• মঙ্গলবার, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪
    ৯ আশ্বিন ১৪৩১
    ঢাকা সময়: ১৯:২৯

হার্টের মাংসপেশির অসুখ কার্ডিওমায়োপ্যাথি

পথরেখা অনলাইন : কার্ডিওমায়োপ্যাথিতে আক্রান্ত হলে হৃৎপিণ্ডের দেওয়াল দুর্বল হয়ে যায় এবং ভেন্ট্রিকল বা চেম্বার বড় হয়ে যায়। হৃৎপিণ্ড ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ফলে শরীরে স্বাভাবিক রক্ত সঞ্চালন করার ক্ষমতা কমে আসে। একজন সুস্থ মানুষের শরীরে হৃদযন্ত্র প্রতি মিনিটে ৫ থেকে ৬ লিটার রক্ত পাম্প করে। কিন্তু কার্ডিওমায়োপ্যাথির কারণে এ প্রক্রিয়া ব্যাহত হয়। প্রায় ৫০ শতাংশ ক্ষেত্রে এ রোগে আক্রান্ত রোগীর পারিবারিক হৃদরোগের ইতিহাস থাকে। সময়মতো চিকিৎসা না নিলে রক্তজমাট, ভালভের ক্ষতি, হার্ট ফেইলিওর ও হার্ট অ্যাটাকের কারণ হতে পারে হার্টের মাংসপেশির অসুখ কার্ডিওমায়োপ্যাথি।

* কার্ডিওমায়োপ্যাথি কী

হৃৎপিণ্ড চারটি প্রকোষ্ঠ বা চেম্বার দ্বারা তৈরি। এতে আছে দুটি অলিন্দ ও দুটি নিলয়। তার মধ্যে বাম ও ডান নিলয়ের দেওয়ালগুলো অস্বাভাবিক হারে মোটা আকার ধারণ করতে পারে। পাশাপাশি নিলয়ও দুর্বল এবং বড় হয়ে যেতে পারে। এতে চেম্বারগুলো ঠিকমতো সংকোচন-প্রসারণের কাজ করতে পারে না। হৃৎপিণ্ডের মাংসপেশির এমন অসুখের নাম কার্ডিওমায়োপ্যাথি।

* কার্ডিওমায়োপ্যাথির ধরন

▶ ডাইলেটেড কার্ডিওমায়োপ্যাথি : এটি হলে হৃৎপিণ্ডের দেওয়াল পাতলা হয়ে যায় এবং বাঁ দিকের নিলয় দুর্বল ও বড় হয়ে যায়। বাম নিলয় হলো হৃৎপিণ্ডের প্রধান সঞ্চালন চেম্বার। এটি ক্ষতিগ্রস্ত হলে হৃৎপিণ্ডের সঞ্চালন ক্ষমতা মারাত্মকভাবে কমে আসে। ফলে শরীরে নানা রকম জটিলতা দেখা দেয়। যেমন-অল্প পরিশ্রমে হাঁপিয়ে ওঠা, শ্বাসকষ্ট এবং পায়ে পানি আসা।

▶ হাইপারট্রপিক কার্ডিওমায়োপ্যাথি : বাম নিলয়ের দেওয়াল মোটা বা পুরু হয়ে গেলে তাকে বলা হয় হাইপারট্রপিক কার্ডিওমায়োপ্যাথি। মাংসপেশি বেড়ে গেলে হৃৎপিণ্ডের রক্ত সঞ্চালন ক্ষমতা কমে আসে। ফলে, নানা ধরনের শারীরিক জটিলতা দেখা দেয়। যেমন-হাঁটতে গেলে হাঁপিয়ে ওঠা, শ্বাসকষ্ট, বুকে ব্যথা ও বুক ধড়ফড় করা।

▶ রেস্ট্রিকটিভ কার্ডিওমায়োপ্যাথি : হৃৎপিণ্ডের মাংসপেশি শক্ত হয়ে গেলে তাকে বলা হয় রেস্ট্রিকটিভ কার্ডিওমায়োপ্যাথি। মাংসপেশি শক্ত হয়ে যাওয়ার ফলে হৃৎপিণ্ড ঠিকমতো রক্ত সঞ্চালন করতে পারে না। ফলে নানা ধরনের শারীরিক জটিলতা দেখা দেয়।

* উপসর্গ

▶ অল্প পরিশ্রমে অতিরিক্ত ক্লান্তি অনুভব করা।

▶ সোজা হয়ে শুয়ে ঘুমাতে গেলে বুকে চাপ ও ব্যথা অনুভব হওয়া।

▶ শ্বাসকষ্ট এবং শোয়া অবস্থায় ঘন ঘন কাশি হওয়া।

▶ পা, পায়ের পাতা ও গোড়ালিতে পানি আসা এবং ফুলে যাওয়া।

▶ সারাক্ষণ তীব্র ক্লান্তি বা অবসাদ অনুভূত হওয়া।

▶ অস্বাভাবিক রক্ত সঞ্চালন বা বুক ধড়ফড় করা।

▶ মাথা ঘোরা ও মাথাব্যথা হওয়া।

* কারণ

▶ সরাসরি জিনগতভাবে বাবা-মায়ের থেকে সন্তানের শরীরে কার্ডিওমায়োপ্যাথি দেখা দিতে পারে। আবার কারও ক্ষেত্রে এ রোগ হতে পারে অজানা কিংবা অন্য কোনো রোগ বা জটিলতার প্রভাবে।

▶ দীর্ঘদিনের উচ্চ রক্তচাপের কারণে হৃদযন্ত্র ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে কার্ডিওমায়োপ্যাথি দেখা দিতে পারে।

▶ আগে হার্ট অ্যাটাক হয়ে থাকলে এবং হার্টের কোনো সংক্রমণের কারণে হতে পারে।

▶ জন্মগতভাবে হৃদরোগ থাকলে কিংবা হৃদরোগের পারিবারিক ইতিহাস থাকলে এ অসুখ দেখা দিতে পারে।

▶ স্থূলতা বা মেদবহুল শারীরিক অবস্থার কারণে হৃদযন্ত্রের স্বাভাবিক রক্তসঞ্চালন ব্যাহত হলে এটি হতে পারে।

▶ দীর্ঘসময় অ্যালকোহল বা কোকেন গ্রহণের ফলে হার্টে জটিলতা দেখা দিতে পারে। এমফিটামাইনস ও স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ সেবনের ফলে এ অসুখ হতে পারে।

▶ ডায়াবেটিস, থাইরয়েড, হেমোক্রোমাটোসিস, এমাইলয়েডোসিস ও সারকোডোসিসের কারণে মাংসপেশির অসুখ হতে পারে।

▶ গর্ভধারণের জটিলতা থেকে কার্ডিওমায়োপ্যাথি দেখা দিতে পারে।

* চিকিৎসকের কাছে কখন যাবেন

কিছু কাজ থাকে যেগুলো প্রতিদিন করতে হয়। কাজগুলো খুব বেশি কষ্টসাধ্য নয়। কিন্তু হঠাৎ করে লক্ষ্য করলেন, এসব কাজ করতে গেলে খুব অসুবিধায় পড়তে হচ্ছে। অল্প পরিশ্রমে অতিরিক্ত হয়রান লাগছে। যেমন, হাঁটতে গেলে হাঁপিয়ে ওঠা, ঘুমাতে গেলে বুকে তীব্র ব্যথা ও শ্বাসকষ্ট শুরু হওয়া কিংবা সিঁড়ি ভেঙে ওপরে ওঠার সময় বুক প্রচণ্ড ধড়ফড় করা। এসব লক্ষণ দেখা দিলে সময় নষ্ট করবেন না। দ্রুত হাসপাতালে যান এবং চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করুন।

* কার্ডিওমায়োপ্যাথি প্রতিরোধে করণীয়

▶ সব ধরনের নেশাজাতীয় দ্রব্য এড়িয়ে চলতে হবে। মদ ও ধূমপানের অভ্যাস থাকলে দ্রুত পরিহার করুন।

▶ উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখুন। শরীরে কোলেস্টেরলের মাত্রা যেন ঠিক থাকে, সেদিকে লক্ষ্য রাখুন।

▶ খাদ্যতালিকায় সুষম ও পুষ্টিকর খাবার রাখুন। শরীর সচল রাখতে নিয়মিত ব্যায়াম করতে পারেন।

▶ পরিমিত ঘুম দুশ্চিন্তা কমাতে সাহায্য করে। রাতে পর্যাপ্ত ঘুম নিশ্চিত করুন।

▶ নিজের সিদ্ধান্তে ফার্মেসি থেকে ওষুধ কিনে খাবেন না, শারীরিক জটিলতা দেখা দিলে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করুন।

লেখক : কার্ডিয়াক সার্জন, সিনিয়র কনসালট্যান্ট, কার্ডিয়াক সার্জারি বিভাগ, ল্যাবএইড কার্ডিয়াক হাসপাতাল।

পথরেখা/এআর

  মন্তব্য করুন
আরও সংবাদ
×

পথরেখা : আমাদের কথা

আমাদের পোর্টালের নাম— pathorekha.com; পথরোখা একটি অনলাইন নিউজ পোর্টাল। আমরা এই প্রতিষ্ঠানকে প্রতিদিনের সত্য-সংবাদের পথরেখা হিসেবে প্রমাণ করতে চাই। পথরেখা সারাদেশের পাঠকদের জন্য সঠিক ও বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ এবং মতামত প্রকাশ করবে। পথরোখা নিউজ পোর্টাল হিসেবে ২০২৩ সালের জুন মাসে যাত্রা শুরু করলো। অচিরেই পথরেখা অনলাইন মিডিয়া হিসেবে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ে নিবন্ধনের প্রক্রিয়া শুরু করবে। পথরোখা  দেশ কমিউনিকেশনস-এর অঙ্গ প্রতিষ্ঠান।
 
পথরোখা জাতীয় সংবাদের উপর তো বটেই এর সঙ্গে রাজনীতি, আন্তর্জাতিক, খেলাধুলা, কৃষি, বিনোদন, অর্থনীতি, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, তথ্য ও প্রযুক্তিসহ বিভিন্ন বিভাগকেও গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করে। মাল্টিমিডিয়া সাংবাদিকতা এবং চৌকস ফটোগ্রাফিকে বিশেষ বিবেচনায় রাখে।
 
পথরোখা’র সম্পাদক আরিফ সোহেল এই সেক্টরে একজন খুব পরিচিত ব্যক্তিত্ব। সাংবাদিক হিসেবে তার দীর্ঘ ৩০ বছর কর্মজীবনে তিনি দৈনিক বাংলাবাজার পত্রিকা, আজকের কাগজ, রিপোর্ট২৪ ডটকম প্রভৃতি প্রতিষ্ঠানে কাজ করেছেন। এ ছাড়া তিনি সরকারী ক্রীড়া পাক্ষিক ‘ক্রীড়া জগত’ ও লাইফস্টাইল ম্যাগাজিক অপ্সরা নির্বাহী সম্পাদক হিসেবে দীর্ঘদিন কাজ করেছেন। তিনি জনপ্রিয় অনলাইন দেশকণ্ঠের নির্বাহী সম্পাদক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন।
 
পথরেখা দেশের মৌলিক মূল্যবোধ, বিশেষ করে জাতীয় সার্বভৌমত্ব, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতার প্রতি অঙ্গীকারবদ্ধ। এছাড়াও, এটি দেশের নাগরিকের মানবিক ও নাগরিক অধিকারের পক্ষে কথা বলবে। ন্যায়পরায়ণতা, নির্ভুলতা এবং বস্তুনিষ্ঠতা বজায় রাখতে আমরা অঙ্গীকারাবদ্ধ। আমরা বিশ্বাস করি যে জনগণের বিশ্বাসযোগ্যতা আমাদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ। পথরেখা রাজনৈতিক ইস্যুতে নির্দলীয় অবস্থান বজায় রাখবে। একটি নিরপক্ষ অনলাইন হিসেবে আমরা নিজেদের কর্মকাণ্ডে প্রমাণ করার শতভাগ প্রছেষ্টা করব। তবে সঠিক পদ্ধতি অনুসরণ করেও কিছু ভুল হতেই পারে। যা ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ রাখছি সব মহলেই। সততা পথে অবিচল; আলোর পথে অবিরাম যাত্রায় আমাদের পাশে থাকুন; আমরা থাকব আপনাদের পাশে।
 
উল্লেখ্য, পথরেখা হিসেবে একটি প্রকাশনী দীর্ঘদিন থেকে প্রকাশিত হয়ে আসছে। এবার উদ্যোগ নেওয়া হলো অনলাইন অনলাইন নিউজ পোর্টাল হিসেবে প্রকাশ করার।