দেশকন্ঠ ডেস্ক : বাংলাদেশের প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সঙ্গে সংযুক্ত হয়ে কাজ করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব টেকনোলোজি গৌহাটির (আইআইটিজি) পরিচালক অধ্যাপক ড. টিজি সীতারাম। তিনি বলেন, এর আগে বাংলাদেশে বুয়েটে সফর করেছি আমি। সে সময় এ বিষয়ে আগ্রহ প্রকাশ করেছিলাম। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা আর হয়ে ওঠেনি। কেননা এর জন্য নিরবচ্ছিন্ন যোগাযোগ প্রয়োজন।
সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের এই অধ্যাপক জানান, বাংলাদেশ তথ্য-প্রযুক্তি খাতে বেশ এগিয়ে যাচ্ছে। পরস্পরকে সহায়তার মাধ্যমে সামনে এগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। বাংলাদেশে তথ্য-প্রযুক্তি বিষয়ক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আমাদের আইআইটি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো একত্রে কোলাবোরেশন করতে পারে। এ ক্ষেত্রে মাস্টার্স বা পিএইচডি প্রোগ্রামসহ আরও বেশ কিছু কার্যক্রম পরিচালনা করা যায়।
ভারতের আইআইটি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে রেগুলার অনার্স কোর্সে বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা ভর্তি হতে পারবে কি না জানতে চাইলে আইআইটিজি পরিচালক বলেন, আসলে প্রক্রিয়া মেনে অনার্স রেগুলার কোর্সে ভর্তি হওয়া বেশ কঠিন। কেননা আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর গুচ্ছ পরীক্ষা হয় যেখানে একটি সিটের জন্য অনেক শিক্ষার্থী পরীক্ষা দেয়। আর এটি শুধু লিখিত পরীক্ষা নয়, ব্যবহারিক পরীক্ষাও থাকে। এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে ভর্তি হওয়া বেশ কঠিন। তবে আমাদের কিছু ‘স্টুডেন্ট এক্সচেঞ্জ’ কার্যক্রম রয়েছে। আর এ কারণে আমি বলেছি দুই দেশের প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে এমওইউয়ের কথা। সম্প্রতি বাংলাদেশ থেকে বেশ কিছু সরকারি কর্মকর্তা গৌহাটির এই আইআইটি কেন্দ্রে এসে সাইবার নিরাপত্তা বিষয়ক উচ্চতর প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছে। বাংলাদেশে সাইবার নিরাপত্তা খাত নিয়ে জ্ঞান আহরণ এবং পরস্পরের জ্ঞান ও সীমাবদ্ধতাগুলো যাচাইয়ের মাধ্যমে নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করা সম্ভব বলে মনে করা হচ্ছে।
উল্লেখ্য, ভারতে মোট ২৩টি আইআইটি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। প্রতিবছর এই বিশ্ববিদ্যালয়গুলো থেকে অসংখ্য আন্তর্জাতিক মানের প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান তাদের সিইও বা উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তা নিয়োগ দিচ্ছে। এ ছাড়াও এই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সঙ্গে কোলাবোরেশন রয়েছে স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের যোগাযোগ, যার কল্যাণে স্থানীয় শিক্ষার্থীরা এই প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে পাস করার পরপর চাকরি পেয়ে যান। আইআইটিজি পরিচালক জানান, সিইও বা উচ্চ পর্যায়ে কর্মকর্তা হিসেবে যোগ দান ছাড়াও এই বিশ্ববিদ্যালয়গুলো থেকে নতুন স্টার্টআপ শুরু করেছে এমন প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা অনেক।
আইআইটিজি সরেজমিন ঘুরে এসে দেখা যায়, এখানে বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে রয়েছে অসংখ্য ওয়ার্কশপ। সেখানে কাজ করছে শিক্ষার্থীরা। এ বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে ওয়ার্কশপে কর্মরত এক শিক্ষক জানান, আসলে যেকোনো মডেল বা নতুন কিছু তৈরির ক্ষেত্রে তা কতটা বাস্তবসম্মত হবে সেটা থাকে মূল প্রশ্ন। থিওরি দিয়ে আপনি তো টাইম ট্রাভেল করতে পারছেন, কিন্তু বাস্তবে এটি সম্ভব নয়। শিক্ষার্থীরা যেন তাদের প্রকল্পগুলো বাস্তবসম্মতভাবে তৈরি করতে পারে, এ জন্য এই ওয়ার্কশপগুলোতে তাদের পরিকল্পিত আইটি পণ্যটি নিজেদের তৈরি করতে হয়। আর এভাবেই ধীরে ধীরে তারা গড়ে ওঠে ভবিষ্যতের জন্য।
আইআইটিজি বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান তাদের গবেষণাগারগুলো। এখানে চিকিৎসাশাস্ত্র থেকে শুরু করে কৃষি ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের জন্যও গবেষণা কাজ পরিচালনা করছে পিএইচডি শিক্ষার্থীরা। তাদের সঙ্গে রয়েছে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। সম্প্রতি মানুষের হাঁটার ওপর নির্ভর করে তার শারীরিক ত্রুটিগুলো বের করার জন্য একটি গবেষণা কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। এ ছাড়াও গবেষণা হচ্ছে জৈব পলিথিন, বিকল্প জ্বালানি, ড্রোন, এআইসহ আরও বেশ কিছু বিষয় নিয়ে।
শিক্ষার্থীদের নিজেদের লেখাপড়ার বাইরেও রয়েছে বেশ কিছু ক্লাব কার্যক্রম। বিষয়টি শিক্ষক-শিক্ষার্থী মিলনায়তনের মতো। রয়েছে আর্টস ক্লাব, ড্যান্স ক্লাব, রোবটিকস ক্লাব এমন আরও বেশ কিছু কার্যক্রম। আছে স্টার্টআপগুলোর জন্য পৃথক ক্লাব কার্যক্রম যেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ভিত্তিক স্টার্টআপগুলোকে প্রশিক্ষণ, পরামর্শ এবং সহায়তা প্রদান করা হয়। স্টার্টআপ কার্যক্রমের বিষয়টি আলাদা করে না বললেই নয়। কেননা এই ক্লাবের মাধ্যমে অন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সঙ্গে স্টার্টআপ বিষয় প্রতিযোগিতা এবং বিভিন্ন সম্মেলন ও প্রশিক্ষণ আয়োজন করা হয়, যা বিশ্ববিদ্যালয়ভিত্তিক স্টার্টআপ ইকোসিস্টেম তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
দেশকন্ঠ/রাসু