দেশকন্ঠ প্রতিবেদন : সরকারের নানা পদক্ষেপ- প্রজনন মৌসুমে মা ইলিশ রক্ষা, জাটকা রক্ষাসহ সুন্দর ব্যবস্থাপনায় সমুদ্রে বেড়েছে ইলিশসহ সব ধরনের মাছের উৎপাদন। গত অর্থবছরের তুলনায় এবছরে ইলিশের পরিমাণ বেড়েছে দ্বিগুণ। রাজস্ব পাওয়া গেছে গতবছরের চেয়ে কোটি টাকা বেশি।
বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রর ব্যবস্থাপক মির রাশেদুল ইসলাম জানান, পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে ২০২০-২১ অর্থবছরে ১ হাজার ১৫২ দশমিক ৫৬ টন ইলিশ ও ১ হাজার ৫৮১ দশমিক ৩৬ টন সামুদ্রিক নানা প্রজাতির মাছ বিক্রি হয়েছে। আর ২০২১-২২ অর্থবছরে ২ হাজার ৪৭৫ দশমিক ৯৩ টন ইলিশ ও ২ হাজার ৩২৪ দশমিক ২১ টন সামুদ্রিক নানা প্রজাতির মাছ বিক্রি হয়েছে অবতরণ কেন্দ্রটিতে। বিক্রি হওয়া মাছের মূল্য থেকে শতকরা ১ টাকা ২৫ পয়সা হারে রাজস্ব আদায় করায় ২০২০-২১ অর্থবছরে রাজস্ব আদায় ছিলো ৯৯ লাখ ৯৬ হাজার ৬৫৬ টাকা। ২০২১-২২ অর্থবছরে রাজস্ব আদায় হয়েছে ১ কোটি ৯২ লাখ ৯২ হাজার ৩২৯ টাকা। হিসেব মতে এক বছরের ব্যবধানে বিক্রির উদ্দেশ্যে সমুদ্র ও নদী থেকে শুধু এ মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে ১ হাজার ৩২ দশমিক ৩৭ টন ইলিশ বেশি এসেছে গত অর্থ বছরের থেকে।
বাংলাদেশের মৎস্যজীবী ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি গোলাম মোস্তফা চৌধুরী জানান, গত বছরগুলোর তুলনায় বড় ইলিশ এসেছে অবতরণ কেন্দ্রটিতে।নিষেধাজ্ঞার বাইরে যতটুকু সময় পাওয়া যায় তাতে সমুদ্রে গিয়ে খালি হাতে ফিরতে হয় না জেলেদের। ট্রলার ভর্তি ইলিশ নিয়ে আসতে পারে জেলেরা। আর সে ইলিশের ৮০ শতাংশই বড় সাইজের। মৎস্য ও প্রাণিস¤পদ মন্ত্রণালয় এবং মৎস্য অধিদপ্তর সূত্র মতে, জেলেদের জীবনমান উন্নয়ন এবং উপকূলীয় ও সামুদ্রিক মৎস্য স¤পদের কাংখিত উন্নয়নে ‘বিশ্বব্যাংকের সহযোগিতায় সাসটেইনেবল কোস্টাল অ্যান্ড মেরিন ফিশারিজ প্রজেক্ট ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক বৃহৎ প্রকল্পের মাধ্যমে জেলেদের বিকল্প কর্মসংস্থানের উপকরণ বিতরণ, অবকাঠামো উন্নয়ন ও প্রশিক্ষণ দিয়ে দক্ষতা উন্নয়নের মাধ্যমে দারিদ্র্য হ্রাস করা হবে। এ ছাড়া ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধি এবং এ স¤পদের উন্নয়ন টেকসই করার লক্ষে ইলিশ স¤পদ উন্নয়ন ও ব্যস্থাপনা প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে মৎস্য অধিদপ্তর।
পাথরঘাটার সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা জয়ন্ত কুমার অপু জানান, এখন প্রজনন মৌসুমে মা ইলিশ সঠিকভাবে ডিম ছাড়তে পারে। ডিম থেকে জাটকায় রূপান্তরিত ইলিশকে রক্ষায় পালন করা হয় জাটকা সংরক্ষণ সপ্তাহ, ৬ মাসের নিষেধাজ্ঞা দিয়ে রক্ষা করা হয় জাটকা। জাটকা রক্ষা পাওয়ায় আজ ইলিশের উৎপাদন বেড়েছে। এছাড়াও ৬৫ দিনের জন্য সমুদ্রে দেয়া নিষেধাজ্ঞায় বাড়ে সব ধরনের মাছ। আগামী কয়েক বছরে সামুদ্রিক মাছের উৎপাদন আরও কয়েকগুন বাড়বে বলেও দাবি করেন তিনি।
বরগুনা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা বিশ্বজিৎ কুমার দেব জানান, জাটকা ও ইলিশ রক্ষায় সর্বসাধারণকে স¤পৃক্ত করার জন্য বিভিন্ন ধরনের জনসচেতনতামূলক কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হয়েছে। দেশের জেলেরা সরকারের দেয়া আইন মেনে চলছে। ইলিশের উৎপাদন বাড়াতে জাটকা ও প্রজনন মৌসুমে ইলিশ ধরা নিষিদ্ধ, অভয়াশ্রম, জাটকা সংরক্ষণ সপ্তাহ পালন, সাগরে ৬৫ দিন মাছ ধরা নিষিদ্ধ, বিশেষ কম্বিং অপারেশনসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ রয়েছে সরকারের। প্রধান প্রজনন মৌসুমে ইলিশ আহরণ এবং জাটকা ধরা নিষিদ্ধ সময়ে উপকূলীয় জেলেদের জন্য ভিজিএফের আওতায় খাদ্য সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের সময়োপযোগী ও ফলপ্রসূ পদক্ষেপের কারণে দেশব্যাপী ইলিশের উৎপাদন উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে ইলিশ আহরণের পরিমাণ ২০০৮-০৯ অর্থ বছরের ২ দশমিক ৯৯ লাখ টন থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ২০২০-২১ অর্থ বছরে ৫ দশমিক ৬৫ লাখ টনে উন্নীত হয়েছে। বিশ্বের মোট উৎপাদিত ইলিশের ৮০ শতাংশের বেশি আহরিত হয় এ দেশের সাগর, নদ-নদী থেকে।
দেশকন্ঠ/রাসু