খেলা মানেই অনিশ্চিত ফলা ফল। আমাদের এই অনিশ্চয়তা খুব সীমাবদ্ধতার গণ্ডির মাঝে আবদ্ধ। দেশের শ্রেষ্ঠ তিনটি খেলা আমার সময় ছিল ফুটবল, হকি এবং তারপর ক্রিকেট। আমার সময় বলতে ১৯৬৮ থেকে ১৯৯০ সাল। এখন পাশা উল্টেছে। আজ ক্রিকেট, ফুটবল এবং তার বহুপরে হকির অবস্থান। এই ধূসর হয়ে যাওয়া হকির এক সময়ের অন্যতম একজন ছিলাম আমি। আমার হকি আত্মজীবনী ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হচ্ছে অনলাইল পোটাল দেশকণ্ঠে।
২৪ জুন ২০২২ প্রকাশ হলো মেজর শাহাবউদ্দিন চাকলাদারের [অব.] ধারাবাহিক লেখার তৃতীয় পর্ব।
দ্বিতীয় পর্বের পর
পোস্টিং মফস্বলে হবার জন্য অসুস্থ হলে স্থানীয় ডাক্তারদের উপর নির্ভরশীল থাকতে হতো। এই ডাক্তার সাহেবরা হতেন খুব যত্নশীল। প্রায় প্রতিদিন সন্ধ্যায় বাসায় চা-চক্র হতোই। ওই মফস্বলে বাবাই ছিলেন একমাত্র গেজেটেড অফিসার। স্কুল শেষ করে সবাই বিএম কলেজে পড়েছি। মেজ ভাই ভোর সকালে পাখি মারতে বন্দুক নিয়ে বেড় হতেন। আমরা সাথে যেতাম।
এক দিন চা-চক্রে দারোগা কাকা বললেন কোথায় জানি বাঘ দেখা গেছে বাবাকে তাদের সাথে বন্দুক নিয়ে যেতে হবে। বাবা রাজি। মা বেকে বসলেন। কিছুতেই বাবা যেতে পারবেন না। তখন মেজ ভাই নিয়ে আলাপ আলোচনা দাবী শুরু হলো, মা একদম না রাজি অবশেষে ঠি ক হলো বন্দুকটা বাঘ মারার জন্য দেওয়া হবে। বন্দুক দেবার দুদিন পর বাঘ শিকারের খবর এলো। বাঘকে মারতে পারে নাই তবে চারজন দারোগা কাকা এক কন্সটেবল আর দুই নৌকার মাঝি হাসপাতালে। দেখার বিরাট ভিড়। দেখতে গেলাম। সন্ধ্যা বেলা দারোগা চাচি বন্দুক ফেরত দিতে আসলেন। বললেন যাবে দিয়া যে কাজ হয় না তারে সে কাজে পাঠানো ঠি ক না। পরে বাঘ শিকারের গল্প শোনালেন।
সাহেব গন্জের বাসা বসবাসের জন্য মস্ত বড়। সরকার থেকে একজন গ্যাজেটেড অফিসারের জন্য নির্দ্দিষ্ট করে রাখা হয়েছিল। তবে এ বাসা নিয়ে আমার তখন যে বয়স তাতে উৎসাহ থেকে চাঞ্চল্যই বেশী ছিল। এমনিতেই আফসার গল্প বলাতে ওস্তাদ। গল্প সাজানোও হতো সুন্দর করে। বলত এমন করে যে আমরা বিশ্বাসের ভর করে ঘুমিয়ে যেতাম। বলত, সওদাগর যাচ্ছে ব্যবসায়ে, নদীর ঘাটে কন্যা পানি কলসিতে ভরসে, কি তার রূপ, সওদাগর সাত চিত্তর আর আট উপর হয়ে অজ্ঞান।
বুঝলাম সওদাগর রূপে তোরে গড়াগড়ি খেয়েছ।
এই যে মুরগি পালার জায়গা, এখানে পালাপলি খেলার সময় লুকিয়েছিলাম। বের হবার সময় দেখি পিঠ আটকে গেছে। এমনত হয়না। প্রায় আধা ঘণ্টা ধরে চিৎকার, চেষ্টা করার পর হঠাৎ দেখি পিঠের আটকানো জায়গা হাল্কা হয়ে খুলে গেছে। এ ধরনের উৎপাত এ বাসাতে নিত্য দিনের মতন ঘটবেই।
দোতালা থেকে নীচে নেমেই ডাইনে মোর দিলে ছয়/সাত ফুট দূরে একটা দরজা, এই দরজাটা দিয়ে আবার ডাইনে মোর দিয়ে পিছনের দরজা দিয়ে পিছনের পুকুর, খেলার মাঠে যাওয়া যায়। সামনে বড়রা ব্যাডমিন্টন খেলে, ভলিবল খেলে আর ছোটরা খেলে পিছনে।
সেদিন স্কুল ছুটি। আমাদের মধ্যে অলক নামে এক বন্ধু আসত বেশ দূর থেকে। আমি দোতালা থেকে শিপু ফুপুর চারটা বাজার পাশ পেতে পিছনের মাঠে যাবার তাগাদায় ঊদ্ধশ্বাসে সিঁড়ি দিয়ে নেমে যেতে যেতে দেখি অলক মুরগীর খোপের সামনে দাড়িয়ে, ওঁকে দেখে দৌড়ের উপর আমি শুধু বললাম, আয়, মাঠে খেললাম,অলক খেলতে যায় নাই তা আর খেয়াল ছিল না।
পরদিন স্কুলে মর্নিং ফল ইন এ হেড মাস্টার স্যার জানালেন গত পরশু রাতে অলক কলেরায় মারা গেছে। ক্লাসে চুপচাপ ভাবলাম পরশু কলেরায় মারা গেছে অলক অথচ মুরগীর ঘরের সামনে গত কাল বিকেল বেলা ওঁকে দাড়িয়ে থাকতে দেখেছি।
[চলবে]
দেশকণ্ঠ/আসো