ডোমার(নীলফামারী) প্রতিনিধি : রেলপথমন্ত্রী এ্যাডভোকেট নূরুল ইসলাম সুজন বলেছেন, ‘চিলাহাটি থেকে মঙ্গলা পর্যন্ত রেল পথে আগামী জুন মাসের মধ্যে যোগাযোগ স্থাপিত হবে। মঙ্গলা পোর্ট থেকে ভারত-বাংলাদেশ, নেপাল ভুটানসহ চারটি দেশই চিলাহাটি রেলপথটিকে ব্যবহার করতে পারবে তাদের মালামাল পরিবহন এবং যাত্রি পরিবহনের ক্ষেত্রে। তারই লক্ষ্যে উন্নয়ন কাজ চলমান আছে, আগামী জুন মাসের মধ্যে এসব কাজ সমাপ্ত হবে বলে আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি।’ রবিবার দুপুরে ১৪০ কোটি টাকা ব্যয়ে নীলফামারীর ডোমার উপজেলার চিলাহাটি স্টেশন ও চিলাহাটি-হলদিবাড়ি রেলপথ উন্নয়ন প্রকল্পের পরিদর্শনে এসে তিনি একথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘চিলাহাটি-হলদিবাড়ি অবিভক্ত ভারতের পুরানা রেলপথ। ১৯৬৫ সালে পাকিস্তান-ভারত যুদ্ধের পর এ যোগাযোগ ব্যবস্থাটি বন্ধ হয়। মহান মুক্তিযুদ্ধের পরে দীর্ঘদিন এই রেল যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধই ছিল। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা দ্বিতীয়বারের মতো যখন ক্ষমতায় আসলেন তখন আলাদা রেল মন্ত্রনালয় করার মধ্য দিয়ে আমাদের বাংলাদেশের রেল ব্যবস্থাকে পুণরায় চালু করার কর্মপরিকল্পনা গ্রহন করে আলাদা মন্ত্রনালয় গঠন করেন। আমাদের সঙ্গে অবিভক্ত ভারতে যে আটটি রেল সংযোগ ছিল, পর্যায়ক্রমে সবগুলোর যোগাযোগ স্থাপন, রেলকে প্রত্যেকটি জেলার সঙ্গে সংযোগ স্থাপন, আমাদের যে দুই ধরণের রেল ব্যবস্থা ব্রডগেজ এবং মিটারগেজকে এককেন্দ্রীক করে ব্রডগেজে রূপান্তর করার কাজ হাতে নেন। এসবের অনেকগুলো প্রকল্প আমাদের চলমান আছে। তারই অংশে দর্শনা, বেনাপোল, রহনপুর, বিরোল এবং পঞ্চম চিলাহাটি-হলদিবাড়ি পথও আমাদের দেশের প্রধানমন্ত্রী প্রথমবার মালামাল পরিবহনের জন্য এবং দ্বিতীয়বার মিতালী এক্সপ্রেস যাত্রি পরিবহনের জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেছেন। সে লক্ষে চিলাহাটি রেলস্টেশনটির আমূল পরিবর্তনের জন্য আমরা পরিকল্পনা গ্রহন করেছি। প্রথম পর্যায়ে অনেকগুলো কাজ হয়েছে, তাতে করে রেল যোগাযোগটা হয়েছে, এখন কাজ চলছে রেলস্টেশনের আইকনিক ভবনসহ অন্যান্য উন্নয়নের।’
চিলাহাটি থেকে বর্তমানে ঢাকা চলাচল করছে রাত্রিকালীন একটি আন্তনগর ট্রেন। নীলফামারীসহ উত্তরাঞ্চলের মানুষের দাবি ছিল দিবাকালীন ঢাকাগামী আরেকটি ট্রেন। আগামী জুনের মধ্যে সে দাবি পুরণের আশ্বাস দিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘খুলনার দিক থেকে ট্রেনগুলো পদ্মা সেতু হয়ে চলাচল করানো সম্ভব হলে আগামী জুন মাসের মধ্যে বঙ্গবন্ধু সেতু হয়ে চিলাহাটি-ঢাকা আরেকটি নতুন ট্রেন চালানো সম্ভব হবে।’
তিনি বলেন,‘বঙ্গবন্ধু দ্বিতীয় রেল সেতু ডবল লাইন ডুয়েল গেজ দিয়ে ২৪ সালের আগস্টের মধ্যে আমরা ট্রেন চালাতে পারেবো। পদ্মা সেতু দিয়ে ট্রেন চলাচলের জন্য নতুন ১০০টি ব্রডগেজ যাত্রিবাহি কোচ আমদানীর প্রক্রিয়ায় আছে। ইতিমধ্যে ১৫টি কোচ চট্টগ্রাম বন্দরে এসে পৌঁচেছে, আশা করছি আগামী দুই থেকে তিন মাসের মধ্যে সিংহভাগ কোচ আমরা পেয়ে যাবো। সেই সঙ্গে আগামী জুন মাসে ঢাকা থেকে পদ্মা সেতুরপাড় ভাঙ্গা পর্যন্ত অংশটিতে যোগাযোগ স্থাপন করতে পারবো।’ খুলনা থেকে ফরিদপুর হয়ে পদ্মা সেতু পার হয়ে ঢাকা ট্রেন চলাচল শুরু হলে চাপ কমবে বঙ্গন্ধুর সেতুর ওপর। এসময়ে চিলাহাটি-ঢাকা আরেকটি নতুন ট্রেন চালানো সম্ভব বলে জানান তিনি। মন্ত্রী চিলাহাটি রেলস্টেশনের আইকনিক ভবন, লুপলাইন স্থাপনে জমি অধিগ্রহণ এলাকা পরিদর্শণ শেষে স্থানীয় জমির মালিকদের সাথে মতবিনিময় করেন চিলাহাটি স্টেশনের অতিথিশালায়।
এ সময় নীলফামারী জেলা প্রশাসক পঙ্কজ ঘোষ, পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান, চিলাহাটি-হলদীবাড়ি রেলপথ স্থাপন প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী আব্দুর রহীম ছাড়াও রেলের উর্দ্ধতন কর্মকর্তা এবং ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলে।