পথরেখা প্রতিনিধি, কালীগঞ্জ (গাজীপুর) : গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন খাল-বিল ও জলাশয়ে চায়না ম্যাজিক ও কারেন্ট জালের অবাধ ব্যবহার চলছে। এতে নিধন হচ্ছে দেশীয় মাছ ও অন্যান্য জলজ প্রাণী।
প্রতিনিয়ত মারা পড়ছে বিভিন্ন প্রজাতির ডিমওয়ালা ও ছোট মাছ। নিধন হচ্ছে শোল, টাকি, কৈ, পুঁটি, শিং, টেংরা, খলিশা, রিঠা, বাইম, কুঁচে, কাঁকড়া,তেলাপিয়া, মাগুর, ছোট চিংড়ি, পাঙাশ, রুই, কাতলা ও আইড়সহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছের পোনা। ব্যাঙ, সাপ, কচ্ছপ, শামুকসহ বিভিন্ন প্রজাতির জলজ প্রাণীও মারা পড়ছে। ফলে হুমকিতে পড়ছে তাদের জীবনচক্র, হারিয়ে যাচ্ছে জীববৈচিত্র।
উপজেলার বক্তারপুর ইউনিয়নের কলুন গ্রামের বাসিন্দা ও আটালাব (আল্লাউদ্দিরটেক) বাজার কমিটির সেক্রেটারী মো. নাজমুল হোসেন রিপন প্রতিবেদককে জানান, প্রতিদিনের ন্যায় সকালে-বিকেলে দুবেলা ছোট ছোট পোনা মাছ নিয়ে বাজারে আসে জেলেরা। মৎস্য অফিস থেকে প্রতিনিয়ত তদারকি না করলে বা অভিযান পরিচালনা না চালালে চায়না ম্যাজিক জালের ব্যবহার বন্ধ করা যাবে না। এভাবে চলতে থাকলে এলাকার মৎস্য ও জলজ প্রাণী সম্পূর্ণ নির্মূল হয়ে যাবে। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি।
সরেজমিনে অনৃসন্ধানে দেখা যায়, উপজেলার বিশাল জলরাশি বেলায় বিলের বিভিন্ন অংশে, জলাশয় বা নালার ধারে চায়না ম্যাজিক জাল ব্যবহার করে আসছেন স্থানীয় কিছু মৎস্যজীবী। প্রতিনিয়ত ধরা পড়ছে দেশীয় প্রজাতির বিভিন্ন মাছ ও জলজ প্রাণী। ১৩ জুলাই উপজেলার বক্তারপুর ইউনিয়নের বেরুয়া ও ফুলদী ব্রিজ সংলগ্ন নলী বিল, ফুলদী দক্ষিন বাঙ্গালীর বিল, মাদলা বিল, মোহানী বিল, বেলায় বিলের বিভিন্ন এলাকাজুড়ে জয়রামবের, সাতানীপাড়া, উত্তর খৈকড়া, বেরুয়া, বাক্ষণগাও, রয়েন, পূনসহিসহ এলাকার বিভিন্ন অংশে এই জালের ফাঁদ পেতে মাছ শিকার করতে দেখা গেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক এলাকাবাসী প্রতিবেদককে জানান, চায়নার আবিষ্কৃত ম্যাজিক জাল এক ধরণের বিশেষ ফাঁদ। এটি প্রায় ২০ ফুট থেকে শুরু করে ৮০ ফুট লম্বা হয়ে থাকে। দেখতে এটি ছোট ছোট খোপের মত। এ জাল খাল-বিল, নদী-নালা ও জলাশয়ে বাঁশের খুঁটির সাথে জালের দুমাথা বেঁধে পেতে রাখা হয়। কিছুক্ষণ পর পর তুললে ছোট-বড় সব ধরণের মাছ এ জালে আটকা পড়ে। এলাকায় এই জাল ব্যবহারের কারণে মুক্ত জলাশয়ের মাছ শেষের পথে। এখন আর আগের মতো দেশীয় মাছ দেখা যায় না। হাতের নাগালেই এই জাল পাওয়া যায়। এলাকার শত শত মানুষ কালীগঞ্জের বিভিন্ন বাজার থেকে এই জাল উন্মুক্তভাবে ক্রয় করে থাকে। ম্যাজিক জালে মাছের পাশাপাশি প্রচুর জলজ প্রাণিও মারা পড়ছে। তাই ম্যাজিক জালের ব্যাবহার বন্ধ না হলে এ অঞ্চলে দেশীয় মাছ একেবারেই বিলুপ্ত হয়ে যাবে বলে আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।
স্থানীয় মৎসজীবীরা বলছেন, প্রতিটি ম্যাজিক জালের দাম ৩ হাজার থেকে ৪ হাজার টাকা হলেও এতে প্রচুর মাছ ধরা পড়ে। আর এতে লাভ থাকায় জালের টাকা পুষিয়ে নেওয়া সম্ভব হচ্ছে। ফলে জেলেরা এই জালে মাছ ধরায় ঝুঁকচ্ছেনও বেশি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কালীগঞ্জ উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. আবু সামা পথরেখার প্রতিবেদককে জানান, গত মাসের ২৪ তারিখে প্রশাসনের পক্ষ থেকে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হয়েছে। তিনি আরোও জানান, আমি উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইএনও) স্যারের সাথে এ বিষয়ে আলাপ করব। কিভাবে কারেন্ট জাল এবং চায়না ম্যাজিক জাল নির্মূল করা যায় সে ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।
পথরেখা/আসো