• রবিবার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪
    ৬ আশ্বিন ১৪৩১
    ঢাকা সময়: ১১:৪২
কক্সবাজারে ভারী বর্ষণে জলাবদ্ধতা

পাহাড়ধস আটকা পড়েছে সহস্রাধিক পর্যটক

পথরেখা অনলাইন : টানা ভারী বর্ষণে কক্সবাজার শহরের অধিকাংশ এলাকা ডুবে গেছে। সৈকত এলাকার হোটেল-রিসোর্ট, কটেজ জোনে জলাবদ্ধতা দেখা দেওয়ায় বিপাকে পড়েছেন পর্যটকেরা। ১৩ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যা পর্যন্ত সহস্রাধিক পর্যটক আটকা পড়েছেন হোটেল কক্ষে। জলাবদ্ধতার কারণে তারা কোথাও বের হতে পারছেন না। সৈকতের বিভিন্ন পয়েন্টে লাল পতাকা উড়িয়ে পর্যটকদের সমুদ্রে নামতে নিষেধ করা হচ্ছে। একইসঙ্গে প্রধান সড়কসহ জেলায় অন্তত ৩৫টি উপসড়ক বৃষ্টির পানিতে ডুবে কয়েক শত দোকানপাটের মালামাল নষ্ট হয়েছে। হাজারো ঘরবাড়ি পানিতে তলিয়ে গেছে। সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ হওয়ায় মানুষকে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। এ সময়ে পাহাড় ধসের ঘটনায় দুই পরিবারের ছয়জন নিহত হয়েছে।
 
কক্সবাজার আবহাওয়া অফিসের সহকারি আবহাওয়াবিদ আব্দুল হান্নান জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার বেলা ৩টা থেকে শুক্রবার বেলা ৩টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় কক্সবাজারে ৫০১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। চলমান মৌসুমে এটি একদিনে সর্বোচ্চ বৃষ্টির রেকর্ড। ভারী বর্ষণ অব্যাহত থাকতে পারে। বাতাসের তীব্রতাও বেশি থাকবে, যা দমকা ও ঝোড়ো হাওয়া আকারে ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ৬০ কিলোমিটার বেগে বৃদ্ধি পেতে পারে।
 
শহরের কলাতলী হোটেল মোটেল জোনের প্রধান সড়কটি বৃষ্টির পানিতে ডুবে গেছে। সড়কের দুই পাশের ৫ শতাধিক হোটেল গেস্ট হাউসে যাতায়াতের অভ্যন্তরীণ ১০টি উপসড়কও ডুবে যায়। এতে  অন্তত ২০ হাজার পর্যটক হোটেলে আটকা পড়েন। কলাতলী সড়ক থেকে সমুদ্র সৈকতে নামার সুগন্ধা সড়কটিও ডুবে আছে। সড়কে হাতে গোনা কয়েকটি সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক (টমটম) চলাচল করলেও অলিগলিতে ঢুকতে পারছে না। বিশেষ করে শহরের ব্যস্ততম পাঁচ কিলোমিটারের প্রধান সড়কও পানিতে ডুবে গেছে। বাজারঘাটা, বড়বাজার, এন্ডারসন সড়ক, টেকপাড়া, বার্মিজ মার্কেট এলাকা, বৌদ্ধমন্দির সড়ক, গোলদিঘিরপাড়, তারাবনিয়াছড়া, রুমালিয়ারছড়ার কয়েক শ দোকান, অফিস-আদালত ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে বৃষ্টির পানি জমে আছে। হাজারো ঘরবাড়ি পানিতে তলিয়ে গেছে।
 
কক্সবাজার পৌরসভার ১, ২ ও ৩ নম্বর সংরক্ষিত ওয়ার্ডের মহিলা কাউন্সিলর শাহেনা আকতার পাখি বলেন, সমিতিপাড়া, কুতুবদিয়াপাড়া, ফদনারডেইল, মোস্তাইক্যাপাড়া, বন্দরপাড়া, উত্তর নুনিয়াছটার কয়েক শ ঘরবাড়ি বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে গেছে। ভারী বর্ষণ অব্যাহত থাকলে এই ওয়ার্ডের অন্তত ১০ হাজার ঘরবাড়ি ডুবে যাবে। কারণ, এলাকাগুলোতে অন্তত ৭০ হাজার জলবায়ু উদ্বাস্তু ও ভাসমান শ্রমজীবী মানুষের বসবাস। রান্নাবান্না বন্ধ থাকায় হাজার-হাজার মানুষ এখন খাবার ও পানীয় জলসংকটে পড়েছেন।
 
স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও এলাকাবাসী জানান, বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা থেকে বৃষ্টিপাত শুরু হলেও ভারী বর্ষণ শুরু হয় দুপুর ২টা থেকে। এরপর শুক্রবার সন্ধ্যা পর্যন্ত টানা ভারী বর্ষণে পুরো শহরের আট লাখ মানুষের কর্মজীবন অনেকটাই থমকে গেছে। এমন ভারী বর্ষণ গত ৫০ বছরেও দেখেননি বলে জানান স্থানীয়রা। ভারী বর্ষণের কারণে জেলার বিভিন্ন এলাকায় অন্তত ১০টি পাহাড়ে ফাটল দেখা দিয়েছে। বেশ কিছু অংশে ভূমি ধসের ঘটনাও ঘটছে।
 
সহস্রাধিক পর্যটক জলাবদ্ধতায় হোটেল মোটেলে আটকা পড়েছেন জানিয়ে কক্সবাজার হোটেল মোটেল গেস্টহাউস মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাশেম সিকদার বলেন, ভারী বর্ষণ হলেই হোটেল মোটেল জোনে জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। কিন্তু এরকম জলাবদ্ধতা গত ৫০ বছরেও দেখিনি। যার কারণে ব্যবসা-বাণিজ্যে মন্দাভাব বিরাজ করে। আবুল কাশেম শিকদার বলেন, 'মুলতঃ কক্সবাজার শহরে অপরিকল্পিত উন্নয়ন, পৌর কর্তৃপক্ষের অদূরদর্শী সিদ্ধান্ত ও দুর্নীতি এবং পাহাড় কাটা বেড়ে যাওয়ায় এমন ভয়াবহ অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে বলে মনে করছি।'
 
গেস্টহাউস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সেলিম নেওয়াজ বলেন, দীর্ঘ দুই মাস পর ১০ সেপ্টেম্বর থেকে সৈকতে পর্যটক আসতে শুরু করেছে। সাপ্তাহিক ছুটির দিন থাকায় শুক্রবার  অন্তত এক লাখ পর্যটক সমাগমের আশা ছিল কিন্তু বৈরী পরিবেশে অধিকাংশ পর্যটক বুকিং বাতিল করেছেন।
 
কক্সবাজার সদর উপজেলা এবং উখিয়া উপজেলার রোহিঙ্গা ক্যাম্পে পৃথক পাহাড় ধসের ঘটনায় দুই পরিবারের ছয়জনের মৃত্যু হয়েছে। শুক্রবার (১৩ সেপ্টেম্বর) রাত ৩টা থেকে ৪টার মধ্যে পৃথক এ দুর্ঘটনা ঘটে।  পাহাড় ধসে কক্সবাজার সদর উপজেলার ঝিলংজা ইউনিয়নের দক্ষিণ ডিককূল এলাকায় মারা গেছেন মা ও দুই মেয়ে এবং উখিয়া উপজেলার ১৪ নম্বর হাকিমপাড়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পে মারা গেছেন তিন সহোদর।
নিহতরা হলেন, মিজানুর রহমানের স্ত্রী আখি মনি (২১) এবং তাদের দুই মেয়ে মিহা জান্নাত নাঈমা (৫) ও লতিফা ইসলাম (১), ক্যাম্পের ই-২ ব্লকের কবির আহমেদের ছেলে আব্দুর রহিম, আব্দুল হাফেজ ও আব্দুল ওয়াহেদ।
 
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক বিভীষণ কান্তি দাশ বলেন, শুক্রবার সকালে ঝিলংজায় ঘটনাস্থলে গিয়ে পাহাড় ধসে নিহত তিনজনের পরিবারকে ৭৫ হাজার টাকা আর্থিক সহায়তা দিয়েছে জেলা প্রশাসন। পাহাড়ের ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থান থেকে লোকজনকে সরিয়ে আনা হচ্ছে। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে চারটি পৃথক টিম মাঠে কাজ করছেন। শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনের অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ সামছু-দৌজা নয়ন বলেন, অব্যাহত ভারী বর্ষণে উখিয়ার ১৪ নম্বর হাকিম পাড়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পে পাহাড় ধসে তিনটি বসত ঘর বিধ্বস্ত হয়েছে। এতে মাটি চাপায় একই পরিবারের ৩ সহোদরের মৃত্যু হয়েছে।
পথরেখা/দেশকণ্ঠ/আসো

  মন্তব্য করুন
আরও সংবাদ
×

পথরেখা : আমাদের কথা

আমাদের পোর্টালের নাম— pathorekha.com; পথরোখা একটি অনলাইন নিউজ পোর্টাল। আমরা এই প্রতিষ্ঠানকে প্রতিদিনের সত্য-সংবাদের পথরেখা হিসেবে প্রমাণ করতে চাই। পথরেখা সারাদেশের পাঠকদের জন্য সঠিক ও বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ এবং মতামত প্রকাশ করবে। পথরোখা নিউজ পোর্টাল হিসেবে ২০২৩ সালের জুন মাসে যাত্রা শুরু করলো। অচিরেই পথরেখা অনলাইন মিডিয়া হিসেবে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ে নিবন্ধনের প্রক্রিয়া শুরু করবে। পথরোখা  দেশ কমিউনিকেশনস-এর অঙ্গ প্রতিষ্ঠান।
 
পথরোখা জাতীয় সংবাদের উপর তো বটেই এর সঙ্গে রাজনীতি, আন্তর্জাতিক, খেলাধুলা, কৃষি, বিনোদন, অর্থনীতি, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, তথ্য ও প্রযুক্তিসহ বিভিন্ন বিভাগকেও গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করে। মাল্টিমিডিয়া সাংবাদিকতা এবং চৌকস ফটোগ্রাফিকে বিশেষ বিবেচনায় রাখে।
 
পথরোখা’র সম্পাদক আরিফ সোহেল এই সেক্টরে একজন খুব পরিচিত ব্যক্তিত্ব। সাংবাদিক হিসেবে তার দীর্ঘ ৩০ বছর কর্মজীবনে তিনি দৈনিক বাংলাবাজার পত্রিকা, আজকের কাগজ, রিপোর্ট২৪ ডটকম প্রভৃতি প্রতিষ্ঠানে কাজ করেছেন। এ ছাড়া তিনি সরকারী ক্রীড়া পাক্ষিক ‘ক্রীড়া জগত’ ও লাইফস্টাইল ম্যাগাজিক অপ্সরা নির্বাহী সম্পাদক হিসেবে দীর্ঘদিন কাজ করেছেন। তিনি জনপ্রিয় অনলাইন দেশকণ্ঠের নির্বাহী সম্পাদক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন।
 
পথরেখা দেশের মৌলিক মূল্যবোধ, বিশেষ করে জাতীয় সার্বভৌমত্ব, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতার প্রতি অঙ্গীকারবদ্ধ। এছাড়াও, এটি দেশের নাগরিকের মানবিক ও নাগরিক অধিকারের পক্ষে কথা বলবে। ন্যায়পরায়ণতা, নির্ভুলতা এবং বস্তুনিষ্ঠতা বজায় রাখতে আমরা অঙ্গীকারাবদ্ধ। আমরা বিশ্বাস করি যে জনগণের বিশ্বাসযোগ্যতা আমাদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ। পথরেখা রাজনৈতিক ইস্যুতে নির্দলীয় অবস্থান বজায় রাখবে। একটি নিরপক্ষ অনলাইন হিসেবে আমরা নিজেদের কর্মকাণ্ডে প্রমাণ করার শতভাগ প্রছেষ্টা করব। তবে সঠিক পদ্ধতি অনুসরণ করেও কিছু ভুল হতেই পারে। যা ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ রাখছি সব মহলেই। সততা পথে অবিচল; আলোর পথে অবিরাম যাত্রায় আমাদের পাশে থাকুন; আমরা থাকব আপনাদের পাশে।
 
উল্লেখ্য, পথরেখা হিসেবে একটি প্রকাশনী দীর্ঘদিন থেকে প্রকাশিত হয়ে আসছে। এবার উদ্যোগ নেওয়া হলো অনলাইন অনলাইন নিউজ পোর্টাল হিসেবে প্রকাশ করার।