দেশকন্ঠ প্রতিবেদন : হুটহাট চলে যাচ্ছে বিদ্যুৎ। একবার গেলে ফিরে আসে অন্তত এক ঘণ্টা পর। আগে শুধু দিনে লোডশেডিং ছিল। এখন সন্ধ্যা ও মধ্যরাতেও হচ্ছে। ২৪ ঘণ্টায় ৫/৬ বার লোডশেডিং হওয়ায় জনজীবনে ভোগান্তির মাত্রা বেড়েছে। লোডশেডিংয়ে গরম থেকে রেহাই পেতে নগরবাসী ছুটছেন ইলেক্ট্রনিক পণ্যের দোকানগুলোতে। কিনছেন চার্জার ফ্যান, চার্জার লাইট, আইপিএস প্রভৃতি পণ্য। চাহিদার কারণে চার্জার ফ্যান ও আইপিএসের দাম আগের চেয়ে বেড়েছে। বিক্রেতারাও দাম বৃদ্ধির বিষয়টি স্বীকার করছেন। রাজধানীর গুলিস্তানের স্টেডিয়াম মার্কেট, সুন্দরবন স্কয়ার সুপার মার্কেট, নবাবপুর, বংশাল এলাকার মার্কেটগুলোর দোকানে খুচরা ও পাইকারিভাবে চার্জার ফ্যান ও আইপিএস বেশি বিক্রি হচ্ছে। তবে বর্তমানে চাহিদার কারণে ইলেকট্রনিক্সের দোকানের পাশাপাশি অন্যান্য দোকানেও এসব পণ্য বিক্রি করা হচ্ছে। ছোট বা মাঝারি আকারের চার্জার ফ্যান পাওয়া যাচ্ছে ফুটপাতের দোকানগুলোতেও।
বাজার ঘুরে দেখা গেছে, একেকটি চার্জার ফ্যান তিন হাজার থেকে সাত হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ১২ ইঞ্চির চার্জার ফ্যানের দাম তিন হাজার টাকা থেকে শুরু। তবে বাজারে ১৪, ১৬, ১৮ ইঞ্চির চার্জার ফ্যানের চাহিদা বেশি। এ ছাড়া আমদানি করা বড় স্ট্যান্ড-এর চার্জার ফ্যানও বাজারে পাওয়া যায় যেগুলোর দাম ৬ হাজার টাকা থেকে শুরু। লোডশেডিংয়ের কারণে এসব চার্জার ফ্যানের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় দামও বেড়েছে ৫০০ থেকে ২ হাজার টাকা পর্যন্ত। মান ও কোম্পানিভেদে বাজারে বিভিন্ন ধরনের আইপিএস বিক্রি হচ্ছে। এগুলোর দাম ১৬ হাজার থেকে ৬০ হাজার টাকার মধ্যে। তবে কম ক্ষমতাসম্পন্ন কিছু ছোট সাইজের আইপিএসও বাজারে পাওয়া যাচ্ছে যেগুলোর দাম তুলনামূলক কম। তবে সেগুলোর মান নিয়ে অভিযোগ রয়েছে ক্রেতাদের। পাশাপাশি পুরাতন আইপিএস যাদের রয়েছে তারা নতুন করে ব্যাটারি কিনছেন লোডশেডিংয়ের কারণে। ফলে আইপিএসের ব্যাটারির চাহিদাও বেড়েছে।
রাজধানীর গুলশানে চার্জার ফ্যান ও আইপিএসের শোরুম ইউনিক ইলেক্ট্রনিক্সের ম্যানেজার ইমরান আলী বলেন, রাজধানীতে লোডশেডিং শুরু হওয়ার পর থেকে চার্জার ফ্যান সবচেয়ে বেশি বিক্রি হচ্ছে। তবে যাদের সামর্থ্য আছে তারা আইপিএস কিনছেন। আগে যে চার্জার ফ্যান দুই হাজার ৫০০ থেকে তিন হাজার টাকায় বিক্রি করেছি, এখন সেটি তিন হাজার থেকে তিন হাজার ৫০০ টাকায় বিক্রি করছি। দাম আগের চেয়ে ৫০০ থেকে এক হাজার টাকা বেড়েছে। বারবার বিদ্যুৎ চলে যাওয়ার কারণে সবাই একটি করে চার্জার ফ্যান কিনছেন। আমাদের বিক্রি বেড়েছে আগের চেয়ে কয়েক গুণ বেশি। আইপিএস বিক্রির বিষয়ে ইমরান বলেন, সবাই আইপিএস কিনতে পারেন না। যাদের সামর্থ্য আছে তারাই কেবল আইপিএস কিনছেন। তবে কয়েক বছর ধরে আইপিএস খুব একটা বিক্রি হতো না। কারণ লোডশেডিং ছিল না। সেই তুলনায় এখন বেশি বিক্রি হচ্ছে। আমাদের এখানে ২৮ হাজার টাকা দামের একটি আইপিএস বেশি বিক্রি হচ্ছে। এটি ভারতীয় কোম্পানির পণ্য। এটি দিয়ে তিনটি ফ্যান ও পাঁচটি লাইট আড়াই ঘণ্টার বেশি সময় ধরে চলে। এ ছাড়া ১৫ থেকে ৬০ হাজার টাকার বিভিন্ন ব্র্যান্ডের বিভিন্ন মানের আইপিএস আছে। সেগুলোও বিক্রি হচ্ছে। সরাসরি বেচা-কেনার বাইরে অনলাইনেও এখন চার্জার ফ্যান ও আইপিএস বিক্রি বেড়েছে।
ঢাকার কয়েকটি ফুটপাতে ছোট চার্জার ফ্যান বিক্রি করতে দেখা গেছে হকারদের। মালিবাগ এলাকায় ফুটপাতে চার্জার ফ্যান বিক্রি করছিলেন মোবারক হোসেন নামে এক হকার। তিনি বলেন, আমি মূলত ছোট বাচ্চাদের খেলনা বিক্রি করি। যখন থেকে ঢাকায় বিদ্যুৎ চলে যাওয়া শুরু হলো, তখন থেকে ব্যাটারিচালিত ছোট চার্জার ফ্যান বিক্রি করছি। বেচাবিক্রি ভালো। সর্বনিম্ন ২৫০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ১৫০০ টাকা দামের চার্জার ফ্যান তার কাছে আছে বলে জানান মোবারক। রাজধানীর মিরপুরের কাজীপাড়ার বাসিন্দা সোহরাব হোসেন। বেসরকারি এ চাকরিজীবী অফিস শেষে বাসায় ফেরার পথে বাংলামোটর থেকে একটি চার্জার ফ্যান কেনেন। পথ চলতে চলতে কথা হয় তার সঙ্গে। তিনি বলেন, লোডশেডিংয়ে জনজীবন প্রায় অতিষ্ঠ। দিন-রাত মিলিয়ে ছয়-সাতবার বিদ্যুৎ চলে যায়। গরমে খুব কষ্ট হয়, বিশেষ করে যখন রাতে কারেন্ট চলে যায়। তাই একটা ফ্যান কিনলাম বাচ্চাদের জন্য। তিনি বলেন, লোডশেডিংয়ের কারণে চার্জার ফ্যানের দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন অনেকে। ৩২শ টাকার ফ্যান কিনলাম চার হাজার টাকা দিয়ে। যে দোকান থেকে এটি কিনেছি সেখানে আরও অন্তত চারজনকে দেখলাম ফ্যান কিনতে। সবাই আসলে সমস্যায় পড়েছে। এদিকে, ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম ও ফেসবুকের বিভিন্ন ব্যবসায়িক পেজ থেকেও চার্জার ফ্যান বিক্রি করা হচ্ছে। আকার ও মানভেদে বিভিন্ন দামে ক্রেতারা সেখান থেকেও ফ্যান কিনছেন।
দেশকন্ঠ/অআ