• রবিবার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪
    ৭ আশ্বিন ১৪৩১
    ঢাকা সময়: ১৯:৩৭

কুষ্টিয়ার কাকিলাদহে তাল বিক্রি করে ৪ মাসে আয় ২ কোটি টাকা

দেশকন্ঠ ডেস্ক : জেলার মিরপুর উপজেলার কাকিলাদহ তাল গ্রামে গ্রামবাসীর ভাগ্য বদলে দিচ্ছে তালগাছ। তালের রস ও তালশাঁস বিক্রি করে মাত্র ৪ মাসে আয় প্রায় ২ কোটি টাকা। সরজমিনে উপজেলার কাকিলাদহ গ্রামে গেলে দেখা যায়, রাস্তার দু’ধারে সারি-সারি তালগাছ। যত দূর দৃষ্টি যায় শুধু তালগাছই চোখে পড়ে। তালগাছের কারণে এখানে বজ্রপাতে প্রাণহানির ঘটনার আশংকা নেই। কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার আমলা বাজার। কুষ্টিয়া-মেহেরপুর মহাসড়কের পাশেই অবস্থিত এলাকার ঐতিহ্যবাহী এ বাজারটি। এ বাজার থেকে বামে সড়ক ধরে ৪ থেকে ৫ কিলোমিটার এগুলোই সড়কের দু’ধারে চোখে পড়বে এমন সারি-সারি তালগাছ। শুধু সড়কেই নয়, এলাকার পথে-পথে, মাঠ-ঘাটে যেদিকে চোখ যায় শুধুই তালগাছ। তালগাছের এ গ্রামটি কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার সদরপুর ইউনিয়নের কাকিলাদহ গ্রামের। তাল গাছের কারণে কাকিলাদহ এখন ‘তালগাছের গ্রাম’ হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। এটিকে আন্তজার্তিক খ্যাতি সম্পন্ন বিচারপতি ড. রাধাবিনোদ পালের গ্রাম হিসেবেও চেনেন অনেকে।

জানা গেছে, তালগাছ ঘিরে বাড়তি মুনাফা করেন এই গ্রামের বাসিন্দারা। কাঁচা তাল, তালের রস, পাকা তাল, তালের শাস, তালের গাছ ও পাতা বিক্রি করে অর্থ আয় করেন তরা। শুধু তালের রস বিক্রি করেই সংসার চালাচ্ছেন প্রায় দেড়শ পরিবার। সুস্বাদু তালের রস খেতে প্রতিদিন বিভিন্ন এলাকা থেকে মানুষ এখানে ভিড় জমান।এলাকার প্রবীণ ব্যক্তি ইমাম আলী। তিনি ১৫ থেকে ২০ বছর ধরে তালগাছ কেটে রস সংগ্রহ করেন। সকাল-বিকেল দুই বেলা তিনি গাছ থেকে রস সংগ্রহ করেন। প্রতিদিন দুটি গাছ থেকে তিনি পান ৩০ লিটার মিষ্টি তালের রস। বিকেলে এসব রস তিনি নিয়ে আসনে স্থানীয় সড়কে। এ সড়কের দুই পাশে তাল গাছের দীর্ঘ সারি। বিকেলে নানা স্থান থেকে লোকজন আসেন রস খেতে। বিকেল ৪টা থেকে ৬টা পর্যন্ত মানুষের ভিড় থাকে। এ সময় ইমাম আলীর মতো অনেক গাছি রস নিয়ে আসেন এখানে। এক গ্লাস তালের রস বিক্রি হয় ১০ টাকায়। আর এক লিটার নিলে ৫০ টাকা। ইমাম আলী বলেন, ‘গরমের ৪ মাস তালগাছ কেটে রস সংগ্রহ করি। প্রতিদিন ৩০ লিটার রস পাই দুটি গাছ থেকে। ৫০ টাকা লিটার হিসাবে প্রতিদিন ১ হাজার ৫০০ টাকা আয় করি। ৫ জনের সংসার চালানোর পাশাপাশি অতিরিক্ত অর্থ জমাতেও পারি।’ কাকিলাদাহ গ্রামের জজপাড়া গ্রামের সুন্নত আলী বলেন, আমাদের গ্রামে প্রথম তালগাছ রোপণ করেন হাজি দাউদ আলী। তিনি শিক্ষিত ও জ্ঞানী মানুষ ছিলেন। তিনি এলাকার বেশ কয়েকটি সড়ক ও নিজের জমিতে তালগাছ রোপণ করেন প্রায় ৭০ বছর আগে। এরপর তার দেখাদেখি এলাকার সব মানুষ তালগাছ রোপণ শুরু করেন। এভাবে কাকিলাদাহ গ্রামটি এখন তালগাছের গ্রাম। গ্রামটিতে প্রায় ১৫ হাজারের বেশি তালগাছ আছে।

তালের রসের ব্যবসায়ী আক্কাস আলী ও শওকত আলী বলেন, তালগাছ থেকেও যে লাখ-লাখ টাকা আয় করা যায় তার উদাহরণ আমাদের গ্রাম। আমাদের এলাকার অনেক পরিবার গরম কালের এ সময় রস, কাঁচা তাল, পাকা তাল, তাল পাতা বিক্রি করে কয়েক কোটি টাকা আয় করে জীবিকা নির্বাহ করছেন। প্রতিদিন গড়ে ১৫ হাজার লিটার রস উৎপাদন হয়। যেসব রস বিক্রি হয় না সেগুলো দিয়ে তালের গুড় ও পাটালি তৈরি করা হয়। এছাড়া যেসব জমিতে তালগাছ আছে সেইসব জমির মালিকরা তালগাছ বর্গা দেন কয়েক মাসের জন্য। এ সময় গাছ প্রতি ১ হাজার টাকা পান তারা।
কুয়েত প্রবাসী রাকিবুল ইসলাম বলেন, আমি দীর্ঘদিন প্রবাসে আছি। এলাকায় এসে দেখলাম প্রতিদিন তালের রস বিক্রি হচ্ছে কাকিলাদাহ গ্রামে। আমাদের গ্রামের নাম চারদিকে ছড়িয়ে পড়েছে। অনেক মানুষ প্রতিদিন আসে রস খেতে। সুস্বাদু হওয়ায় তালের রসের খ্যাতি চারিদিকে। বিচারপতি ড. রাঁধা বিনোদ পাল মডেল স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা রফিকুল ইসলাম বলেন, তালগাছ যে পরিবেশ ও মানুষের বন্ধু তা অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই। আমাদের এলাকায় প্রতিবছর তালগাছ রোপণ করা হচ্ছে। তালবীজ রোপণ করলেই গাছ হয়ে যায়, তেমন পরিচর্যার প্রয়োজন হয় না।তিনি বলেন, প্রতিবছর তালগাছকে কেন্দ্র করে প্রায় কোটি টাকার বেশি অর্থ আয় হচ্ছে এলাকার মানুষের। অর্থনীতিতে বড় ভূমিকা রাখছে এটি। এছাড়া তালগাছের কারণে স্মরণকালের মধ্যে বজ্রপাতে এ এলাকায় কোনো মানুষের মৃত্যু হয়নি। তালগাছের ক্ষতি হলেও কোনো মানুষের ক্ষতি হতে আমরা দেখিনি। তালগাছ পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার পাশাপাশি অর্থ রোজগারের বড় মাধ্যম হয়ে উঠেছে।
দেশকন্ঠ/এআর

 

  মন্তব্য করুন
আরও সংবাদ
×

পথরেখা : আমাদের কথা

আমাদের পোর্টালের নাম— pathorekha.com; পথরোখা একটি অনলাইন নিউজ পোর্টাল। আমরা এই প্রতিষ্ঠানকে প্রতিদিনের সত্য-সংবাদের পথরেখা হিসেবে প্রমাণ করতে চাই। পথরেখা সারাদেশের পাঠকদের জন্য সঠিক ও বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ এবং মতামত প্রকাশ করবে। পথরোখা নিউজ পোর্টাল হিসেবে ২০২৩ সালের জুন মাসে যাত্রা শুরু করলো। অচিরেই পথরেখা অনলাইন মিডিয়া হিসেবে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ে নিবন্ধনের প্রক্রিয়া শুরু করবে। পথরোখা  দেশ কমিউনিকেশনস-এর অঙ্গ প্রতিষ্ঠান।
 
পথরোখা জাতীয় সংবাদের উপর তো বটেই এর সঙ্গে রাজনীতি, আন্তর্জাতিক, খেলাধুলা, কৃষি, বিনোদন, অর্থনীতি, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, তথ্য ও প্রযুক্তিসহ বিভিন্ন বিভাগকেও গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করে। মাল্টিমিডিয়া সাংবাদিকতা এবং চৌকস ফটোগ্রাফিকে বিশেষ বিবেচনায় রাখে।
 
পথরোখা’র সম্পাদক আরিফ সোহেল এই সেক্টরে একজন খুব পরিচিত ব্যক্তিত্ব। সাংবাদিক হিসেবে তার দীর্ঘ ৩০ বছর কর্মজীবনে তিনি দৈনিক বাংলাবাজার পত্রিকা, আজকের কাগজ, রিপোর্ট২৪ ডটকম প্রভৃতি প্রতিষ্ঠানে কাজ করেছেন। এ ছাড়া তিনি সরকারী ক্রীড়া পাক্ষিক ‘ক্রীড়া জগত’ ও লাইফস্টাইল ম্যাগাজিক অপ্সরা নির্বাহী সম্পাদক হিসেবে দীর্ঘদিন কাজ করেছেন। তিনি জনপ্রিয় অনলাইন দেশকণ্ঠের নির্বাহী সম্পাদক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন।
 
পথরেখা দেশের মৌলিক মূল্যবোধ, বিশেষ করে জাতীয় সার্বভৌমত্ব, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতার প্রতি অঙ্গীকারবদ্ধ। এছাড়াও, এটি দেশের নাগরিকের মানবিক ও নাগরিক অধিকারের পক্ষে কথা বলবে। ন্যায়পরায়ণতা, নির্ভুলতা এবং বস্তুনিষ্ঠতা বজায় রাখতে আমরা অঙ্গীকারাবদ্ধ। আমরা বিশ্বাস করি যে জনগণের বিশ্বাসযোগ্যতা আমাদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ। পথরেখা রাজনৈতিক ইস্যুতে নির্দলীয় অবস্থান বজায় রাখবে। একটি নিরপক্ষ অনলাইন হিসেবে আমরা নিজেদের কর্মকাণ্ডে প্রমাণ করার শতভাগ প্রছেষ্টা করব। তবে সঠিক পদ্ধতি অনুসরণ করেও কিছু ভুল হতেই পারে। যা ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ রাখছি সব মহলেই। সততা পথে অবিচল; আলোর পথে অবিরাম যাত্রায় আমাদের পাশে থাকুন; আমরা থাকব আপনাদের পাশে।
 
উল্লেখ্য, পথরেখা হিসেবে একটি প্রকাশনী দীর্ঘদিন থেকে প্রকাশিত হয়ে আসছে। এবার উদ্যোগ নেওয়া হলো অনলাইন অনলাইন নিউজ পোর্টাল হিসেবে প্রকাশ করার।