দেশকণ্ঠ প্রতিবেদক : পৌরসভার বিশেষ ট্রাক বাড়ি বাড়ি এসে সংগ্রহ করে পয়োবর্জ্য। এরপর শোধনাগারে পাঁচটি ধাপে প্রায় তিন মাসের প্রচেষ্টায় তৈরি হয় জৈব সার, যা জমিতে ব্যবহার করে এরই মধ্যে সুফল পেয়েছেন কৃষকরা। মানুষের মল থেকে জৈব সার তৈরির এ প্রক্রিয়া সফলভাবে সম্পন্ন করে পৌরবাসী ও কৃষকদের মাঝে আশার সঞ্চার করেছে নীলফামারীর সৈয়দপুর পৌরসভা।
পৌরসভায় আবেদন করলে বাড়িতে এসে হাজির হয় ভ্যাকু টেক নামের বিশাল এক গাড়ি। সঙ্গে আসা পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা প্রথমে লম্বা পাইপ বাড়ির সেপটিক ট্যাংকে প্রবেশ করান। এরপর যন্ত্রের সাহায্যে ধীরে ধীরে তুলে নেন পয়োবর্জ্য। এরপর ১৭০ শতক জমির ওপর গড়ে তোলা ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টের ড্রায়িং বেডে নিয়ে ফেলা হয় তরল বর্জ্য। এখানে কিছুটা শুষ্ক হওয়ার পর ব্যবহার উপযোগী জৈব সারে পরিণত হতে আরও চারটি ধাপে পার করতে হয় অন্তত ১১ সপ্তাহ সময়।
সমন্বিত স্যানিটেশন ব্যবস্থা ও পরিচ্ছন্ন শহর গড়ার লক্ষ্যে সৈয়দপুর পৌরসভা ওয়াটারএইড বাংলাদেশের আর্থিক ও কারিগরি সহায়তায় ২০১৮ সাল থেকে পয়োবর্জ্য শোধনাগার স্থাপনের কাজ শুরু করে। ২০২১ সালে শুরু হয় পয়োবর্জ্য শোধন। ওয়াটারএইড বাংলাদেশের প্রোগ্রাম অফিসার (ইঞ্জিনিয়ার) মো. শাখাওয়াত হোসাইন বলেন, ‘সৈয়দপুর পৌরসভায় প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৩৭.১ মেট্রিক টন কঠিন বর্জ্য উৎপাদন হয়। সেখান থেকে কিছু জৈব অংশ আমাদের ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টে এনে ট্রিটমেন্ট করি। গত বছর প্রায় ১৫ মেট্রিক টনের মতো জৈব সার উৎপাদন করেছি। এ বছর আশা করছি প্রায় ৪০ মেট্রিক টন উৎপাদন করতে পারব।’
পয়োবর্জ্যের মাধ্যমে জৈব সার প্রস্তুত শুরু হওয়ায় পৌরবাসীর দুশ্চিন্তা যেমন কমেছে, তেমনি পরিবেশ দূষণেও এই পদ্ধতি রাখছে কার্যকর ভূমিকা। স্থানীয়রা বলছেন, আগে সুইপার দিয়ে ময়লা পরিষ্কার করতে হতো। গর্তের মধ্যে ফেলে মাটি দিয়ে ঢেকে দেয়া হতো। এতে অনেক সময় দুর্গন্ধ ছড়াত। এখন সুবিধা হয়েছে। আবেদন করলেই গাড়ি এসে বর্জ্য নিয়ে যায়। সৈয়দপুর পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘ময়লা থেকে সার উৎপাদন করা হচ্ছে। এতে এখন ময়লা একটা আর্থিক সম্পদে পরিণত হয়েছে। আর এটা নিঃসন্দেহে একটা ভালো উদ্যোগ।’
এদিকে বিষমুক্ত সবজি উৎপাদন করে জাতীয় পদক পাওয়া আহসান উল হক এরই মধ্যে তার ড্রাগন বাগানে আড়াই টন কো-কম্পোজ জৈব সার প্রয়োগ করেছেন। কৃষি উদ্যোক্তা আহসান উল হক বলেন, ‘এই পয়োবর্জ্য দেয়ার পর ৭ থেকে ১০ দিনের মধ্যে গাছে একটা পরিবর্তন আসে। যেটা অন্যান্য সারে একটু ধীরে আসে। তাই আমার কাছে মনে হচ্ছে এটা ভালো কিছু হবে।’
সৈয়দপুরের ফেইকাল স্ল্যাজ ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট থেকে এখন পর্যন্ত ৩৫ টন সার উৎপাদিত হয়েছে। ১৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে ২৯ টন সার।
দেশকণ্ঠ/রাসু