দেশকন্ঠ প্রতিবেদন : ভাড়া বাড়ানোর দাবিতে রাজশাহী শহরে আন্দোলন করছেন ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার (ছয় আসনবিশিষ্ট) চালকরা। তবে ব্যাটারিচালিত দুই আসনের অটোরিকশাগুলো চলছে। শহরে যাতায়াতের মূল মাধ্যম ছয় আসনের অটোরিকশা চলাচল বন্ধ থাকায় বিপাকে পড়েছেন যাত্রীরা। এ সুযোগে শহরে নেমেছে ঐতিহ্যবাহী টমটম গাড়ি। নগরীর বিভিন্ন রাস্তায় চলাচল করছে এসব টমটম। যদিও ভাড়া একটু বেশি। কিন্তু বেশি ভাড়ায়ও মানুষ খুশি মনে চড়ছেন টমটমে। গন্তব্যে পৌঁছানোর পাশাপাশি টমটমে চড়ার বাড়তি আনন্দ উপভোগ করছেন যাত্রীরা। একসময় রাজশাহীর মানুষের যাতায়াতের প্রধান বাহন ছিল টমটম। তাই ‘টমটমের শহর’ নামেই পরিচিতি পায় পদ্মাপাড়ের এই শহর। তবে কালের বিবর্তনে রাজশাহীর সেই টমটম এখন বিলুপ্তির পথে।
যান্ত্রিক পরিবহনের কাছে হার মেনেছে টমটম। মাত্র তিনটি টমটম আছে রাজশাহী শহরে। টমটমগুলো চলে শৌখিন ভ্রমণপিপাসুদের নিয়ে। তবে রাজশাহীতে হঠাৎ অটোরিকশা চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় আবারও যাত্রী পরিবহনে ফিরেছে টমটম। সোমবার (২৯ আগস্ট) রাজশাহী নগরীর সাহেববাজার, তালাইমারি, সিঅ্যান্ডবি ও পুলিশ লাইন্সে টমটম চলাচল করতে দেখা গেছে। টমটমে চড়ে তালাইমারি থেকে সাহেববাজার এসেছেন রফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘অটো (অটোরিকশা) নাই। টমটমে চড়েই আসলাম। ভালোই লাগলো। ভাড়া যদিও অটোর চেয়ে বেশি। তবে পুরো রাস্তাটা উপভোগ করেছি। তাই ভাড়া নিয়ে তেমন আক্ষেপ নেই।’ টমটমের আরেক যাত্রী হাসিবুল ইসলাম। তিনিও এসেছেন তালাইমারি থেকে। তিনি বলেন, ‘টমটমে চড়তে পারবো ভাবতেই পারিনি। আমি মজা করে হাত তুলেছিলাম। ভাড়া জানার পর বেশ আগ্রহ নিয়েই গাড়িতে উঠেছি। এই পরিবহনে উঠে বেশ ভালোই লাগছে।’
রাজশাহী নগরীর তালাইমারি এলাকা থেকে যাত্রী নিয়ে টমটম ছুটিয়ে সাহেববাজারে আসেন টমটম চালক মো. আজিবুর রহমান। ৪১ বছর ধরে টমটম চালাচ্ছেন তিনি। তিনি বলেন, ‘একসময় অনেক ঘোড়ার গাড়ি ছিল রাজশাহী নগরীতে। নগরীর বিভিন্ন প্রান্তে ছিল টমটম থামার জায়গা। তবে অটো চলে আসায় এখন আর সেই দিন নেই। এখন বিভিন্ন প্রয়োজনে বা বুকিং দিয়ে শৌখিন ভ্রমণপিপাসুরা এতে যাতায়াত করেন।’ আজিবুর রহমান বলেন, ‘আজ রাজশাহী শহরে অটো চলাচল বন্ধ। তাই শহরে গাড়ি চালাচ্ছি। মানুষ বেশ আগ্রহ সহকারে এটিকে নিয়েছে। ভাড়াও বেশ ভালো পাচ্ছি। তালাইমারি এলাকা থেকে সাহেববাজার আসতে ভাড়া নিয়েছি ২০ টাকা করে।’ আজিবুর রহমানের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, রাজশাহী শহরে এখন মাত্র তিনটি টমটম গাড়ি রয়েছে। সাধারণত নগরীর শ্রীরামপুর টি-বাঁধ এলাকায় এগুলোর চলাচল। শৌখিন মানুষরা এতে করে ঘোরেন। তবে আজ তারা রাস্তায় নেমেছে।
‘একটি ঘোড়া পালতে দৈনিক ৫০০ টাকার মতো খরচ হয়। অথচ ঘোড়ার গাড়ি দিয়ে তেমন আয় নেই। ঐতিহ্য ও বাপ-দাদার স্মৃতি নিয়েই এখনো আমরা টিকে আছি’, যোগ করেন টমটমচালক আজিবুর রহমান। এদিকে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালক-মালিকদের জিম্মি দশা থেকে যাত্রীদের মুক্ত করতে রাজশাহীতে সিটি সার্ভিস বাস চালু করা হয়েছে। সোমবার সকাল থেকে কাটাখালী থেকে কোর্ট স্টেশন রুট, নওদাপাড়া থেকে সাহেববাজার রুট, কাশিয়াডাংগা থেকে রেলগেট রুটসহ বিভিন্ন রুটে চলছে সিটি সার্ভিস বাস।
দেশকন্ঠ/অআ