দেশকন্ঠ প্রতিবেদন : বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটির (বিআরটিএ) নিয়মিত অংশীজন সভায় গণপরিবহনে ভাড়া নৈরাজ্য, বিআরটিএ অফিসে গ্রাহক ভোগান্তি দূর করতে সুনির্দিষ্ট চারটি প্রস্তাব দিয়েছে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি। বুধবার (১৭ আগস্ট) বিকেলে বিআরটিএ বনানী কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত অংশীজন সভায় এই প্রস্তাব দেওয়া হয়। সন্ধ্যায় বিষয়টি ঢাকা পোস্টকে নিশ্চিত করেছেন যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী।
বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির প্রস্তাবগুলো হচ্ছে—
ক) ঢাকার গণপরিবহনে বাসভাড়ায় নৈরাজ্য চলছে। ৯০ শতাংশ বাসে কোনো ভাড়ার তালিকা নেই। যার কাছে যেমন খুশি তেমন ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। একই রুটের একেক বাসে একেক ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। ৯৫ শতাংশ বাস বিআরটিএ নির্ধারিত রুট পারমিটের শর্ত অনুয়ায়ী চলছে না। কোনো বাস সরকার নির্ধারিত ভাড়ার তালিকা মানছে না। এমন নৈরাজ্য বন্ধে বিআরটিএ মোবাইল কোর্টের অভিযান চোর-পুলিশ খেলার মতো। অভিযানে অবস্থার কোনো উন্নতি হচ্ছে না। যে ব্র্যান্ডের বা কোম্পানির বাসে অভিযান হলো, জরিমানা করা হলো অভিযানের পর ভাড়া কতো কমলো, তা পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জাতির সামনে উপস্থাপন করতে হবে। অতিরিক্ত ভাড়া আদায় বন্ধ করতে বাধ্য করতে হবে। ভাড়ার তালিকা যাত্রী, মালিক, শ্রমিক, চালক সকলে যাতে বুঝতে পারে এভাবে ডিজিটাল ব্যানারে বড় করে বাসের ভেতরে লাগাতে হবে। ওয়েবিল বন্ধ করে পজ মেশিন বা ডিজিটাল পাস দিয়ে ভাড়া আদায় করতে হবে। একই সঙ্গে, বাসের ভাড়া বৃদ্ধির সাথে সাথে অটোটেম্পু, হিউম্যান হলারসহ সকল পরিবহনের ভাড়া বেড়ে যায়। সরকার নির্ধারিত ভাড়ার তালিকা না থাকায় যাত্রীরা প্রতিকার পায় না। তাই সারা দেশের অটোটেম্পু ও হিউম্যান হলারের ভাড়া নির্ধারণ করতে হবে।
খ) সারা দেশে বিআরটিএ অফিসে গাড়ি নিবন্ধন বাড়ছে। অফিসগুলোতে গাড়ির ফাইলের নথি সংরক্ষণ করা দুরূহ হয়ে পড়েছে। কোথাও কোথাও গাড়ির নিবন্ধন ফাইল বৃষ্টিতে ভিজে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ফলে গ্রাহক মালিকানা পরিবর্তন করতে এলে বছরের পর বছর নথি পাচ্ছে না। গাড়ির নিবন্ধনের সময়ে মূল নথির সাথে একটি ফটোকপি বা ডুপ্লিকেট কপি জমা দিতে হবে, তা সংশ্লিষ্ট শাখার কর্মকর্তাদের সকলের স্বাক্ষরিত সত্যায়িত হবে। পরে যে কোনো সময়ে নাম পরিবর্তন করতে গেলে মূল নথি পাওয়া না গেলে ডুপ্লিকেট কপি দিয়ে নাম পরিবর্তন করার ব্যবস্থা করতে হবে।
গ) গ্রাহক সেবার মান বাড়ানোর পাশাপাশি বিআরটিএকে দালাল মুক্ত করতে সারা দেশের সকল বিআরটিএ সার্কেল অফিসে হেল্পডেস্ক চালু করতে হবে। গ্রাহকদের ফরম পূরণ করে দেওয়া, বিভিন্ন সেবার ফি সম্পর্কে হিসাব করে দেওয়া, গ্রাহকদের কাজে সহযোগিতা করা ইত্যাদি তারা সম্পন্ন করে দেবে। এখন প্রতিটি সার্কেলে একজন উপ-পরিচালক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তিনি এ ডেস্কে বসে সরাসরি গ্রাহকদের সাথে কথা বলবেন এবং গ্রাহকদের কাজটি মনিটরিং করবেন।
ঘ) বিআরটিএতে ১২ লাখ ড্রাইভিং লাইসেন্স আটকে আছে ২০১৬ সাল থেকে। একটি পেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্সের বয়স মাত্র ৫ বছর। বিআরটিএ এখন আটকে পড়া লাইসেন্স প্রিন্ট শুরু করেছে। অথচ ২০১৬, ২০১৭ ও ২০১৮ সালের ড্রাইভিং লাইসেন্সগুলোর মেয়াদ ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে। তাই মেয়াদোত্তীর্ণ এসব লাইসেন্স প্রিন্ট করে ঠিকাদারকে টাকা না দিয়ে, এসব লাইসেন্স নবায়ন করে দিতে হবে। অংশীজন সভায় বিআরটিএ’র চেয়ারম্যান নুর মোহাম্মদ মজুমদারসহ বিআরটিএ’র অন্যান্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
দেশকন্ঠ/অআ