• রবিবার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪
    ৬ আশ্বিন ১৪৩১
    ঢাকা সময়: ১০:৩৭

ফেনীতে বন্যায় কৃষিখাতে ক্ষতি ৯১৪ কোটি টাকা

  • সারাদেশ       
  • ২৯ আগস্ট, ২০২৪       
  • ২৩
  •       
  • ২৯-০৮-২০২৪, ২৩:৫৭:২৫

পথরেখা অনলাইন : স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যা কবলিত ফেনীর পরিস্থিতি ক্রমাগত উন্নত হচ্ছে। বন্যা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার সঙ্গে-সঙ্গে স্পষ্ট হয়ে উঠছে কৃষিখাতের ক্ষতচিহ্ন। জেলার ছয় উপজেলায় বন্যায় ফসল, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদে ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৯১৪ কোটি টাকা। সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলো তথ্য নিশ্চিত করেছে।

ফেনীতে বন্যার পানি নেমে যাওয়ার সঙ্গে স্পষ্ট হয়ে উঠছে ক্ষতচিহ্ন। ক্ষেতে নেই সবুজের চিহ্ন। পানি কমতেই ভেসে উঠছে হলুদ, আদা, আউশ, আমন ও শরৎকালীন বিভিন্ন সবজি ক্ষেত। ভয়াবহ বন্যায় জেলার ছয়টি উপজেলায় শুধুমাত্র ফসলের ক্ষতি হয়েছে ৪৫১ কোটি ২০ লাখ টাকার বেশি। এতে প্রায় দুই লক্ষাধিক কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, জেলার ৩০ হাজার ৩৫২ হেক্টর ফসলি জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যা মোট ফসলি জমির ৭৯ দশমিক ৬৯ শতাংশ। তান্মধ্যে ১ হাজার ৮৬৫ হেক্টর আমন বীজতলা, ২৬ হাজার হেক্টর আমন, ১ হাজার ৮৫৪ হেক্টর আউশ, আবাদকৃত ৫২৫ হেক্টর শরৎকালীন সবজির পুরো অংশ, ৬৯ হেক্টর ফলবাগান, ৭ হেক্টর আদা, ১৬ হেক্টর হলুদ এবং ১৬ হেক্টর আখ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. একরাম উদ্দিন বলেন, বন্যায় কৃষিতে বড় ধরনের ক্ষতি হয়েছে। ক্ষয়ক্ষতির তালিকা করে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পাঠানো হয়েছে। কৃষকদের আমনের চারা প্রদান করার ব্যাপারে দাপ্তরিকভাবে একটি কথা উঠে এসেছে। এছাড়া এ পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠতে আগাম জাতের কিছু ফসল আবাদের বিষয়ে কৃষকদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।

প্রসঙ্গত, গত জুলাই মাসের বন্যায় ফুলগাজী, পরশুরাম ও ছাগলনাইয়ায় আউশ আবাদ, গ্রীষ্মকালীন সবজি, আমন বীজতলা ও গ্রীষ্মকালীন মরিচের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। বন্যার পানিতে ভেসে গেছে তিন উপজেলার বেশিরভাগ ফসলি জমি। তখন কৃষিতে সবমিলিয়ে ১ কোটি ১৭ লাখ ৫৮ হাজার ৬০০ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল।

প্রাণিসম্পদে ক্ষতি ৩৯৬ কোটি টাকা
টানা বৃষ্টি ও ভারতের উজানের পানিতে সৃষ্ট ভয়াবহ বন্যার কবলে পড়ে মানুষদের আর্তি ছিল প্রাণ বাঁচানোর। দুর্যোগে অনেকে গৃহপালিত পশু, হাঁস-মুরগি নিয়ে, আবার কেউ সবকিছু ফেলে রেখেই নিরাপদে আশ্রয় নিয়ে প্রাণ বাঁচিয়েছেন। বন্যায় প্লাবিত হয়েছে শতশত একর চারণভূমি। পানিতে তলিয়ে বিনষ্ট হয়েছে পশুপাখির দানাদার খাদ্য-ঘাস, খড়। এ অবস্থায় অস্তিত্ব সংকটে পড়েছেন কৃষক ও খামারিরা।

জেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তরের দেওয়া তথ্যমতে, এবারের বন্যায় প্রাণিসম্পদ খাতে এখন পর্যন্ত ৩৯৬ কোটি ৯ লাখ ৯৫ হাজার ৪০৩ টাকার ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ করা হয়েছে। বন্যার পানিতে নিমজ্জিত ছিল ফুলগাজী, পরশুরাম ও ফেনী সদর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয়। পানিতে ডুবে জেলায় ৩৮ হাজার ৭৩১টি গরু, ৩৫৯টি মহিষ, ১৫ হাজার ৫৮৮টি ছাগল ও ৭৩৬টি ভেড়া মারা গেছে। এছাড়াও ২১ লাখ ৬৭ হাজার ৫১০টি মুরগি ও এক লাখ ৮৯ হাজার ৪৭২টি হাঁস মারা গেছে। মৃত পশুপাখির মোট ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে ৩০৮ কোটি ৩৬ লাখ ৩৯ হাজার ৮৩০ টাকা।

একই সূত্র জানায়, জেলায় ৪২ লাখ ৪৯ হাজার ৯৬৩টি গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগি বন্যায় আক্রান্ত হয়েছে। এক হাজার ৯৯২টি গবাদিপশুর খামারের ১৩ কোটি ১৭ লাখ ৩৯ হাজার ২০০ টাকা এবং এক হাজার ৬২৩টি হাঁস-মুরগির খামারের ১০ কোটি ৯৭ লাখ ৫ হাজার টাকার ক্ষতি হয়েছে। এছাড়াও ৩ হাজার ৯৫০ টন পশুপাখির দানাদার খাবার বিনষ্ট হয়েছে যার বাজারমূল্য ২৩ কোটি ৪৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা। জেলায় ৩ কোটি ৮১ লাখ টাকার খড়, ৩ কোটি ৮১ লাখ ৫০ হাজার টাকার পশুপাখির ঘাস বিনষ্ট হয়েছে। প্লাবিত হয়েছে ২৮৫ একর চারণভূমি।

জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. মোজাম্মেল হক বলেন, বন্যায় জেলার প্রাণিসম্পদ খাত বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়েছে। এখন পর্যন্ত ৩৯৬ কোটি ৯ লাখ ৯৫ হাজার ৪০৩ টাকার ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ করা হয়েছে। অনেক এলাকা এখনো পানিতে ডুবে থাকায় পৌঁছানো সম্ভব হয়নি। এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।

খামারি ও কৃষকদের সহায়তা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ডা. মো. মোজাম্মেল হক বলেন, এ পরিস্থিতিতে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন ওষুধ ও খাদ্য। জেলায় গত কয়েকদিনে ৫০০ কেজি খাদ্য বিতরণ করা হয়েছে। বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের মাধ্যমে সমন্বয় করে আমরা খামারি ও কৃষকদের পাশে দাঁড়ানো চেষ্টা করছি। এছাড়া দাপ্তরিকভাবে কোন ধরনের প্রণোদনা অথবা সহায়তা আসলে তা প্রান্তিক পর্যায়ে পৌঁছে দেওয়ার জন্য আমরা কাজ করব।  

মৎসে ক্ষতি ২৮ কোটি টাকা
বন্যায় জেলার অধিকাংশ পুকুর ও ঘেরের মাছ পানিতে ভেসে গেছে। মাছের রেণু, পোনা, বড় মাছ ও পুকুরের অবকাঠামো মিলে ২৮ কোটি ৯ লাখ ২০ হাজার টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। জেলা মৎস্য কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম এ তথ্য জানিয়েছেন।
জেলা মৎস্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, গত কয়েকদিনে জেলার ছয়টি উপজেলায় বন্যায় মাছ চাষিদের ২৮ কোটি ৯ লাখ ২০ হাজার টাকা ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন এ সংশ্লিষ্ট অন্তত ২০ হাজার মানুষ। বন্যার পানিতে ভেসে গেছে একক ও যৌথ মালিকানাধীন ১৮ হাজার ৭৬০টি পুকুর-দিঘি। এসব পুকুর থেকে ২২ কোটি ৬৪ লাখ টাকার বড় মাছ এবং ৯৭ লাখ টাকার মাছের পোনা ভেসে গেছে। এছাড়া জেলায় খামারিদের ৪ কোটি ৪৮ লাখ ২০ হাজার টাকার অবকাঠামো ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা বলেন, খামারিরা মাত্র দেড় মাসের মাথায় তৃতীয় দফার বন্যায় আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এ বিষয়ে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে।

এর আগে গত মাসে প্রথম দফায় বন্যায় ফুলগাজী উপজেলায় ২৬৫টি পুকুর ভেসে ৪০ লাখ টাকার মাছ ও সাড়ে ৭ লাখ টাকার মাছের পোনা ভেসে যায়। উপজেলায় মাছ চাষিদের ২০ লাখ টাকার আসবাবপত্র নষ্ট হয়। সবমিলিয়ে ফুলগাজীতে ৬৮ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি নিরূপন করা হয়েছিল। একইভাবে পরশুরাম উপজেলায় সেসময় ৮০টি পুকুর ভেসে ১৭ লাখ ২৫ হাজার টাকার মাছ ও ৩০ লাখ ৭০ হাজার টাকার মাছের পোনা ভেসে যায়। উপজেলায় মাছ চাষিদের অবকাঠামোগত ক্ষতি হয়েছে প্রায় আড়াই লাখ টাকা। সবমিলিয়ে পরশুরামের মৎস্য খাতে প্রায় সাড়ে ৫০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছিল।
পথরেখা/এআর

 

  মন্তব্য করুন
আরও সংবাদ
×

পথরেখা : আমাদের কথা

আমাদের পোর্টালের নাম— pathorekha.com; পথরোখা একটি অনলাইন নিউজ পোর্টাল। আমরা এই প্রতিষ্ঠানকে প্রতিদিনের সত্য-সংবাদের পথরেখা হিসেবে প্রমাণ করতে চাই। পথরেখা সারাদেশের পাঠকদের জন্য সঠিক ও বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ এবং মতামত প্রকাশ করবে। পথরোখা নিউজ পোর্টাল হিসেবে ২০২৩ সালের জুন মাসে যাত্রা শুরু করলো। অচিরেই পথরেখা অনলাইন মিডিয়া হিসেবে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ে নিবন্ধনের প্রক্রিয়া শুরু করবে। পথরোখা  দেশ কমিউনিকেশনস-এর অঙ্গ প্রতিষ্ঠান।
 
পথরোখা জাতীয় সংবাদের উপর তো বটেই এর সঙ্গে রাজনীতি, আন্তর্জাতিক, খেলাধুলা, কৃষি, বিনোদন, অর্থনীতি, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, তথ্য ও প্রযুক্তিসহ বিভিন্ন বিভাগকেও গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করে। মাল্টিমিডিয়া সাংবাদিকতা এবং চৌকস ফটোগ্রাফিকে বিশেষ বিবেচনায় রাখে।
 
পথরোখা’র সম্পাদক আরিফ সোহেল এই সেক্টরে একজন খুব পরিচিত ব্যক্তিত্ব। সাংবাদিক হিসেবে তার দীর্ঘ ৩০ বছর কর্মজীবনে তিনি দৈনিক বাংলাবাজার পত্রিকা, আজকের কাগজ, রিপোর্ট২৪ ডটকম প্রভৃতি প্রতিষ্ঠানে কাজ করেছেন। এ ছাড়া তিনি সরকারী ক্রীড়া পাক্ষিক ‘ক্রীড়া জগত’ ও লাইফস্টাইল ম্যাগাজিক অপ্সরা নির্বাহী সম্পাদক হিসেবে দীর্ঘদিন কাজ করেছেন। তিনি জনপ্রিয় অনলাইন দেশকণ্ঠের নির্বাহী সম্পাদক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন।
 
পথরেখা দেশের মৌলিক মূল্যবোধ, বিশেষ করে জাতীয় সার্বভৌমত্ব, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতার প্রতি অঙ্গীকারবদ্ধ। এছাড়াও, এটি দেশের নাগরিকের মানবিক ও নাগরিক অধিকারের পক্ষে কথা বলবে। ন্যায়পরায়ণতা, নির্ভুলতা এবং বস্তুনিষ্ঠতা বজায় রাখতে আমরা অঙ্গীকারাবদ্ধ। আমরা বিশ্বাস করি যে জনগণের বিশ্বাসযোগ্যতা আমাদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ। পথরেখা রাজনৈতিক ইস্যুতে নির্দলীয় অবস্থান বজায় রাখবে। একটি নিরপক্ষ অনলাইন হিসেবে আমরা নিজেদের কর্মকাণ্ডে প্রমাণ করার শতভাগ প্রছেষ্টা করব। তবে সঠিক পদ্ধতি অনুসরণ করেও কিছু ভুল হতেই পারে। যা ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ রাখছি সব মহলেই। সততা পথে অবিচল; আলোর পথে অবিরাম যাত্রায় আমাদের পাশে থাকুন; আমরা থাকব আপনাদের পাশে।
 
উল্লেখ্য, পথরেখা হিসেবে একটি প্রকাশনী দীর্ঘদিন থেকে প্রকাশিত হয়ে আসছে। এবার উদ্যোগ নেওয়া হলো অনলাইন অনলাইন নিউজ পোর্টাল হিসেবে প্রকাশ করার।