• মঙ্গলবার, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪
    ৯ আশ্বিন ১৪৩১
    ঢাকা সময়: ১৯:২৩

বিদায় ২০২২ : স্বাগতম-শুস্বাগতম ২০২৩

  • জাতীয়       
  • ৩১ ডিসেম্বর, ২০২২       
  • ৪৭
  •       
  • ০১-০১-২০২৩, ০০:০৭:০৯

দেশকন্ঠ ডেস্ক : বিদায় ২০২২ সাল। শুস্বাগতম ২০২৩। জীবনখাতার পাতা থেকে আরো একটি বছর গত’র গর্ভে বিলীন হয়ে গেল। কোনো অজুহাতে, কোনো পরিস্থিতিতেই সময় ও স্রোতকে থামিয়ে রাখা যায় না। জীবনের গতিপ্রবাহকে বাঁধ দিয়ে ভবিষ্যৎ স্রোতকে রুদ্ধ করা যায় না। সময় ও স্রোতের মতো জীবনটাও ঠিক তেমনই সতত চলমান। জীবনের শেষ গন্তব্য মৃত্যু। তার আগে সর্বাবস্থায় জীবনের স্পন্দন অনুভব করা যায়। জীবনের শেষবিন্দু মৃত্যু পর্যন্ত পৌঁছানোর আগে জীবনঘড়ি টিক টিক চলতেই থাকে।

২০১৯ থেকেই মানবসভ্যতা এক কঠিন সময় পাড়ি দিয়ে চলেছে। বৈশ্বিক ক্রান্তিকাল। কখনো মহামারি করোনা। লাখ লাখ মানুষের মৃত্যু। করোনার ধাক্কা শেষ হতে না হতেই যুদ্ধের ধাক্কা। রাশিয়া-ইউক্রেন আঞ্চলিক যুদ্ধ। কিন্তু বৈশ্বিক প্রভাব সারা দুনিয়ায়। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কুপ্রভাবে সমগ্র বিশ্ব টালমাটাল। মানুষের স্বপ্ন, ভবিষ্যৎ ভাবনা বোমার আঘাতে, বারুদের গন্ধে সবকিছু ফিকে হয়ে যাচ্ছে। গত ফেব্রুয়ারি মাসে যুদ্ধ শুরু হলেও আজও তার অবসানের কোনো লক্ষণ নেই। কবে ইতি ঘটবে, তাও কারো জানা নেই। এর মধ্যেই জীবন চলছে জীবনের মতো।

বিদায়ী বছরের প্রাপ্তি এবং নতুন বছরের সম্ভাবনা নিয়ে আরো কিছু কথা বলার আগে ইংরেজি নববর্ষ উদযাপনের ইতিহাসটায় সংক্ষেপে একটু চোখ বুলিয়ে নেয়া যেতে পারে। যারা নিউইয়র্কে বসবাস করে, বিশেষভাবে তারা ৩১ ডিসেম্বর পুরোনো বছরকে বিদায় জানিয়ে নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে হাজার হাজার নারী-পুরুষ মধ্যরাতে সমবেত হয় ঐতিহাসিক টাইমস স্কয়ারে। সেখানে রাত ঠিক ১২টা ১ মিনিটে আপেল পতনের দৃশ্য অবলোকন করা আমেরিকার একটি প্রাচীন ঐতিহ্য। নতুন বছরকে স্বাগত জানানো শুরু হয় এই আপেল পতন উৎসবের মধ্য দিয়ে। সমবেত সবাই হাতে হাত ধরে নববর্ষের সংগীত গাইতে গাইতে চোখের পলক না ফেলে দেখতে থাকে আপেল পতন। সেকেন্ডের কাঁটা ১২টা স্পর্শ করার সঙ্গে সঙ্গে হর্ষধ্বনি দিয়ে সবাই ২০২২-কে বিদায় জানিয়ে বরণ করে নেবে ২০২৩-কে। এ সময় নারী-পুরুষ সবাই একে অপরকে আলিঙ্গন করে, চুমু খেয়ে আনন্দ-উল্লাসে মেতে উঠবে। সবাই সবার শুভকামনায় বলে উঠবে ‘হ্যাপি নিউ ইয়ার’। টাইমস স্কয়ারে ট্র্যাডিশনাল আপেল পতনের সেই উদযাপনের এখন প্রস্তুতি চলছে। শীত, তুষারপাত প্রকৃতির সব বৈরিতা উপেক্ষা করে টাইমস স্কয়ার মেতে উঠবে নববর্ষের আনন্দে। কণ্ঠে কণ্ঠে উচ্চারিত হতে থাকবে নতুন বছরের বন্দনা। পুড়বে হাজার হাজার আতশবাজি এবং ঢোলের আওয়াজে কানের পর্দা ফাটার উপক্রম হবে।

রোমান গড ‘জানুস’-এর নামানুসারে ইংরেজি ‘জানুয়ারি’ মাস দিয়ে নতুন বছর শুরু হয়। ‘জানুস’-এর দুটি মুখ। একটি সামনে, একটি পেছনে। মনে হয় সামনের মুখ ভবিষ্যতের, আর পেছনের মুখটি অতীত। মানুষ আসলে অতীতের সব আবর্জনা জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে সামনের সম্ভাবনাকে ধরতে চায়। মানুষ স্বপ্ন দেখে ভবিষ্যতের। কোনো মানুষেরই সব স্বপ্ন-সাধ ফেলে আসা বছরে পূরণ হয় না। অপূর্ণ স্বপ্ন, অপূর্ণ বাসনা-অপ্রাপ্তি সব সে পূরণ করতে চায় ভবিষ্যৎকে সামনে রেখে। অনাগত দিন মানুষকে সতত আশাবাদী করে রাখে।

সে কারণেই নববর্ষ বরণে মানুষের মধ্যে এত উচ্ছ্বাস-উৎসবের আনন্দ। এত রীতিনীতি। দেশে দেশে আচার অনুষ্ঠানে নানা বৈচিত্র্য। ১ জানুয়ারি বিশ্বের অধিকাংশ দেশে নববর্ষ উদযাপিত হলেও সব দেশে উদযাপিত হয় না। অধিকাংশ দেশ যারা ১ জানুয়ারি নববর্ষ উদযাপন করে, তারা মডার্ন গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার মেনে চলে। তবে এর ব্যতিক্রম আছে। ১০ মাসেও বছর আছে। রোমান ক্যালেন্ডারে ১০ মাসে বছর এবং সে বছর শুরু হয় মার্চ থেকে। ১ জানুয়ারি থেকে যে বর্ষ গণনা শুরু হয়, সেটিই বিশ্বের প্রাচীনতম এবং সর্বজনীনভাবে উদযাপিত উৎসব। জুলিয়ান ক্যালেন্ডারেও ১ জানুয়ারি নববর্ষ উদযাপিত হয়।

বিশ্বাস করা হয়, ১৮৭৮ খ্রিষ্টাব্দে লন্ডনের সেন্ট পলস্ ক্যাথেড্রালে ইংরেজি নববর্ষ প্রথম উদযাপিত হয়। ওই সময় সেন্ট পলস্-এ নতুন ঘণ্টা লাগানো হয়। নতুন বছরে মানুষ ওই ঘণ্টার ধ্বনি শুনতে সেখানে সমবেত হলে সেটা উৎসবে রূপ নেয়। তার পর থেকে সেটা উৎসব হিসেবেই উদযাপিত হয়ে আসছে। ইংরেজরা সাধারণত ঘরে তৈরি নানা রকম পাই, কেক দিয়ে নববর্ষের উৎসব উদযাপন করে। অতিথিদেরও সেসব দিয়েই তারা আপ্যায়ন করে থাকে এবং একে অপরকে ‘হ্যাপি নিউ ইয়ার’ বলে সম্বোধন করে। যার অর্থ তাদের কাছে, ‘বছরের সামনের দিনগুলো আনন্দে কাটুক।’

ইংরেজি নববর্ষ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এখন এমন বর্ণাঢ্য রূপ এবং বিশাল কলেবরে উদযাপিত হয় যে, তাদের নিজস্ব নববর্ষের উদযাপনও এর কাছে ম্লান হয়ে যায়। বাংলাদেশেও এর ব্যতিক্রম দেখা যায় না। ইংরেজি নববর্ষের হুল্লোড় ঠেকাতে বাংলাদেশে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে অনেক রকম ব্যবস্থা নিতে হয়। অনেক অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটার কথাও শোনা যায়। প্রবাসেও বাঙালি কমিউনিটিকে প্রতিবার ইংরেজি নববর্ষের উৎসবে মেতে উঠতে দেখা যায়। বিশ্বজুড়ে আমেরিকার সাংস্কৃতিক আধিপত্য যে এখনো অটুট, তা দেশে দেশে ইংরেজি নববর্ষ উদযাপনের আতিশয্য দেখেই অনুভব করা যায়। গ্লোবাল ভিলেজের মোড়ল যুক্তরাষ্ট্র এখনো তার প্রভাব বহাল রেখেছে যেমন, বিশ্বে সাংস্কৃতিক আধিপত্যও যুক্তরাষ্ট্রের হাতেই রয়েছে।

যা হোক, বাংলাদেশ এবার নববর্ষ উদযাপন করছে বিশেষ রাজনৈতিক উত্তাপের মধ্য দিয়ে। ২০২৪-এর জানুয়ারির শুরুতেই জাতীয় সাধারণ নির্বাচন। সেই নির্বাচন ঘিরেই এই উত্তেজনা। বাংলাদেশের মানুষ জানে না, তারা ২০২২-এর মতো ২০২৩-কে বিদায় জানাতে পারবে কি না। বাংলাদেশে একটি প্রবাদ আছে, ‘যায় দিন ভালো, আসে দিন খারাপ।’ আমরা যে দিনটাকে বিদায় জানিয়ে যে দিনকে বরণ করে নিই, সে দিনটি বিদায়ী দিনের চেয়ে ভালো হয় না। অর্থাৎ আমরা ক্রমাগতভাবে খারাপের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। আমরা সবাই সামনে এগিয়ে যেতে চাই। কিন্তু ক্রমাগতভাবে যেন পিছিয়েই যাচ্ছি। যারা আমরা মানুষকে ভালোর প্রতিশ্রুতি দিই, অঙ্গীকার করি, তারাও কেন যেন নিজেদের প্রতিশ্রুতি শেষ পর্যন্ত রক্ষা করার সাফল্য অর্জন করতে পারি না।

কে জানে এই ব্যর্থতার জন্য দায়ী আজকের সময়ে উৎসবও মুনাফার অংশ হয়ে গেছে কি না! এখন সব উৎসবই অর্থনীতিতে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখছে। তাই নির্মল আনন্দের জায়গা নিয়ে নিচ্ছে অর্থনীতি। শত শত কোটি টাকা বিনিয়োগ করছেন ব্যবসায়ীরা মুনাফার আশায়। সে কারণে তাদের উৎসবের চেয়ে বাণিজ্যের দিকে বেশি লক্ষ রাখতে হয়। তবে সবাই প্রত্যাশা করে অর্থনীতি ও বিনোদনের মধ্যে একটা ভারসাম্য রক্ষা পাক। মানুষ আনন্দ লাভ করুক। ব্যবসায়ীরাও বাণিজ্যে লাভবান হোক।

২০২৩-এ মানবতার জয় হোক। জয় হোক মানুষের। পুরোনো কথাই নতুন করে গীত হোক : ‘আয় আয় আয় নতুনের দিন/ বসন্তের ঝরাপাতা ময়লা পুরনো যতো/ দে উড়িয়ে দে পুড়িয়ে, ভেঙেচুরে গুঁড়িয়ে/ মুছে দেরে দুঃখ মলিন।’
দেশকন্ঠ/এআর

  মন্তব্য করুন
আরও সংবাদ
×

পথরেখা : আমাদের কথা

আমাদের পোর্টালের নাম— pathorekha.com; পথরোখা একটি অনলাইন নিউজ পোর্টাল। আমরা এই প্রতিষ্ঠানকে প্রতিদিনের সত্য-সংবাদের পথরেখা হিসেবে প্রমাণ করতে চাই। পথরেখা সারাদেশের পাঠকদের জন্য সঠিক ও বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ এবং মতামত প্রকাশ করবে। পথরোখা নিউজ পোর্টাল হিসেবে ২০২৩ সালের জুন মাসে যাত্রা শুরু করলো। অচিরেই পথরেখা অনলাইন মিডিয়া হিসেবে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ে নিবন্ধনের প্রক্রিয়া শুরু করবে। পথরোখা  দেশ কমিউনিকেশনস-এর অঙ্গ প্রতিষ্ঠান।
 
পথরোখা জাতীয় সংবাদের উপর তো বটেই এর সঙ্গে রাজনীতি, আন্তর্জাতিক, খেলাধুলা, কৃষি, বিনোদন, অর্থনীতি, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, তথ্য ও প্রযুক্তিসহ বিভিন্ন বিভাগকেও গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করে। মাল্টিমিডিয়া সাংবাদিকতা এবং চৌকস ফটোগ্রাফিকে বিশেষ বিবেচনায় রাখে।
 
পথরোখা’র সম্পাদক আরিফ সোহেল এই সেক্টরে একজন খুব পরিচিত ব্যক্তিত্ব। সাংবাদিক হিসেবে তার দীর্ঘ ৩০ বছর কর্মজীবনে তিনি দৈনিক বাংলাবাজার পত্রিকা, আজকের কাগজ, রিপোর্ট২৪ ডটকম প্রভৃতি প্রতিষ্ঠানে কাজ করেছেন। এ ছাড়া তিনি সরকারী ক্রীড়া পাক্ষিক ‘ক্রীড়া জগত’ ও লাইফস্টাইল ম্যাগাজিক অপ্সরা নির্বাহী সম্পাদক হিসেবে দীর্ঘদিন কাজ করেছেন। তিনি জনপ্রিয় অনলাইন দেশকণ্ঠের নির্বাহী সম্পাদক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন।
 
পথরেখা দেশের মৌলিক মূল্যবোধ, বিশেষ করে জাতীয় সার্বভৌমত্ব, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতার প্রতি অঙ্গীকারবদ্ধ। এছাড়াও, এটি দেশের নাগরিকের মানবিক ও নাগরিক অধিকারের পক্ষে কথা বলবে। ন্যায়পরায়ণতা, নির্ভুলতা এবং বস্তুনিষ্ঠতা বজায় রাখতে আমরা অঙ্গীকারাবদ্ধ। আমরা বিশ্বাস করি যে জনগণের বিশ্বাসযোগ্যতা আমাদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ। পথরেখা রাজনৈতিক ইস্যুতে নির্দলীয় অবস্থান বজায় রাখবে। একটি নিরপক্ষ অনলাইন হিসেবে আমরা নিজেদের কর্মকাণ্ডে প্রমাণ করার শতভাগ প্রছেষ্টা করব। তবে সঠিক পদ্ধতি অনুসরণ করেও কিছু ভুল হতেই পারে। যা ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ রাখছি সব মহলেই। সততা পথে অবিচল; আলোর পথে অবিরাম যাত্রায় আমাদের পাশে থাকুন; আমরা থাকব আপনাদের পাশে।
 
উল্লেখ্য, পথরেখা হিসেবে একটি প্রকাশনী দীর্ঘদিন থেকে প্রকাশিত হয়ে আসছে। এবার উদ্যোগ নেওয়া হলো অনলাইন অনলাইন নিউজ পোর্টাল হিসেবে প্রকাশ করার।