• সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
    ৯ পৌষ ১৪৩১
    ঢাকা সময়: ২০:৫৪

ব্যাংকে ‘১৩৪ কোটি টাকা’র বিষয়ে মুখ খুললেন মুন্নী সাহা

  • ১৮ ডিসেম্বর, ২০২৪       
  • ১৩
  •       


পথরেখা অনলাইন :  সাংবাদিক মুন্নী সাহার ব্যাংক হিসাবে বেতনের বাইরে জমা হয়েছে ১৩৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে তিনি বিভিন্ন সময় ১২০ কোটি টাকা তুলেছেন। এখন স্থগিত করা তার ব্যাংক হিসাবে স্থিতি আছে মাত্র ১৪ কোটি টাকা। কোথা থেকে এলো এত টাকা? বিষয়টি নিয়ে গত দু’দিন ধরে গণমাধ্যম, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ সবখানেই চলছে আলোচনা-সমালোচনা। অবশেষে এ নিয়ে মুখ খুললেন সাংবাদিক মুন্নী সাহা।

সাংবাদিক মুন্নী সাহা জানালেন এই টাকা কার, তার সঙ্গেই বা এই টাকার সম্পর্ক কি। নিজের ভেরিফাইড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে এই বিষয়ে বিশাল একটি স্ট্যাটাস দেন এই সাংবাদিক।

স্ট্যাটাসে মুন্নী সাহা লিখেছেন, “আজ দেশের অনেকগুলো নিউজ পোর্টাল এবং দৈনিকে আমার অ্যাকাউন্টে কত টাকা তা নিয়ে কিছু মিসলিডিং হেডলাইন দেখে বিস্মিত হয়েছি। অনেকেই আমার অ্যাকাউন্টে ১৩৪ কোটি টাকা— এমন ফটোকার্ড বানিয়ে ক্লিক নিচ্ছেন। ‘মুন্নী সাহার স্বার্থ সংশ্লিষ্ট একাউন্ট’ বলে বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রচার করা হচ্ছে যাতে জনমনে ধারণা হচ্ছে এই একাউন্টগুলো আমার।

কোন অ্যাকাউন্টের নমিনি হলে সেটি ‘স্বার্থ সংশ্লিষ্ট অ্যাকাউন্ট’ বলে এক ধরনের ধোঁয়াশা তৈরি করা যায়, কিন্তু সেই অ্যাকাউন্টগুলো যে আমার নয়, সেটি কৌশলে এড়িয়েও যাওয়া যায়।

প্রথমত, কবির হোসেন তাপস দেশের একজন পুরোনো ব্যবসায়ী। বিগত সুদীর্ঘ ২২ বছর ধরে তিনি বিজ্ঞাপন ও ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টসহ বিভিন্ন ব্যবসায় জড়িত। ওয়ান ব্যাংকের যে অ্যাকাউন্টটির কথা বলা হয়েছে, আমি সেই অ্যাকাউন্টের একজন নমিনি মাত্র; অ্যাকাউন্টের লেনদেনের সাথে আমার কোন সংশ্লিষ্টতা নেই। কবির হোসেন তাপসের কোন ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানে আমি অংশীদার নই, কোন অ্যাকাউন্টের গ্যারান্টারও নই। অ্যাকাউন্ট ওপেন করার সময় পরিবারের কাউকে নমিনি হিসেবে দিতে হয় বলে এই অ্যাকাউন্টে আমার নাম দেয়া আছে মাত্র।

আলোচিত অ্যাকাউন্টটি ২০১৭-তে খোলা হয়েছে এবং বিগত ৭ বছরে এই অ্যাকাউন্টে ১৩৪ কোটি টাকা ‘লেনদেন’ হয়েছে। ‘লেনদেন’ এর মানে আমার বন্ধুরা নিশ্চয়ই বুঝেন, এর মানে হচ্ছে প্রতিটি কার্যাদেশের বিপরীতে সব টাকা এখানে জমা হয় এবং সেই টাকা থেকে বিভিন্ন সাপ্লায়ার, ভেন্ডর, সরকারি কর ও ভ্যাট, কর্মচারীদের বেতন ও অন্যান্য অপারেটিং খরচ পরিশোধ করা হয়। এই হিসাবে ৭ বছরে এই অ্যাকাউন্টে মোট ১৩৪ কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে, যা গড়ে মাসে দেড় কোটি টাকার মতো।

একটি ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান গড়ে মাসে দেড় কোটি টাকার ব্যবসা করা অস্বাভাবিক নয়, এবং সেই টাকার বড় অংশই টাকা বিভিন্ন সাপ্লায়ার, ভেন্ডর, অফিস খরচ, কর্মচারীদের বেতন-ভাতা, ভ্যাট ও কর হিসেবে খরচ হয়, যাকে এখানে ‘লেনদেন’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। কিন্তু খবরে এমনভাবে বিষয়টি প্রচার করা হচ্ছে যাতে মনে হয় ১৩৪ কোটি টাকা একই সাথে এখানে জমা ছিল, যা সত্যের অপলাপ।

কোনো কোনো রিপোর্টে কৌশলে লিখেছে যে, ৫ আগস্টের আগে ১২০ কোটি টাকা তোলা হয়েছে। সেটাও যে লেনদেন, মানে ২২ বছরের বেতন বিল, ভাড়া, খরচ সবকিছু বাবদ; ২২ বছরের প্রতি মাসে মাসে হিসেবে তোলা সেটা এড়িয়ে, শুধুমাত্র ভুল বার্তা দেয়ার জন্য করা হয়েছে; সেটা আশ্চর্য হয়ে লক্ষ্য করেছি।

উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, আমি যতদূর জানি, কবির হোসেন তাপসের প্রতিষ্ঠানগুলোর নামে ব্যাংক ঋণগুলো নিয়মিত আছে। আলোচ্য ব্যাংকটি একটি প্রাইভেট ব্যাংক যারা নিজেদের ব্যবসায়িক স্বার্থ অক্ষুন্ন রেখে বিভিন্ন সময়ে এই ব্যাংক ঋণগুলোর মেয়াদ ও কিস্তি সমন্বয় করে থাকে, যেটি খুবই স্বাভাবিক একটি প্রক্রিয়া। কবির হোসেন তাপসের কোন খেলাপি ঋণ নেই এবং বর্তমান ঋণগুলোও খেলাপি হওয়ার আশু কোন সম্ভাবনা আছে বলে মনে হয় না।

বাংলাদেশ ব্যাংক ইন্টিলেজেন্স ইউনিট যে কারোরই হিসাব চাইতে পারেন। সেই তালিকায় সাংবাদিক হিসেবে অনেকের সাথে আমার নাম ছিল এবং কর্তৃপক্ষ দক্ষতা ও নিষ্ঠার সাথে অনুসন্ধান করেছে বলে আমার বিশ্বাস।

একজন সংবাদকর্মী হিসেবে মনে করি, বাংলাদেশের যে কোনো ব্যবসায়ীর দীর্ঘ ২২ বছরের ব্যবসায়, মোট লেনদেন ১৩৪ কোটি টাকা এবং সঞ্চয় ১৪ কোটি টাকা, কোনো গুরুত্ব বহন করে না। দুর্ভাগ্য হচ্ছে, শুধুমাত্র আমার নামটি নমিনিতে ব্যবহার করায় একজন ব্যবসায়ী সামাজিক হ্যারাসমেন্টের শিকার হয়েছেন, এখনও তার লেনদেন ব্যাহত হচ্ছে।

আমি ঘটনাটিকে বা আমাকে নিয়ে যা যা ঘটছে, তা blessings in disguised হিসেবে গ্রহণ করছি। যদিও আমাকে স্বৈরাচারের দোসর হিসেবে ট্যাগ দিয়ে মামলা দেয়া হয়েছে, গত ১৪/১৫ বছর ধরেই সোশ্যাল মিডিয়ায় আমাকে নিয়ে যে অপপ্রচার চালানো হয়েছে, তার পুরোটাই যে ভুল, তা অন্তত এ ধরনের ইনভেস্টিগেশনে প্রমাণিত হলো।

বিগত ফ্যদিবাদী সরকারের দোসর হিসেবে ট্যাগ দিলেও গত ১০ বছর আমি এবং আমার মত আরো দুয়েকজন সেলিব্রিটি সাংবাদিক সরকারি অনুষ্ঠান, প্রধানমন্ত্রীর প্রেস কনফারেন্স কাভার করার তালিকায় নিষিদ্ধ ছিলাম। ‘এক টাকার খবর’ নামের অনলাইনের অনুমতিপত্রও সাবেক তথ্যমন্ত্রী দেন নাই। সাংবাদিক হিসেবে কোনো সরকারি পদপদবী সুযোগও আমাকে নিতে হয়নি বলে আমি গর্বিত।

প্রধানমন্ত্রীর ইন্টারভিউ বা সালমান এফ রহমানের মুখের ওপর কড়া প্রশ্ন করায় নানান সময় আমাকে যে ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে, সেটা আমি সাংবাদিকতার শক্তিই মনে করি।

সাহা পরিবারে জন্ম বলে আমাকে ভারতের দালাল বলতে মুখিয়ে থাকা মানুষগুলো অন্তত এই সরকারের স্বচ্ছ অনুসন্ধান থেকে নিশ্চয়ই বুঝতে পেরেছেন কতটা অন্ধত্ব নিয়ে আমার ওপর অবিচার  করা হয়েছে! যেটা গত ১৫/১৬ বছর ধরেই আমাকে সহ্য করতে হয়েছে। বিগত সরকারের সময় আমি বারবার এসব মিথ্যাচারের ব্যাপারে, সোশ্যাল মিডিয়ায় হ্যারাসমেন্টের ব্যাপারে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য অনুরোধ করেও ফল পাইনি। বরং এই সরকারের স্বচ্ছতার প্রক্রিয়ায় বিষয়গুলো তদন্ত হওয়াতে আমি ব্যক্তিগতভাবে স্বস্তি বোধ করছি, কিন্তু আমার সহকর্মীদের কেউ কেউ যেভাবে তথ্যগুলোকে টুইস্ট করে ফায়দা নিতে চাচ্ছেন, তা দুর্ভাগ্যজনক।

রিপোর্টে, আমার সাথে জড়িয়ে কবীর হোসেন তাপসের অ্যাকাউন্টে ১৪ কোটি টাকার স্থিতির খবর যারা দিয়েছেন তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা। যারা ভুল ফটোকার্ড করে, ‘মুন্নী সাহার অ্যাকাউন্টে ১৩৪ কোটি টাকা’ লিখলেন, তাদের প্রতি দোয়া রইলো। যেন তারা বিভ্রান্তিমূলক হেডলাইন সাংবাদিকতা থেকে নিয়মের সাংবাদিকতা সম্মানের সাথে চর্চা করতে পারেন।”

প্রসঙ্গত, মুন্নী সাহা ও তার স্বামী কবির হোসেন তাপস এবং তাদের মালিকানাধীন এমএস প্রমোশনের ব্যাংক হিসাবে এসব অর্থ পেয়েছে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)।
পথরেখা/এআর

 

  মন্তব্য করুন
×

পথরেখা : আমাদের কথা

আমাদের পোর্টালের নাম— pathorekha.com; পথরোখা একটি অনলাইন নিউজ পোর্টাল। আমরা এই প্রতিষ্ঠানকে প্রতিদিনের সত্য-সংবাদের পথরেখা হিসেবে প্রমাণ করতে চাই। পথরেখা সারাদেশের পাঠকদের জন্য সঠিক ও বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ এবং মতামত প্রকাশ করবে। পথরোখা নিউজ পোর্টাল হিসেবে ২০২৩ সালের জুন মাসে যাত্রা শুরু করলো। অচিরেই পথরেখা অনলাইন মিডিয়া হিসেবে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ে নিবন্ধনের প্রক্রিয়া শুরু করবে। পথরোখা  দেশ কমিউনিকেশনস-এর অঙ্গ প্রতিষ্ঠান।
 
পথরোখা জাতীয় সংবাদের উপর তো বটেই এর সঙ্গে রাজনীতি, আন্তর্জাতিক, খেলাধুলা, কৃষি, বিনোদন, অর্থনীতি, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, তথ্য ও প্রযুক্তিসহ বিভিন্ন বিভাগকেও গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করে। মাল্টিমিডিয়া সাংবাদিকতা এবং চৌকস ফটোগ্রাফিকে বিশেষ বিবেচনায় রাখে।
 
পথরোখা’র সম্পাদক আরিফ সোহেল এই সেক্টরে একজন খুব পরিচিত ব্যক্তিত্ব। সাংবাদিক হিসেবে তার দীর্ঘ ৩০ বছর কর্মজীবনে তিনি দৈনিক বাংলাবাজার পত্রিকা, আজকের কাগজ, রিপোর্ট২৪ ডটকম প্রভৃতি প্রতিষ্ঠানে কাজ করেছেন। এ ছাড়া তিনি সরকারী ক্রীড়া পাক্ষিক ‘ক্রীড়া জগত’ ও লাইফস্টাইল ম্যাগাজিক অপ্সরা নির্বাহী সম্পাদক হিসেবে দীর্ঘদিন কাজ করেছেন। তিনি জনপ্রিয় অনলাইন দেশকণ্ঠের নির্বাহী সম্পাদক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন।
 
পথরেখা দেশের মৌলিক মূল্যবোধ, বিশেষ করে জাতীয় সার্বভৌমত্ব, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতার প্রতি অঙ্গীকারবদ্ধ। এছাড়াও, এটি দেশের নাগরিকের মানবিক ও নাগরিক অধিকারের পক্ষে কথা বলবে। ন্যায়পরায়ণতা, নির্ভুলতা এবং বস্তুনিষ্ঠতা বজায় রাখতে আমরা অঙ্গীকারাবদ্ধ। আমরা বিশ্বাস করি যে জনগণের বিশ্বাসযোগ্যতা আমাদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ। পথরেখা রাজনৈতিক ইস্যুতে নির্দলীয় অবস্থান বজায় রাখবে। একটি নিরপক্ষ অনলাইন হিসেবে আমরা নিজেদের কর্মকাণ্ডে প্রমাণ করার শতভাগ প্রছেষ্টা করব। তবে সঠিক পদ্ধতি অনুসরণ করেও কিছু ভুল হতেই পারে। যা ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ রাখছি সব মহলেই। সততা পথে অবিচল; আলোর পথে অবিরাম যাত্রায় আমাদের পাশে থাকুন; আমরা থাকব আপনাদের পাশে।
 
উল্লেখ্য, পথরেখা হিসেবে একটি প্রকাশনী দীর্ঘদিন থেকে প্রকাশিত হয়ে আসছে। এবার উদ্যোগ নেওয়া হলো অনলাইন অনলাইন নিউজ পোর্টাল হিসেবে প্রকাশ করার।