস্টিং মানেই সবসময় প্রতিটি পদক্ষেপে নিজের অবস্থান অন্যের চোখে শ্রদ্ধা পাবার জন্যই ফেলতে হয়। এই ফার্স্ট বেংগল শুটিং, বেয়নেট ফাইটিং অ্যাসল্ট কোর্স আবার খেলা সব বিষয়েই শ্রেষ্ট হবার দাবীদার। রুমে হাজার কথার সব কথা ছাপিয়ে আমার বিয়ে এবং দুই দরজার টয়োটা পাবলিকা নিয়ে আর যাওয়া যায় না। তাই কার গাড়ি নেয়া যায় সেটাই চিন্তার। বর্তমান উপদেষ্টা জেনারেল তারিক, তখন ক্যাপ্টেন বললেন আমার তিনটে গাড়ি তার একটা নিয়ে নিও। কায়সার হামিদের ছোট ভাই সোহেল হামিদ বলল অন্যের গাড়ি নিলে কেন মার্সিডিজ নয়। এই আলোচনার মধ্যেই হকির সভাপতি মেজর জেনারেল মতিন ডাকলেন আর বললেন রেলওয়ে হকি টিম যেই জেনেছে কালকে তোমার বিয়ে। মানে তুমি খেলবে না। এখন এরা কালকেই সেমিফাইনাল খেলবে। বিয়ে তোমার তবে এ্যারেন্জমেন্ট অন্যেরা করবে তাই খেলতে হবে।
মাঠে খেলছি অলরেডি দুই গোলে লিড। এমন সময় লাইনের পাশে কায়সার হামিদ আর পুলিশের এসআই এরশাদ এসে বললেন চিন্তা কইরেন না; মার্সিডিজ জোগাড় হয়েছে। হাই কোর্টে পাঠাইছি ফুল দিয়া সাজাইতে। ব্যাপারটা হল, সাহেবকে এয়ার পোর্টে নামিয়ে ড্রাইভার স্টেডিয়ামের ইসলামিয়া রেস্টুরেন্টে নাস্তা খেতে ঢুকেছিল। এসআই এরশাদ রং পার্কিং এর কেসের কথা বলতেই ড্রাইভার ঘাবড়ে যায়। বলে সাহেব বিদেশ থেকে এসে কেসের কথা শুনলে চাকরিই থাকবে না। খেলা সবাই খেলে তবে ‘ডাই হার্ট’ বন্ধু সবার জোটে না। এখানে আমি সৌভাগ্যবান ।
লেখক : সাবেক হকি অধিনায়ক জাতীয় ও সেনাবাহিনী দল, জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কার বিজয়ী এবং কলামিস্ট