দেশকন্ঠ প্রতিবেদন : জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ভূগর্ভস্থ প্রাচীন চিরহিমায়িত অঞ্চলের গলে যাওয়া মানবজাতির জন্য নতুন হুমকি হতে পারে। রাশিয়ার সাইবেরিয়ার চিরহিমায়িত অঞ্চলের বরফের নিচে পাওয়া ভাইরাসকে পুনরুজ্জীবিত করা একদল গবেষক নতুন এই হুমকির তথ্য জানিয়েছেন। এই গবেষকরা প্রায় দুই ডজন ভাইরাস পুনরুজ্জীবিত করেছেন, যার মধ্যে একটি ভাইরাস সাড়ে ৪৮ হাজারের বেশি সময় পরও বরফের নিচে সংক্রামক অবস্থায় পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছেন। ইউরোপীয় গবেষকরা রাশিয়ার সাইবেরিয়ার চিরহিমায়িত অঞ্চলের একটি হ্রদ থেকে সংগৃহীত প্রাচীন নমুনা পরীক্ষা করেছেন। তারা ১৩টি নতুন জীবাণু পুনরুজ্জীবিত এবং এসব জীবাণুর বৈশিষ্ট্য নির্দিষ্ট করেছেন। আর এসব ভাইরাসকে গবেষকরা ‘জম্বি ভাইরাস’ নাম দিয়েছেন। গবেষকরা হিমায়িত মাটিতে আটকে থাকার পর বহু সহস্রাব্দ কাটিয়েও ভাইরাসগুলো সংক্রামক রয়ে গেছে বলে দেখতে পেয়েছেন।
বায়ুমণ্ডলের উষ্ণায়নের কারণে হিমায়িত অঞ্চলের গলিত মিথেনের মতো পূর্বে আটকে থাকা গ্রিনহাউস গ্যাস মুক্ত হয়ে গেলে জলবায়ু পরিবর্তন আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করবে বলে বিজ্ঞানীরা দীর্ঘদিন ধরে সতর্ক করে দিয়ে আসছেন। কিন্তু সুপ্ত জীবাণুর ওপর এর প্রভাব কম বোঝা যায়। রাশিয়া, জার্মানি এবং ফ্রান্সের গবেষক দলটি বলেছে, তারা যেসব ভাইরাস নিয়ে গবেষণা করেছেন, সেগুলোকে পুনরুজ্জীবিত করার জীবতাত্ত্বিক ঝুঁকি ছিল একেবারে নগণ্য। তবে অ্যামিবা জীবাণুকে সংক্রমিত করার সক্ষমতা রয়েছে এসব ভাইরাসের। কিন্তু প্রাণী বা মানুষকে সংক্রমিত করতে পারে এমন একটি ভাইরাসের সম্ভাব্য পুনরুজ্জীবনকে অনেক বেশি আশঙ্কাজনক বলে চিহ্নিত করছেন গবেষকরা। এই ভাইরাসের পুনরুজ্জীবন বাস্তব ঝুঁকি তৈরি করতে পারে বলে গবেষকরা সতর্ক করে দিয়েছেন।
নতুন গবেষণায় এই ভাইরাসের ব্যাপারে বিস্তারিত বিবরণ প্রিপ্রিন্ট পেপারে প্রকাশ করেছেন তারা। তবে এই গবেষণাটি এখনও জীববিজ্ঞানবিষয়ক ওপেন অ্যাকসেস ওয়েবসাইট বায়ো-আর্কাইভের সার্ভারে পিয়ার-রিভিউ করা বাকি রয়েছে। গবেষকরা বলেছেন, প্রাচীন চিরহিমায়িত অঞ্চল গলে যাওয়ার ফলে এসব অজানা ভাইরাসের বিস্তার ঘটতে পারে। তারা বলেছেন, এসব ভাইরাস একবার বাইরের পরিবেশের সংস্পর্শে আসার পর কতক্ষণ সংক্রামক থাকতে পারে এবং উপযুক্ত বাহকের মুখোমুখি ও সংক্রমিত হওয়ার সম্ভাবনা কতটা, তা এখনও অনুমান করা অসম্ভব। গবেষণাটি ‘মধ্যম’ মাত্রার বৈশ্বিক উষ্ণায়নের পরিস্থিতির ওপর ভিত্তি করে পরিচালনা করা হয়েছে; যেখানে ২১০০ সালের মধ্যে বিশ্বব্যাপী তাপমাত্রা গড়ে ২ থেকে ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মতো বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে।
দেশকন্ঠ/অআ