পথরেখা অনলাইন : আগের ম্যাচে আর্জেন্টিনা হেরেছিল আর ব্রাজিল ড্র করেছিল। এবার আর্জেন্টিনা জিতলেও ব্রাজিল পয়েন্ট হারিয়েছে। পেরুর বিপক্ষে ১-০ গোলে জিতেছে আলবিসেলেস্তারা, অন্যদিকে উরুগুয়ের সঙ্গে ১-১ গোলে ড্র করেছে ভিনিসিয়ার জুনিয়াররা। ম্যাচের হিসেবে চলতি বছরের শেষ ম্যাচে অবশেষে কষ্টার্জিত জয়ের দেখা পেল আর্জেন্টিনা। পেরুর বিপক্ষে মাঠে নেমে শুরুটা খুব একটা ভালো না হলেও ম্যাচের ৫৫ মিনিটের মাথায় লিওনেল মেসির অ্যাসিস্টে লাউতারো মার্টিনেজের গোলে হারের বৃত্ত থেকে বের হল আর্জেন্টিনা। বুধবারের এই জয় যে আর্জেন্টিনার খুব বেশি দরকার ছিল তা আঁচ করা গেছে খেলার দ্বিতীয়ার্ধে এসে। তবে পেরুর বিপক্ষে ১ গোলের জয়ে খুব একটা খুশি হতে দেখা যায়নি দলের খেলোয়াড়দের। তবুও নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব দখলের লড়াইয়ে এই জয় স্বস্তি এনে দিয়েছে আর্জেন্টিনাকে। চলতি বছরে ২ ম্যাচে হার ও এক ড্রতে সমালোচনার মুখে পড়ে আর্জেন্টিনা এবং লিওনেল স্ক্যালোনি। গত ম্যাচেই প্যরাগুয়ের কাছে হেরেছে তারা। সেটাও এই প্রতিপক্ষের বিপক্ষে ৮ বছর পর। ফলত জয়ের আশা নিয়ে আজ মাঠে নামে স্ক্যালোনিবাহিনী।
ম্যাচের প্রথমার্ধে গোল শূন্য ড্র করার পর দ্বিতীয়ার্ধে এসে ৫৫ মিনিটে ডি-বক্সে ভেতর বল পেয়ে দারুণ এক চিপ করেন লিওনেল মেসি। স্ট্রাইকার লাউতারো মার্টিনেজ সে বল শূন্যে ভেসে বল পাঠালেন প্রতিপক্ষের জালে। ৫৫ মিনিটের এই গোলেই বছরের শেষ ম্যাচে ঘরের মাঠে জয় পায় আর্জেন্টিনা। ২০২৬ বিশ্বকাপের দক্ষিণ আমেরিকা অঞ্চলের বাছাইয়ে এখন পর্যন্ত ১২ ম্যাচে ৮ জয় ও এক ড্রয়ে ২৫ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষস্থান দখল করল আর্জেন্টিনা। বুয়েনস আইরেস লা বোম্বোনেরা স্টেডিয়ামে চলতি বছরের শেষ ম্যাচ খেলতে নামে স্ক্যালোনির শিষ্যরা। ম্যাচের প্রথমার্ধ শেষ হয় গোল শূন্য সমতায়। ২০২৪ সালে আর্জেন্টিনার সবচেয়ে বড় জয়ের নায়ক ছিলেন লাউতারো মার্টিনেজ। কোপা আমেরিকায় কলম্বিয়ার বিপক্ষে ১১২ মিনিটে করা তার ওই গোলেই শিরোপা ঘরে তুলেছিল আলবিসেলেস্তেরা। বছরের একেবারে শেষ ম্যাচে এসে আরও একবার মার্টিনেজ নায়ক বনে গেলেন।
রেফারি যখন শেষ বাঁশি বাজিয়েছেন, আর্জেন্টাইন ডাগআউটে তখন স্বস্তির নিঃশ্বাস। ২০১৭ সালের পর থেকে কখনোই আগে গোল খেয়ে সেই ম্যাচে আর ফিরতে পারেনি পেরু। এবারও সেটা হয়নি। এই জয়ের পর ১২ ম্যাচ থেকে আর্জেন্টিনার সংগ্রহ ২৫ পয়েন্ট। নিজেদের খেলা যখন শেষ হয়েছে তখন লাতিন অঞ্চলের বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে তারা এগিয়ে আছে ৫ পয়েন্টের ব্যবধানে। দুই থাকা উরুগুয়ে নিজেদের ম্যাচে জয় পেলে সেটা নেমে আসবে ৩ পয়েন্টে। তবে শীর্ষস্থান হারাতে হচ্ছে না তাদের। পরেরবার আর্জেন্টিনাকে মাঠে দেখা যাবে ২০২৫ এর মার্চে। এদিকে হতাশার এক ড্র-য়ে বছর শেষ করল ব্রাজিল। হলুদ জার্সিধারীদের ফুটবলে সময়টা ভালো যাচ্ছে না বেশ অনেকটা দিন ধরেই। পুরো দলে একপ্রকার পরিবর্তনের হাওয়া লেগেছে। কিন্তু এই হাওয়াবদল খুব একটা কাজে দিচ্ছে না। কোচ দরিভাল জুনিয়রের উড়ন্ত শুরুটাও অনেকটা মাটিতে নেমেছে সময়ে সময়ে।
২০২৪ সালের মহাদেশীয় আসরে শেষ চারেও যেতে পারেনি ব্রাজিল। হারতে হয়েছিল উরুগুয়ের কাছে। বছরের শেষ ম্যাচেও সেই একই প্রতিপক্ষের কাছে হতাশাজনক এক ড্র করেছে সেলেসাওরা। অবশ্য পিছিয়ে থেকে ম্যাচে ফিরে আসাটাও ব্রাজিলের জন্য এই ম্যাচে কম প্রাপ্তির নয়। প্রথমার্ধে আক্রমণভাগে ছন্নছাড়া পারফরম্যান্সের পর দ্বিতীয়ার্ধের ১০ মিনিটের মাথায় গোল হজম করতে হয় তাদের। সেখান থেকেই অবশ্য ফিরে এসেছে তারা। দর্শনীয় দুই গোল অবশ্য চোখের সামনে দেখেছেন ভক্তরা। গোল পরিশোধের পর ব্রাজিলের চিরায়ত আক্রমণাত্মক ফুটবলও দেখা গেছে। কিন্তু ফরোয়ার্ড লাইনের দুর্বলতায় আরও একবার হতাশ হতে হয়েছে তাদের। পুরো ৪৫ মিনিটে গোটা সাতেক শট। কিন্তু প্রতিপক্ষের গোলমুখে আছে কেবল এক শটই। সুযোগ এসেছিল বারবার। কিন্তু ব্রাজিলের ফরোয়ার্ডরা একের পর এক সুযোগই মিস করে গেলেন পুরোটা সময় জুড়ে। প্রতিপক্ষ উরুগুয়ের ডি-বক্সে একের পর এক বল রেখেছিলেন মিডফিল্ডাররা। সেটাকে কাজে লাগাতে পারেননি কেউই।
রাফিনিয়া, ইগর হেসুস, ভিনিসিয়ুসরা মিস করেছেন একের পর এক সুযোগ। ব্রাজিলের শুরুটা নেহাত মন্দ ছিল না। ৬ মিনিটেই রাফিনিয়ার পাস থেকে গোল করার উপলক্ষ্য পেয়েছিলেন ভিনিসিয়ুস জুনিয়র। কিন্তু সেখান থেকে ফল পাশে আসেনি তাদের। একাধিকবার সুযোগ পেয়েও সাদামাটা আক্রমণের খেসারত ব্রাজিল দিয়েছে পুরো সময়জুড়ে। ৩০ মিনিয়ে ফেদে ভালভার্দের ফ্রিকিক বারের বাইরে দিয়ে গেলে রক্ষা পায় ব্রাজিল। ঘরের মাঠে ব্রাজিলের সেরা দুই সুযোগ পেয়েছিলেন রাফিনিয়া। ৩৫ মিনিটে তার শট পোস্টে থাকেনি। আর যোগ করা সময়ে উরুগুয়ে গোলরক্ষক রোশেটের দুর্দান্ত সেইভ গোলবঞ্চিত করে তাদের। অনেকটা উত্তেজনাহীন প্রথমার্ধের পর আসে দুর্দান্ত এক দ্বিতীয়ার্ধ। যেখানে ব্রাজিল ছিল আরও বেশি ক্ষুরধার। উরুগুয়েও অনেকটাই খোলস ছেড়ে লড়তে চেয়েছিল সমানে সমানে। শুরুর গোলটাও পায় তারাই। তবে জিততে না পারায় ব্রাজিলের হতাশাটা বেশি। নভেম্বর উইন্ডে ব্রাজিল টানা দুই ড্রয়ে পিছিয়ে নেমে গেছে পাঁচে। ১২ ম্যাচে পাঁচ জয় আর তিন ড্রয়ে পাঁচবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের পয়েন্ট ১৮। ২০২৬ বিশ্বকাপের জন্য দুশ্চিন্তাটা দিনে দিনে বাড়ছেই।
পথরেখা/আসো