• সোমবার, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪
    ৮ আশ্বিন ১৪৩১
    ঢাকা সময়: ২১:২৯

২১ বছর ধরে স্কুল বন্ধ এখন বসবাস করছে বেদে পরিবার

  • জাতীয়       
  • ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২২       
  • ১৮৭
  •       
  • ২৮-০৯-২০২২, ০৮:০০:১৭

দেশকন্ঠ প্রতিবেদন : শিক্ষকদের দ্বন্দ্বে দীর্ঘ ২১ বছর ধরে বন্ধ হয়ে আছে একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। দিনে দিনে ধ্বংস হয়ে গেছে ১০ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত ভবন। আগে বিদ্যালয়টির বিভিন্ন কক্ষে মাদক সেবন, জুয়া খেলা চললেও বর্তমানে বেদে সম্প্রদায়ের একটি পরিবার বসবাস করছে। স্থানীয়রা বলছেন, নিজেদের শিক্ষক দাবি করা আটজন ব্যক্তির কারণে বর্তমানে ওই এলাকার কমপক্ষে চার শতাধিক শিশু শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। যার সংখ্যা ২১ বছরে ৮ হাজারের অধিক। ফলে ওই এলাকার নিরক্ষরতার হার অন্য এলাকা থেকে তিনগুণেরও বেশি। বিদ্যালয় চালুর ব্যাপারে গত ২১ বছরেও কার্যকর কোনো উদ্যোগ নিতে পারেনি জেলা ও উপজেলার প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তারা। সঠিক কোনো তথ্যও নেই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে। বরিশাল জেলার বাবুগঞ্জ উপজেলার চাঁদপাশা ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের কোলচর শহীদ আফসার উদ্দিন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ঘটনা এটি। এলাকাবাসীর দাবি, দ্রুত সময়ের মধ্যে বিদ্যালয়টি চালু করে কোলচরের শিশুদের শিক্ষার ব্যবস্থা করা হোক।
 
চাঁদপাশা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান দেলায়ার হোসেন রাঢ়ী বলেন, স্কুলটি বন্ধ থাকায় কোলচরের শিশুরা শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। যারা স্বচ্ছল তারা হয়তো দূরে পাঠিয়ে লেখাপড়া করাতে পারেন, কিন্তু যারা গরিব তাদের ছেলেমেয়েদের লেখাপড়ার কোনো সুযোগ নেই। এখন ওই এলাকায় একটি আশ্রয়ণকেন্দ্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। সেখানেও অসংখ্য শিশু রয়েছে। স্কুলটি যেকোনো উপায়ে চালু হওয়া দরকার। জানা গেছে, ১৯৭৫ সালে মুক্তিযুদ্ধে শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা আফসার উদ্দীনের নামে বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করা হয়। শুরুতে আবদুল করিম হাওলাদার নামে এক ব্যক্তিকে প্রধান শিক্ষক ও অন্য তিনজনকে সহকারী শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়। ওই সময় মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ও আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার আসামি ফ্লাইট সার্জেন্ট ফজলুল হক বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি ছিলেন। কিন্তু ১৯৯০ সালের পর পরিচালনা কমিটি নিয়ে এলাকায় বিভাজন সৃষ্টি হয়। ১৯৯৮ সালে বিদ্যালয়ের অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য এলজিইডি প্রায় ১০ লাখ টাকা ব্যয়ে একটি একতলা ভবন নির্মাণ করে। ভবন তোলার পর স্থানীয় জাফর আলী ও আবদুস ছাত্তার নামে দুই ব্যক্তি পাল্টাপাল্টি কমিটি করে আলাদা আলাদাভাবে চারজন করে মোট ৮ জন শিক্ষক নিয়োগ করেন। দুই পক্ষ পাল্টাপাল্টি নিজেদের শিক্ষক দাবি করায় সেখানে বিশৃঙ্খল অবস্থার সৃষ্টি হয়।
 
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, বিবাদমান দুটি পক্ষের এক পক্ষ এক দিন স্কুলে আসলে অপর পক্ষ পরের দিন এসে স্কুল দখল করতেন। এই নিয়ে শিক্ষকদের বিরুদ্ধে পরস্পর বিরোধী দুটি মামলা হলে ২০০১ সালে স্কুলটির শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। যেহেতু স্কুলটি শুরু থেকেই নিবন্ধিত ছিল, তাই ২০১৩ সালে জাতীয়করণ হয়। কিন্তু বিবাদমান দুটি পক্ষের কারণে সরকারি হওয়ার পরও স্কুলটি চালু করা সম্ভব হয়নি। বিদ্যালয়টি বন্ধ থাকায় প্রায় চার কিলোমিটার হেঁটে গিয়ে অন্য স্কুলে পড়াশুনা করতে হয় কোলচরের কোমলমতি শিশুদের। স্থানীয় বাসিন্দা ফারুক হোসেন বলেন, স্কুলটি বন্ধ থাকায় সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি আমরা। আমার সন্তান আছে কিন্তু স্কুলে পড়াতে তাকে দুই-তিন কিলোমিটার দূরে যেতে হয়। এজন্য প্রতিদিন সে স্কুলে যেতে পারে না। মোহাম্মদ কামাল হোসেন রাঢ়ী নামে আরেক বাসিন্দা বলেন, আমি এই স্কুলে লেখাপড়া করেছি। কিন্তু স্কুলটি এত বছর ধরে স্বার্থান্বেষী দুটি মহলের কারণে বন্ধ হয়ে রয়েছে। সরকারের  উচিত যেকোনো উপায়ে স্কুলটি চালু করা। বাসিন্দা জুয়েল কাজী বলেন, প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমি আবেদন জানাই কোলচরের মানুষের জন্য একটু সদয় হবেন। স্কুলটি আমাদের জন্য খুবই জরুরি। তিনি হস্তক্ষেপ করলে স্কুলটি চালু হতে পারে।
 
ব্যবসায়ী হাসান তালুকদার বলেন, দুই পক্ষ নিজেদের স্বার্থের কারণে স্কুলটি বন্ধ করে দিয়ে এই এলাকার ভবিষ্যৎ নষ্ট করে দিয়েছে। আমি দাবি করছি, সেই দুই পক্ষের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক। কারণ তারা নিজেদের জন্য জাতির ভবিষ্যৎ নষ্ট করছে। স্কুলটির বিষয়ে বাবুগঞ্জ উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে গেলে তিনি বক্তব্য দেননি। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোহন লাল দাস সোমবার (২৬ সেপ্টেম্বর) জানান, স্কুলটি সর্ম্পকে ভালোভাবে জানা নেই। শুধু জানি স্কুলটি বন্ধ রয়েছে। তিনি পরের দিন যোগাযোগ করার জন্য বলেন। মঙ্গলবার (২৭ সেপ্টেম্বর) তার কার্যালয়ে গেলে তিনি কথা বলেননি। তবে সহকারী জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোহাম্মদ মোস্তফা কামাল বলেন, দুই পক্ষের শিক্ষকদের বিবাদের কারণে স্কুলের পাঠদান বন্ধ হয়ে যায়। বন্ধের আগে যাছাই কমিটি চারজন শিক্ষককে নির্বাচিত করেন। এর বিপক্ষে গিয়ে অপরপক্ষ আদালতে মামলা দায়ের করেন। তিনি বলেন, বিবাদমান শিক্ষকদের বাদ দিয়ে অন্য স্কুলের শিক্ষকদের প্রেষণে নিযুক্ত করে স্কুলটি চালুর চেষ্টা করে শিক্ষা অফিস। কিন্তু স্থানীয় ক্ষমতাশালীরা হুমকি দিয়ে নিযুক্ত শিক্ষকদের স্কুলে যেতে দিত না। এ কারণে চূড়ান্তভাবে স্কুলটি বন্ধ হয়ে যায়। এতে করে ওই এলাকার শিক্ষার হার মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
দেশকন্ঠ/অআ

  মন্তব্য করুন
আরও সংবাদ
×

পথরেখা : আমাদের কথা

আমাদের পোর্টালের নাম— pathorekha.com; পথরোখা একটি অনলাইন নিউজ পোর্টাল। আমরা এই প্রতিষ্ঠানকে প্রতিদিনের সত্য-সংবাদের পথরেখা হিসেবে প্রমাণ করতে চাই। পথরেখা সারাদেশের পাঠকদের জন্য সঠিক ও বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ এবং মতামত প্রকাশ করবে। পথরোখা নিউজ পোর্টাল হিসেবে ২০২৩ সালের জুন মাসে যাত্রা শুরু করলো। অচিরেই পথরেখা অনলাইন মিডিয়া হিসেবে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ে নিবন্ধনের প্রক্রিয়া শুরু করবে। পথরোখা  দেশ কমিউনিকেশনস-এর অঙ্গ প্রতিষ্ঠান।
 
পথরোখা জাতীয় সংবাদের উপর তো বটেই এর সঙ্গে রাজনীতি, আন্তর্জাতিক, খেলাধুলা, কৃষি, বিনোদন, অর্থনীতি, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, তথ্য ও প্রযুক্তিসহ বিভিন্ন বিভাগকেও গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করে। মাল্টিমিডিয়া সাংবাদিকতা এবং চৌকস ফটোগ্রাফিকে বিশেষ বিবেচনায় রাখে।
 
পথরোখা’র সম্পাদক আরিফ সোহেল এই সেক্টরে একজন খুব পরিচিত ব্যক্তিত্ব। সাংবাদিক হিসেবে তার দীর্ঘ ৩০ বছর কর্মজীবনে তিনি দৈনিক বাংলাবাজার পত্রিকা, আজকের কাগজ, রিপোর্ট২৪ ডটকম প্রভৃতি প্রতিষ্ঠানে কাজ করেছেন। এ ছাড়া তিনি সরকারী ক্রীড়া পাক্ষিক ‘ক্রীড়া জগত’ ও লাইফস্টাইল ম্যাগাজিক অপ্সরা নির্বাহী সম্পাদক হিসেবে দীর্ঘদিন কাজ করেছেন। তিনি জনপ্রিয় অনলাইন দেশকণ্ঠের নির্বাহী সম্পাদক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন।
 
পথরেখা দেশের মৌলিক মূল্যবোধ, বিশেষ করে জাতীয় সার্বভৌমত্ব, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতার প্রতি অঙ্গীকারবদ্ধ। এছাড়াও, এটি দেশের নাগরিকের মানবিক ও নাগরিক অধিকারের পক্ষে কথা বলবে। ন্যায়পরায়ণতা, নির্ভুলতা এবং বস্তুনিষ্ঠতা বজায় রাখতে আমরা অঙ্গীকারাবদ্ধ। আমরা বিশ্বাস করি যে জনগণের বিশ্বাসযোগ্যতা আমাদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ। পথরেখা রাজনৈতিক ইস্যুতে নির্দলীয় অবস্থান বজায় রাখবে। একটি নিরপক্ষ অনলাইন হিসেবে আমরা নিজেদের কর্মকাণ্ডে প্রমাণ করার শতভাগ প্রছেষ্টা করব। তবে সঠিক পদ্ধতি অনুসরণ করেও কিছু ভুল হতেই পারে। যা ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ রাখছি সব মহলেই। সততা পথে অবিচল; আলোর পথে অবিরাম যাত্রায় আমাদের পাশে থাকুন; আমরা থাকব আপনাদের পাশে।
 
উল্লেখ্য, পথরেখা হিসেবে একটি প্রকাশনী দীর্ঘদিন থেকে প্রকাশিত হয়ে আসছে। এবার উদ্যোগ নেওয়া হলো অনলাইন অনলাইন নিউজ পোর্টাল হিসেবে প্রকাশ করার।