দেশকন্ঠ প্রতিবেদন : ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার আমজানখোর ইউনিয়নের হরিণমারী সীমান্তে মন্ডুমালা গ্রামে অবস্থিত সূর্যপুরী আমগাছটির। প্রায় তিন বিঘা জায়গাজুড়ে দাঁড়িয়ে আছে গাছটি। অসংখ্য ইতিহাসের সাক্ষী প্রাগৈতিহাসিক যুগের প্রাচীন এই আমগাছ। উত্তরের জনপদে নীরবে দাঁড়িয়ে থাকা এ গাছটি ৯০ ফুট উঁচু। এর ডালপালার দৈর্ঘ্য প্রায় ৯০ ফুট। গাছটির বয়স কত, তা সঠিক কেউ বলতে না পারলেও এলাকার বেশির ভাগ মানুষই একমত যে, প্রায় ২০০ বছরের কম হবে না এর বয়স। উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া আমগাছটির বর্তমান মালিক হলেন নূর ইসলাম ও সাইদুর ইসলাম। জানা যায় তাদের বাবার দাদা এ গাছটি লাগিয়েছিলেন। প্রতিবছর গাছটিতে প্রচুর সূর্যপুরী আমের ফলন হয়। প্রতিটি আমের ওজন হয় ২০০ থেকে ২৫০ গ্রাম। বরাবরের মতো এবারও গাছটি মুকুলে ভরে গেছে। এতে এর সৌন্দর্য বেড়েছে বহুগুণ। দূর থেকে দেখা যায় আরও সুন্দর। এশিয়া মহাদেশের সবচেয়ে বড় আমগাছ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে সূর্যপুরী আমগাছ। এটিকে ঘিরে এরই মধ্যে বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার হরিণমারি গ্রাম পরিচিতি পেয়েছে দেশজুড়ে। প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে আমগাছটি দেখার জন্য ছুটে আসছেন দর্শনার্থীরা। গাছের পাশে দাঁড়িয়ে ছবি তুলছেন তারা। শিশু থেকে শুরু করে বয়োবৃদ্ধ দর্শনার্থীরা গাছের ডালে উঠেও ছবি তুলে স্মৃতি ধরে রাখছেন সবাই। ঢাকা থেকে আসা দর্শনার্থী সাইফুল্লাহ আল হেলাল বলেন, বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে জেনেছি যে এ জেলায় সবচেয়ে বড় আমগাছ সূর্যপুরী। আজ নিজ চোখে দেখা হলো তার সঙ্গে। বিশ্বাস করতে ভালো লাগছে যে এটি এশিয়ার মধ্যে সবচেয়ে বড় আমগাছ। তবে কিছু বিধিনিষেধ আরোপ করা উচিত বলে আমি মনে করি।
রাজশাহী থেকে আসা দর্শনার্থী রিপন আহমেদ বলেন, আমি সাত ঘণ্টা মোটরসাইকেল জার্নি করে এখানে এসেছি। একটি ভিডিওতে দেখেছিলাম, সবচেয়ে বড় আমগাছ বালিয়াডাঙ্গীতে অবস্থিত। আজ গাছটি দেখে আমি বিমোহিত হয়েছি। জীবনে এত বড় আমগাছ আমি দেখিনি। এখন মুকুল থাকায় এর সৌন্দর্য আরও বেড়েছে। তবে আমি বলতে চাই, আমরা যারা অনেক দূর থেকে আসি, তাদের জন্য অবশ্যই বিশ্রাম ও খাবারের ব্যবস্থা রাখা প্রয়োজন। কিন্তু এখানে সেই ব্যবস্থা নেই। এখানে একটি রেস্ট হাউস, ভালো মানের রেস্টুরেন্ট এবং একটি মানসম্মত ওয়াশরুম স্থাপন করা জরুরি। এতে দর্শনার্থীরা উপকৃত হবে। দর্শনার্থী আবু হোসেন বলেন, আমি ছোটবেলায় জানতে পারি যে এখানে একটি বড় আমগাছ আছে৷ আজকে দেখলাম ও উপলব্ধি করলাম এটি সৃষ্টিকর্তার উপহার৷ দেখে অনেক ভাল লাগলো। যে বিষয়টি না বললেই না যে গাছের মুকুল গুলো অনেক তরতাজা। গাছের ডগায় ডগায় মুকুল ধরছে যা আমাকে বিমোহিত করেছে। আসলেই আমি গাছটি দেখে অনেক খুশি। আরেক দর্শনার্থী নাজিমা খাতুন বলেন, পরিবারসহ সবাই মিলে গাছটি দেখতে এসেছি। দেখে অনেক ভালো লাগল। আর গাছ যে এত বড় হয়, তা এটি না দেখলে বিশ্বাস হতো না। এর প্রতিটি ডালও এক-একটি গাছের মতো।
পঞ্চগড় থেকে আসা বজলার রহমান বলেন, আমি ছাত্রজীবনে একবার এসেছিলাম গাছটি দেখতে। এবার একটু ভিন্নতা মনে হচ্ছে কারণ প্রতিটি ডগায় মুকুলে ভরা। তবে এই গাছের আম খেতে পারলে অনেক ভালো লাগত। সরকার এই গাছের আমকে যদি আলাদাভাবে বাজারজাত করার প্রক্রিয়া করে, তাহলে ভালো হয়। অনেকেরই এই গাছের আম খেয়ে আশা পূরণ হবে। মালিকপক্ষ বলেন, এখানে জমির খাজনা, সরকারি ট্যাক্সের কারণে ভেতরে দর্শনার্থী প্রবেশ বাবদ ২০ টাকা করে নেওয়া হয়। তবে কিছু বিধিনিষেধ দেওয়া হলেও মানুষ মানে না। গত বছরের চেয়ে এ বছর মুকুল অনেক বেশি দেখা যাচ্ছে। গত বছর ৫০ মণ আম পেয়েছি। এ বছর যে হারে মুকুল ধরেছে, তাতে ৩০০ মণ আম পাব বলে আশা করছি। তিনি আরও বলেন, বাজারের অন্য আমের চেয়ে এই গাছের আমের দাম একটু বেশি রাখা হয়। যেহেতু এটির চাহিদা অনেক বেশি। আমরা প্রতি কেজি ১০০ টাকা দরে বিক্রি করে থাকি৷ বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) যোবায়ের হোসেন বলেন, যেহেতু গাছটি ব্যক্তিমালিকাধীন, তাই তারা চাইলে সেখানে পিকনিক স্পষ্ট, রেস্ট হাউস ও রেস্টুরেন্ট করতে পারেন। আমাদের পক্ষ থেকে তাদের একটি প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। উদ্যোগ নিলে পরবর্তী সময়ে সব ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
যেভাবে যাবেন
ঠাকুরগাঁও শহর থেকে বালিয়াডাঙ্গীর দূরত্ব ২৫ কিলোমিটার। আর বালিয়াডাঙ্গী থেকে দূরত্ব ১০ কিলোমিটার। ঢাকা থেকে হানিফ, কর্ণফুলী, কেয়াসহ বিভিন্ন পরিবহনে ঠাকুরগাঁ যেতে পারবেন। এ ছাড়া ঠাকুরগাঁও থেকে বালিয়াডাঙ্গী যেতে লোকাল বাস সার্ভিস আছে। লালমনিরহাট বা ঠাকুরগাঁও রুটে চলাচলকারী ট্রেনেও যেতে পারেন। বাসভেদে ভাড়া পড়বে ৬৫০ থেকে ৭০০ টাকা। আর ট্রেনে ৬৫০ থেকে ১৬০০ টাকা। আর বিমানযোগে যেতে চাইলে ৩৬০০ টাকা সৈয়দপুর পর্যন্ত (টিকিটের দর ওঠানামা করে)। তারপর সৈয়দপুর থেকে বাসে ১০০ টাকা ভাড়া পড়বে। সবশেষ গাছটি দেখতে আপনাকে ২০ টাকায় টিকিট কাটতে হবে।
যেখানে থাকবেন
ঠাকুরগাঁওয়ের নর্থ সার্কুলার রোডে হোটেলে প্রাইম ইন্টারন্যাশনাল, হোটেল শাহজালাল, হোটেল সালমা ইসলাম, হোটল সাকেদসহ বেশ কিছু আবাসিক হোটেলে থাকতে পারবেন। এ ছাড়া সরকারি সার্কিট হাউস ও জেলা পরিষদের রেস্ট হাউসেও থাকার ব্যবস্থা আছে।
খাবেন যেখানে
বালিয়াডাঙ্গী উপজেলায় জনপ্রিয় বেশ কিছু রেস্টুরেন্ট আছে। খাবারের মানভেদে একেক রেস্টুরেন্টে একেক মূল্য রাখা হয়। নিরিবিলি হোটেল, বাবুর হোটেল, আনসারি হোটেল, নিউ সুরুচি হোটেলসহ আরও অনেক আছে। এ ছাড়া ঠাকুরগাঁওয়ের জনপ্রিয় খাবার শুঁটকি ও মসলার মিশ্রিত ‘সিদল ভর্তা’ এবং চালের গুঁড়ার পিঠার স্বদ নিতে পারবেন।
দেশকন্ঠ/অআ