• সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
    ৯ পৌষ ১৪৩১
    ঢাকা সময়: ০০:০৫

হবিগঞ্জের বদু মিয়া নতুন জাতের ফসল উৎপাদনে ভরসা

দেশকণ্ঠ প্রতিবেদক : নতুন জাতের ফল ও সবজি এবং বিদেশি ফসল চাষে কিছুটা ঝুঁকি থাকে। তাই ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ভয়ে অধিকাংশ কৃষক এ ঝুঁকি নিতে চান না। তবে এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম বদু মিয়া। দেশে একাধিক জাতের ফসল প্রথম আবাদ করে সাড়া ফেলেছেন। তার উৎপাদিত ফল ও ফসল পেয়েছে ব্যাপক জনপ্রিয়তা। বিভিন্ন দেশে রপ্তানিও করছেন। পেয়েছেন একাধিক জাতীয় পুরস্কার। তার প্রেরণায় কৃষিতে নেমেছেন অসংখ্য মানুষ। পাচ্ছেন সফলতাও। অনেকেই পতিত জমি আবাদ করছেন।
 
সরেজমিন ঘুরে জানা যায়, কৃষক বদুর প্রকৃত নাম আব্দুল বাছির বদু। কিন্তু পরিচিতি পেয়েছেন ‘কৃষক বদু মিয়া’ নামেই। বাড়ি হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলার বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তবর্তী কমলপুর গ্রামে। পড়াশোনা খুব বেশিদূর এগোয়নি। স্কুলে পড়া অবস্থায় ১৯৮৮ সাল থেকেই তিনি পারিবারিক কৃষিকাজের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। অষ্টম শ্রেণির পাঠ চুকিয়েই পুরোপুরি কৃষক হয়ে ওঠেন। বলতে গেলে নেশা থেকেই কৃষিকে পেশা হিসেবে বেছে নেন তিনি। ২০০১ সালে পারিবারিক এবং কিছু জমি লিজ নিয়ে চাষাবাদ শুরু করেন কৃষক বদু মিয়া। খুব অল্প দিনেই পেয়ে যান সফলতা। একের পর এক নতুন নতুন ফল ও ফসল উৎপাদন করে ব্যাপক পরিচিতি পান। দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে খ্যাতি।
 
২০১৪ সালে কৃষি মন্ত্রণালয়ের ‘দেশসেরা’ কৃষক হিসেবে প্রথম পুরস্কার পান। এরপর ২০১৭ সালে বিশ্ব খাদ্য দিবসের প্রথম পুরস্কার, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে ২০১৯ সালে জাতীয় সবজি মেলায় প্রথম পুরস্কার, ২০২২ সালে দ্বিতীয় পুরস্কার, ২০১৯ সালে জাতীয় ফল প্রদর্শনীতে দ্বিতীয় পুরস্কার, ২০২০ সালে দীপ্ত কৃষি এবং ২০২৩ সালে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক ও চ্যানেল আইয়ের এগ্রো অ্যাওয়ার্ড পান বদু মিয়া। ২০০৮ সালে হলুদ তরমুজ আবাদ করে আলোচনায় আসেন কৃষক বদু মিয়া। রাতারাতি দেশব্যাপী ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায় এ ফল। ওপরে হলুদ, ভেতরে লাল এ তরমুজ অত্যন্ত সুস্বাদু। এসব তরমুজ একেকটা ৫-৭ কেজি পর্যন্ত ওজন হয়।
 
তবে সবচেয়ে বেশি সাড়া ফেলেছেন থাইল্যান্ডের ফল সাম্মাম আবাদ করে। সাম্মাম একেকটি এক থেকে দেড় কেজি পর্যন্ত হয়। প্রতি কেজি পাইকারি বিক্রি হয় ১৫০-২০০ টাকায়। তবে খুচরা এক কেজি বিক্রি হয় ৪০০-৪৫০ টাকায়। গত বছর থেকে কিছু জমিতে আবাদ করছেন লাল ও কালো ধান। এটিও দেশে একেবারেই নতুন। এ ধানের চাল মূলত ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য। শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী এ চালের ভাত খেলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকে। খুবই লাভজনক এ চাল বিক্রি হয় প্রতি কেজি ১৫০-২০০ টাকায়।
 
শুধু বিদেশি ফল নয়, সবজি চাষেও রয়েছে তার ব্যাপক সফলতা। তিনি আবাদ করেন টমেটো, ক্যাপসিকাম, ব্রকলি, কাঁচামরিচ, শসা, শিম, আলু ও জিংক আলু। কয়েক বছর এসব ফল ও সবজি সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়াসহ বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করেছেন। তবে কয়েক বছর ধরে সেটি বন্ধ। কৃষিকে পেশা হিসেবে নিয়ে সংসার খরচ চালিয়েও এ পর্যন্ত অন্তত ৫০ লাখ টাকা সঞ্চয় করেছেন কৃষক বদু মিয়া। তার দুই ছেলে ও এক মেয়ে। মেয়ে এইচএসসি পাস করেছেন। বড় ছেলে এইচএসসি ও ছোট ছেলে এসএসসি পরীক্ষার্থী। কৃষক বদু মিয়া বলেন, ‘একসময় আমার কৃষিপণ্য বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করেছি। তবে যারা আমার পণ্য নিতেন তারা ব্যবসা বন্ধ করে দিয়েছেন। তাই রপ্তানিও বন্ধ। সরকার যদি উদ্যোগ নেয় তাহলে আবারও আমার পণ্য বিদেশে রপ্তানি করতে পারবো। এতে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব।’
 
তাবিদুর রহমান নামের এক ব্যক্তি বলেন, ‘শুনেছি বদু মিয়া সাম্মাম নামের এক জাতের বিদেশি ফল উৎপাদন করছেন। সেটি দেখার জন্যই মূলত এসেছি। এটি কী ধরনের ফল আগে জানতাম না। এসে দেখি তিনি দেশীয় সবজি ছাড়াও বিভিন্ন জাতের বিদেশি সবজি চাষ করছেন।’
 
কথা হয় স্থানীয় কৃষক মো. মহিউদ্দিনের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘তাকে (বদু মিয়া) দেখেই আমরা কৃষিতে উদ্বুদ্ধ হচ্ছি। আমাদের এলাকার অনেকেই এখন তাকে দেখে কৃষিতে সফল হচ্ছেন। কৃষিতে কোনো সমস্যা হলেই আমরা বদু চাচার কাছে ছুটে যাই। তার পরামর্শ অনুযায়ী কাজ করি। সফলতাও পাই।’
 
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. নূরে আলম সিদ্দিকী বলেন, বদু মিয়া একজন সফল কৃষক। আমরা তাকে সব বিষয়ে সর্বাত্মক সহযোগিতা করছি। তাকে দিয়েই মূলত আমরা নতুন নতুন জাতের ফসল উৎপাদন করি। পুরোনো কৃষক হওয়ায় তিনি ঝুঁকি নিতে চান।
দেশকণ্ঠ/রাসু

  মন্তব্য করুন
আরও সংবাদ
×

পথরেখা : আমাদের কথা

আমাদের পোর্টালের নাম— pathorekha.com; পথরোখা একটি অনলাইন নিউজ পোর্টাল। আমরা এই প্রতিষ্ঠানকে প্রতিদিনের সত্য-সংবাদের পথরেখা হিসেবে প্রমাণ করতে চাই। পথরেখা সারাদেশের পাঠকদের জন্য সঠিক ও বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ এবং মতামত প্রকাশ করবে। পথরোখা নিউজ পোর্টাল হিসেবে ২০২৩ সালের জুন মাসে যাত্রা শুরু করলো। অচিরেই পথরেখা অনলাইন মিডিয়া হিসেবে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ে নিবন্ধনের প্রক্রিয়া শুরু করবে। পথরোখা  দেশ কমিউনিকেশনস-এর অঙ্গ প্রতিষ্ঠান।
 
পথরোখা জাতীয় সংবাদের উপর তো বটেই এর সঙ্গে রাজনীতি, আন্তর্জাতিক, খেলাধুলা, কৃষি, বিনোদন, অর্থনীতি, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, তথ্য ও প্রযুক্তিসহ বিভিন্ন বিভাগকেও গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করে। মাল্টিমিডিয়া সাংবাদিকতা এবং চৌকস ফটোগ্রাফিকে বিশেষ বিবেচনায় রাখে।
 
পথরোখা’র সম্পাদক আরিফ সোহেল এই সেক্টরে একজন খুব পরিচিত ব্যক্তিত্ব। সাংবাদিক হিসেবে তার দীর্ঘ ৩০ বছর কর্মজীবনে তিনি দৈনিক বাংলাবাজার পত্রিকা, আজকের কাগজ, রিপোর্ট২৪ ডটকম প্রভৃতি প্রতিষ্ঠানে কাজ করেছেন। এ ছাড়া তিনি সরকারী ক্রীড়া পাক্ষিক ‘ক্রীড়া জগত’ ও লাইফস্টাইল ম্যাগাজিক অপ্সরা নির্বাহী সম্পাদক হিসেবে দীর্ঘদিন কাজ করেছেন। তিনি জনপ্রিয় অনলাইন দেশকণ্ঠের নির্বাহী সম্পাদক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন।
 
পথরেখা দেশের মৌলিক মূল্যবোধ, বিশেষ করে জাতীয় সার্বভৌমত্ব, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতার প্রতি অঙ্গীকারবদ্ধ। এছাড়াও, এটি দেশের নাগরিকের মানবিক ও নাগরিক অধিকারের পক্ষে কথা বলবে। ন্যায়পরায়ণতা, নির্ভুলতা এবং বস্তুনিষ্ঠতা বজায় রাখতে আমরা অঙ্গীকারাবদ্ধ। আমরা বিশ্বাস করি যে জনগণের বিশ্বাসযোগ্যতা আমাদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ। পথরেখা রাজনৈতিক ইস্যুতে নির্দলীয় অবস্থান বজায় রাখবে। একটি নিরপক্ষ অনলাইন হিসেবে আমরা নিজেদের কর্মকাণ্ডে প্রমাণ করার শতভাগ প্রছেষ্টা করব। তবে সঠিক পদ্ধতি অনুসরণ করেও কিছু ভুল হতেই পারে। যা ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ রাখছি সব মহলেই। সততা পথে অবিচল; আলোর পথে অবিরাম যাত্রায় আমাদের পাশে থাকুন; আমরা থাকব আপনাদের পাশে।
 
উল্লেখ্য, পথরেখা হিসেবে একটি প্রকাশনী দীর্ঘদিন থেকে প্রকাশিত হয়ে আসছে। এবার উদ্যোগ নেওয়া হলো অনলাইন অনলাইন নিউজ পোর্টাল হিসেবে প্রকাশ করার।