পথরেখা অনলাইন : দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সবচেয়ে বড় পশুর চামড়ার বাজার বসেছে কিশোরগঞ্জ শহরের পৌর মার্কেটের মোরগমহল এলাকায়। কিন্তু বিশেষ সিন্ডিকেটের কারসাজিতে দাম মিলছে না পশুর চামড়ার। সরকার নির্ধারিত প্রকার ভেদে ৪৫ থেকে ৪৮ টাকা ফুটের চামড়া বিক্রি হচ্ছে ফুট প্রতি মাত্র ২৫ টাকা থেকে ৩০ টাকা। বৃহস্পতিবার (৬ জুলাই) বিকেলে বাজারে গিয়ে এমন চিত্র দেখা গেছে। চামড়ার দাম না পেয়ে দিশেহারা মৌসুমী চামড়া ব্যবসায়ীরা। বাজার ঘুরে দেখা গেছে, সুনামগঞ্জ, সিলেট, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার, নেত্রকোণা, ময়মনসিংহ, নরসিংদীসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে হাজার হাজার পশুর চামড়া নিয়ে বাজারে এসেছেন মৌসুমী ব্যাপারীরা। কিন্তু ট্যানারি মালিকরা সরকার নির্ধারিত দামের অর্ধেকেরও কম বলছে। কেউ কেউ ফিরিয়ে নেওয়ার পরিবহন ও প্রক্রিয়াজাতকরণের খরচের ভয়ে পানির দরে ট্যানারি মালিকদের হাতে চামড়া তুলে দিয়ে বাড়ি ফিরছেন। আবার কেউ কেউ চামড়া ফিরিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন।
নরসিংদীর রায়পুর থেকে দুই শতাধিক গরুর-ছাগলের চামড়া নিয়ে আসা আমিন বলেন, গতকাল রাতেই বাজারে চামড়া নিয়ে এসেছি। যেভাবে দাম বলেছে এভাবে বিক্রি করলে আমাদের অনেক টাকা লোকসান হবে। দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করলাম। এখন দেখছি বিক্রি না করেই চামড়া নিয়ে ফিরে যেতে হবে। নেত্রকোণা থেকে চামড়া নিয়ে আসা হারিছ মিয়া জানান, চামড়ার বাজারে বড় সিন্ডিকেট। এই সিন্ডিকেটের কারণে বাধ্য হয়ে চামড়া ৪০ টাকা ফুটের পরিবর্তে মাত্র ২৫ থেকে ৩০ টাকা ফুট দরে বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছি। আর এখানে ফুটে বিক্রি হচ্ছে না। পিস হিসেবে চামড়া বিক্রি করতে হচ্ছে। এতে প্রায় দুই লাখ টাকা লোকসান গুনতে হবে। এবার হাটে কিছু ট্যানারি মালিকদের দালাল এসেছে। তাদের সিন্ডিকেটের হাতই জিম্মি এই বিশাল চামড়ার বাজার। আমরা আশা নিয়ে কিশোরগঞ্জের এই বাজারে এসেছিলাম। এখন হতাশা নিয়ে ফিরতে হবে। কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার বৌলাইয়ের এলাকার রবি হোসেন নামে এক ব্যবসায়ী বলেন, এবারও চামড়ার মূল্য কম। তাই এবার ১০০ চামড়া কিনেছি। বাজারে কম ট্যানারি মালিক এসেছেন। তাই কম মূল্যই চামড়া বিক্রি করছেন মৌসুমী ব্যবসায়ীরা। তবে ঢাকা থেকে কিছু খুচরা ব্যবসায়ী এসেছেন। তারা কিনে লাভে ট্যানারিতে বিক্রি করবেন।
সাভারের হেমায়েতপুরের অ্যাপেক্স ট্যানারি লিমিটেডের ম্যানেজার সাইদুর রহমান বলেন, এখন পর্যন্ত ৫ হাজার চামড়া কিনেছি। বাজার মোটামুটি ভালোই রয়েছে। সরকার নির্ধারিত রেটের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখেই চামড়া কিনছি। কিশোরগঞ্জ শহরের পৌর মার্কেটের মোরগমহল চামড়া বাজারের ইজারাদার ও সদর উপজেলার মারিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান হলুদ বলেন, আমাদের বাজারে হবিগঞ্জ, ময়মনসিংহ, মৌলভীবাজার, সিলেট, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, চট্টগ্রাম, নরসিংদী, নেত্রকোণা, সুনামগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে চামড়া নিয়ে আসানে মৌসুমী ব্যবসায়ীরা। তিনটি হাটে আমাদের বাজারে প্রায় ১ লাখ চামড়া আসে। গত কয়েক বছর ধরে চামড়ার বাজারের যে অবস্থা তাতে মৌসুমী ব্যবসায়ীরা লোকসানের মুখে রয়েছেন। চামড়ার বাজার সিন্ডিকেটের হাত থেকে বাঁচাতে না পাড়লে এই শিল্পটাই ধ্বংস হয়ে যাবে। সরকারের কাছে এই শিল্পটাকে বাঁচানোর দাবি জানাই।
পথরেখা/অআ