মোয়াজ্জেম হোসেন রাসেল, কালীগঞ্জ (গাজীপুর) প্রতিনিধি : গাজীপুরের কালীগঞ্জে নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে খোলা বাজারে জ্বালানী তেল বিক্রি করছে অসাধু ব্যবসায়ীরা। উপজেলার প্রতিটি হাট বাজারে যত্রতত্র বোতলে ভরে পেট্রোল, ডিজেল ও অকটেনসহ দাহ্য পদার্থ বিক্রি করায় যে কোন সময় ঘটতে পারে মারাত্বক দূর্ঘটনা। প্রশাসনের নাকের ডগায় ঝুঁকিপূর্ণ এসব ব্যবসা চললেও দেখার যেন কেউ নেই। তবে লাইসেন্সবিহীন জ্বালানী তেলের অবৈধ ব্যবসা বন্ধে অভিযান চালানোর আশ্বাস উপজেলা প্রশাসনের।
অনুসন্ধানে জানা যায়, উপজেলার একটি পৌরসভা ও সাতটি ইউনিয়নের প্রায় শতাধিক দোকানে নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে জ্বালানী তেল বিক্রি করছে। বিভিন্ন দোকানে দুই লিটার, এক লিটার অথবা আধা লিটারের প্লাষ্টিকের বোতলে পেট্রল, অকেটন ও ডিজেল ভর্তি করে পসরা সাজিয়ে রাখা হয়েছে। যে কেউ ইচ্ছে করলেই এসব জ্বালানী তেল ক্রয় করতে পারে। অথচ জ্বালানী তেল বিক্রির জন্য আধা পাকা ঘর, অগ্নি নির্বাপক সিলিন্ডার, মজবুত ও ঝুঁকিমুক্ত সংরক্ষণাগার, ফায়ার সার্ভিস, পরিবেশ অধিদপ্তর, বিস্ফোরকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর, জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের অনুমতিপত্র এবং ট্রেড লাইসেন্স থাকা বাধ্যতামূলক। কিন্তু অসাধু ব্যবসায়ীরা এসব লাইসেন্সের তোয়াক্কা না করে শুধুমাত্র ট্রেড লাইসেন্স নিয়ে জ্বালানী তেলের ব্যবসা করে যাচ্ছে। কোন কোন ক্ষেত্রে ট্রেড লাইসেন্সেরও মেয়াদ উত্তীর্ণ, দোকানে নেই কোন অগ্নি নির্বাপক ব্যবস্থা। এসব দোকানে ভেজাল তেল সরবরাহের পাশাপাশি পরিমাণে কম ও লিটারে ১০ থেকে ১৫ টাকা দাম বেশি রাখায় একদিকে প্রতারিত হচ্ছেন ক্রেতারা, অন্যদিকে গাড়ীর ইঞ্জিনের মারাত্বক ক্ষতিসাধন হচ্ছে। খোলা বাজারে বোতলে ভরে জ্বালানী তেল বিক্রি করায় দুষ্কৃতকারীদের হাতে সহজেই দাহ্য পদার্থ পৌছে যাওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। এভাবে জ্বালানী তেল বিক্রিতে সাধারণ মানুষ প্রতিটি মুহুর্ত থাকে আতঙ্ক আর উৎকন্ঠায়। সম্প্রতি গোপন সংবাদের ভিত্তিতে র্যাব-১১ এর একটি আভিযানিক দল ৯৭০ লিটার চোরাই তেলসহ খোলা তেল ব্যবসায়ী কালীগঞ্জ পৌর এলাকার মূলগাঁও গ্রামের ফাইজুদ্দিনের পুত্র হামীম ও চৈতারপাড়া গ্রামের চান মিয়ার পুত্র রাজীবকে গ্রেফতার করে পৃথক দুইটি মামলা দায়ের করে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে প্রেরণ করে।
তুমুলিয়া ইউনিয়নের চুয়ারিয়াখোলা গ্রামের ব্যবসায়ী মুঞ্জুরুল হক টুটুল জানান, বাধ্য হয়ে আমাদেরকে খোলা বাজার থেকে জ্বালানী তেল ক্রয় করতে হয়। এতে পরিমাপে কম থাকলেও করার কিছু নেই। এসব তেল ব্যবহারে প্রায় সময়ই গাড়ীর ইঞ্জিনে সমস্যা দেখা দেয়।
উপজেলার বালীগাঁও এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রেডার্সের স্বত্ত্বাধিকারী ও পদ্মা অয়েল এর ডিলার মাসুম জানান, বিভিন্ন যানবাহনের চালকরা চলতি পথে বিভিন্ন দোকানদারের কাছে চুরি করে কম দামে জ্বালানী তেল বিক্রি করে। দোকানীরা এসব তেল বোতলে ভরে বিক্রি করায় দূর্ঘটনার সম্ভাবনা রয়ে যায়। জ্বালানী তেলের ব্যবসার জন্য লাইসেন্স ও সুরক্ষার প্রয়োজন হলেও খোলা বাজারের দোকানীরা তা উপেক্ষা করে চলছে।
কালীগঞ্জ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশন ইনচার্জ আবু বকর জানান, শুধু কালীগঞ্জে নয় সারা দেশেই প্রতিটি প্রতিষ্ঠানেই অগ্নি নির্বাপক যন্ত্র ও ডাইকেমিক্যাল পাউডার রাখা দরকার। খোলা বাজারে জ্বালানী তেল বিক্রির বিষয়ে আমাদের কিছুই করার নেই। আমরা সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান মাত্র। ছাড়পত্র প্রদানের এখতিয়ার জেলা ইনচার্জের আছে, আমাদের নেই।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আসসাদিকজামান জানান, লাইসেন্সবিহীন জ্বালানী তেল বিক্রি সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। বিভিন্ন হাটবাজারে বোতলে ভরে জ্বালানী তেল বিক্রি হচ্ছে তা উদ্বেগজনক। অচিরেই এসব ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে মোবাইল কোর্ট পরিচালনার মাধ্যমে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
দেশকন্ঠ/আসো