বিশেষ প্রতিবেদন : হঠাৎ ঝড়োবৃষ্টিতে সোমবার অচল হয়ে যায় রাজধানী। বিভিন্ন সড়কে জমে যায় হাঁটুপানি। দমকা হাওয়ায় বনানীসহ নগরীর কয়েকটি এলাকার সড়কের ওপর গাছ উপড়ে পড়ে। এতে করে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। নগরবাসী পড়েন চরম ভোগান্তিতে। সড়কে গণপরিবহনের সংকট থাকায় কর্মব্যস্ত মানুষদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। এই সুযোগে পরিবহন চালকরা হাতিয়ে নেয় অতিরিক্ত ভাড়া।
১৮ জুন সকাল থেকেই আবার বৃষ্টি শুরু হয়েছে। এর আগে ১৭ জুন বিকাল ৩টা থেকে ৬টা পর্যন্ত রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় থেমে থেমে ঝড়ো হাওয়া, শিলাসহ বৃষ্টি হয়। তবে সময় বিবেচনায় গড়ে বৃষ্টি হয় এক ঘণ্টা। এ সময় ৪৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়। সামান্য এই বৃষ্টিতেই হাঁটুপানি জমে বিভিন্ন সড়কে। আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, রাজধানীতে ঝড়োহাওয়াসহ শিলাবৃষ্টি হয়েছে। সন্ধ্যা ৬টায় বৃষ্টি থেমে যায়। মঙ্গলবারও (আজ) বজ্রসহ বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে।
বৃষ্টির কারণে সড়কে চলাচল করা মানুষ ঝড়োবৃষ্টি থেকে বাঁচতে আশপাশের ভবন, অফিস, দোকানপাটে আশ্রয় নেন। তবে মাইক্রোবাস, বাস বা অন্যান্য গণপরিবহন খুব সতর্কতার সঙ্গে পথ চলেছে। বৃষ্টিতে ফার্মগেট, সংসদ ভবন এলাকা, আগারগাঁও, শেওড়াপাড়া, কাজীপাড়া, মিরপুর-১০, মিরপুর-১১, কালশী এলাকার সড়কে হাঁটুপানি জমে।
মেট্রোরেলের নির্মাণ কাজ চলমান থাকায় সাধারণ মানুষদের এ সড়কে চলাচলে অন্তহীন দুর্ভোগে পড়তে হয়। চালকরা খানাখন্দে ভরা এ সড়কে অত্যন্ত ঝুঁকি নিয়ে গাড়ি চালিয়েছেন। পানি জমায় নগরীর অন্যান্য এলাকার সড়কে যানবাহনের গতিবেগ কমে যায়।
বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত আহমেদুল হাসান যুগান্তরকে বলেন, বৃষ্টির কারণে দীর্ঘসময় এক জায়গায় দাঁড়িয়েছিলাম। কারণ ঝড়োহাওয়া ও বৃষ্টির মধ্যে কোনোভাবেই মোটরবাইক চালানো সম্ভব হচ্ছিল না।
তিনি বলেন, বৃষ্টি থামার পর পুরানা পল্টন থেকে যমুনা ফিউচার পার্কে আসতে দেড় ঘণ্টা সময় লেগেছে। কেননা সড়কের একাংশ পানিতে ডুবে গেছে। তিনি বলেন, ‘কোনো কোনো সড়কে উন্নয়ন কাজ চলছে। কোনো কোনো জায়গায় ম্যানহোলের ঢাকনা নেই। এমতাবস্থায় এসব জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মোটরবাইক চালাতে হচ্ছে।’
আগারগাঁও তথ্য কমিশনে বিশেষ প্রশিক্ষণে অংশ নেন বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার তিনটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের ৩ কর্মকর্তা মমতাজী, মাহবুব ও আবদুল্লাহ। সন্ধ্যায় বসুন্ধরা গেটে তারা যুগান্তর প্রতিবেদককে বলেন, ‘আগারগাঁও থেকে আসার পথে দেখেছি মিরপুর স্টেডিয়াম ও কালশি এলাকায় সড়কের কয়েকটি পয়েন্ট হাঁটুপানি। ময়লা ও কর্দমাক্ত পানি মাড়িয়েই মানুষ চলাচল করছেন।’ কবির নামে মিরপুরের এক বাসিন্দা বলেন, ‘সন্ধ্যা ৭টায় অফিস থেকে বেরিয়ে সোয়া আটটায়ও বাসায় পৌঁছতে পারিনি। অথচ হেঁটে অফিস থেকে বাসায় যেতে সময় লাগে মাত্র ১০ মিনিট। সামান্য বৃষ্টিতেই যদি সড়কে হাঁটুপানি জমে যায়, তাহলে বড় দুর্যোগ হলে এই শহরের কি অবস্থা হবে।’
নগরীর বিভিন্ন স্থানে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বৃষ্টিতে প্রগতি সরণি, বাড্ডা, গুলশান, বনানী, পুরান ঢাকার জুরাইন, পোস্তগোলা, সায়েদাবাদ, শহীদনগর, আজিমপুর, হাজারীবাগসহ আশপাশের এলাকায় সড়কে পানি জমে যায়। এ কারণে নগরবাসীকে সীমাহীন দুর্ভোগের শিকার হতে হয়।
বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, ঢাকার খাল ও পানি নিষ্কাশন নালাগুলোকে প্রবহমান করা না গেলে জলাবদ্ধতার সমাধান হবে না। এ ব্যাপারে সরকারকে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। ঢাকার খালগুলো খনন করে সচল করতে হবে। খালগুলো যাতে পুনর্দখল না হয়, সে ব্যাপারেও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। একই সঙ্গে ঢাকামুখী জনস্রোত কমাতে বিকেন্দ্রীকরণের উদ্যোগ বাস্তবায়নে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
দেশকণ্ঠ/আসো