পথরেখা অনলাইন : রাজনৈতিক ঝুঁকি ও অর্থনৈতিক নিম্ম প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনার কারণে বাংলাদেশের দীর্ঘমেয়াদি ঋণমান কমিয়েছে মুডিস রেটিং।
সোমবার (১৮ নভেম্বর) প্রকাশিত মুডিসের রেটিংস প্রতিবেদনে বাংলাদেশের ঋণমান বি-১ গ্রেড থেকে বি-২ গ্রেডে নামিয়ে দেওয়া হয়ে। এর অর্থ বাংলাদেশের ঋণমান ‘স্থিতিশীল’ থেকে আরও ‘নেতিবাচক’ গ্রেডে নেমে গেছে।
সংবাদমাধ্যম ব্লুমবার্গ লিখেছে, ঋণমান কমার পাশাপাশি বাংলাদেশের স্বল্পমেয়াদি ইস্যুয়ার রেটিং ‘শ্রেষ্ঠ গুণসম্পন্ন’ নয় হিসেবে আগের গ্রেডেই রেখেছে মুডিস।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দক্ষিণ এশীয় দেশটির জন্য ক্রমাগত রাজনৈতিক ঝুঁকি এবং নিম্ন প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনার কথা তুলে ধরে রেটিংস কমিয়েছে মুডিস।
এর ফলে রুয়ান্ডা, কম্বোডিয়া ও মঙ্গোলিয়ার মতো দেশের কাতারে নেমে গেছে বাংলাদেশের ঋণমান।
ব্লমবার্গ লিখেছে, বিশ্লেষক ইয়ং কিম এবং জিন ফাং এক বিবৃতিতে বলেছেন- “ডাউনগ্রেড অর্থাৎ বি-১ থেকে বি-২ গ্রেডে নেমে যাওয়া উচ্চতর রাজনৈতিক ঝুঁকি এবং নিম্ন প্রবৃদ্ধির প্রতিফল, যা সরকারের তারল্য ঝুঁকি, বাহ্যিক দুর্বলতা এবং ব্যাংকিং খাতের ঝুঁকি বাড়ার বার্তা দেয়।”
প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশের চলমান রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা এবং দুর্বল প্রবৃদ্ধি বাংলাদেশকে তার ঘাটতি পূরণের জন্য স্বল্পমেয়াদি অভ্যন্তরীণ ঋণের ওপর ক্রমেই নির্ভরতা বাড়ায় এবং তারল্য ঝুঁকি বৃদ্ধিরও বার্তা দেয়।
ব্লুমবার্গের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ঋণমানের ঘাটতি নোবেলজয়ী মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের জন্য অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জগুলোকে তুলে ধরে। একই সঙ্গে বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ হ্রাস এবং সাম্প্রতিক রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে ব্যবসা হারানোর শঙ্কার তথ্যও সামনে আনে।
গত বছর আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল থেকে ৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার সহায়তা পাওয়ার পরেও মে মাসে বাংলাদেশের ঋণমান নিম্নমুখী হয়, যা দেশের বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ বাড়ানোর প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেওয়ার বার্তা দেয়।
চলতি বছরের অক্টোবর পর্যন্ত বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ১৯ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছিল, যা গত জুনে ছিল ২১ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার। বর্তমান রিজার্ভ তিন মাসের মতো আমদানি চাহিদা মেটাতে সক্ষম।
অবশ্য ব্লুমবার্গের প্রতিবেদনে ‘ইতিচাবক’ আভাসও দেওয়া হয়েছে, বলা হয়েছে- অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড অনেকাংশে স্বাভাবিক হয়েছে। তবে আইনশৃঙ্খলায় ঘাটতি দেশীয় চাহিদাকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে এবং তৈরি পোশাক খাতের কার্যকলাপের ওপর চাপ সৃষ্টি করেছে।
২০২৫ সালের জুন থেকে নতুন অর্থবছরের প্রবৃদ্ধি ৪ দশমিক ৫ শতাংশ হতে পারে বলে মুডিস অনুমান করছে, যা আগে ছিল ৬ দশমিক ৩ শতাংশ।
ব্লুমবার্গের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি হ্রাসের আভাস নেতিবাচক ঝুঁকিগুলোরই প্রতিফলন ঘটায়, যা এরই মধ্যে দেশের দুর্বল আর্থিক অবস্থানকে আরও চাপে ফেলতে পারে এবং বাহ্যিক দুর্বলতাগুলোকে চড়াও করে তুলতে পারে।
ব্লুমবার্গের তথ্য অনুসারে, বাংলাদেশের মুদ্রা চলতি বছর এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে দুর্বলম, ডলারের বিপরীতে যার মান ৮ শতাংশের ও বেশি কমেছে।
বিশ্বের প্রধান তিনটি ঋণমান যাচাইকারী প্রতিষ্ঠানের মধ্যে মুডিস একটি। সর্বশেষ ৩১ তারা বাংলাদেশের ঋণমান কমিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল। তখন ঋণমান এক ধাপ কমিয়ে বিএ-৩ থেকে বি১- গ্রেডে রেখেছিল। কারণ হিসেবে তখন মুডিস বলেছিল, বৈদেশিক লেনদেনের ক্ষেত্রে উঁচু মাত্রার দুর্বলতা ও তারল্য ঝুঁকিতে রয়েছে বাংলাদেশ।
পথরেখা/এআর