পথরেখা অনলাইন : মুন্সীগঞ্জের পদ্মার শাখা নদীতে বাল্কহেটের ধাক্কায় ডুবে যাওয়ার ১৫ ঘণ্টা পর দুর্ঘটনাকবলিত ট্রলার উদ্ধার হয়েছে। এ ঘটনায় ৮ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়। এখনো তিন শিশুসহ নিখোঁজ ৩। তাদের খোঁজে চলছে যৌথ অভিযান।
বিকালে এই ঘটনায় বাল্কহেটের মালিক ও চালকসহ ৬ জনের বিরুদ্ধে লৌহজং থানায় মামলা করেছেন ভুক্তভোগী রুবেল শেখ। তবে পুলিশ কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি। বেপরোয়া গতিতে নৌযান চালিয়ে অন্য নৌযানকে ধাক্কা দিয়ে জানমালের ক্ষয়ক্ষতির অপরাধে মামলাটি রেকর্ড হয়।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুমন দেব জানান, থানায় মামলাটি হলেও জল পথে দুর্ঘটনার কারণে মামলার তদন্তের দায়িত্ব পেয়েছে মাওয়া নৌ পুলিশ। মুন্সীগঞ্জের লৌহজং উপজেলার রসকাঠির কাছে পদ্মার শাখা নদীতে বালুর জাহাজের ধাক্কায় ট্রলার ডুবির ঘটনায় নিখোঁজের সন্ধানে চলছে যৌথ অভিযান।
বিআইডব্লিউটিএ প্রথমে এয়ার লিফটিং ব্যাগ ব্যবহারে করে ডুবে যাওয়া ট্রলার উদ্ধারে চেষ্টা চালায়। সঙ্গে স্থানীয় পদ্ধতি যুক্ত করেও সফল হয়নি। সবশেষে সম্পৃক্ত করা হয় ভাসমান ক্রেন। বেসরকারি ভাসমান ক্রেনই প্রায় ১২ ফুট পানির গভীর থেকে টেনে তোলে ট্রলারটি। আর কোস্টগার্ড ও ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরিরা দুর্ঘটনার আশাপাশের নিখোঁজের সন্ধানে তল্লাশি চালিয়ে যাচ্ছে। এ ছাড়াও স্বজনরা নিজস্ব উদ্যোগে ট্রলার নিয়ে তালতলা-গৌরগঞ্জ খালে খোঁজাখুঁজি করছে। স্বজনরা পরিবারগুলোর মধ্যে চলছে শোকের মাতম। প্রশাসন জানিয়েছে, ৪৬ জন যাত্রী নিয়ে শনিবার সন্ধ্যায় ডুবে যাওয়া ট্রলার থেকে ৭ জনের লাশ উদ্ধার হয়েছে। সিরাজদিখান উপজেলার খেতেরপুর থেকে পিকনিকের ট্রলারটি পদ্মা সেতু এলাকা ঘুরে ফিরছিল। দুর্ঘটনার কারণ উদঘাটনে জেলা প্রশাসন ৫ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি কাজ শুরু করেছে।
তদন্ত কমিটির প্রধান শারমিন আরা জানান, সব সদস্যদের নিয়ে তিনি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন ভুক্তভোগী ও প্রত্যক্ষদর্শীদের সাক্ষ্য গ্রহণ করছেন। আটক করা হয়েছে বালু বহনকারী ঘাতক বাল্কহেট। বিআইডব্লিউটিএ উপ-পরিচালক ওবায়দুল করিম খান জানান, দুর্ঘটনাকবলিত ট্রলারটির প্রায় ৭৫ ফুট দীর্ঘ। এর ওজন প্রায় ৭ মেট্রিক টন।
লৌহজং উপজেলার নির্বাহী অফিসার আব্দুল আউয়াল বলেন, শনিবার দুর্ঘটনার পর পুলিশ ৮ জনের লাশ উদ্ধার করে। সংশ্লিষ্ট হাসপাতাল, স্বজন ও জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ডুবে যাওয়া ট্রলারে থাকা ৪৬ জনের মধ্যে ৩৫/৩৬ জনই জীবিত উদ্ধার হন। নিখোঁজ রয়েছে তিন শিশু।
নিখোঁজে মধ্যে রয়েছে সিরাজদিখান উপজেলার খিদিরপুর গ্রামের রুবেল শেখের ছেলে মাহিম শেখ (৭) এবং কয়রাখোলা গ্রামের আরিফ শেখ ছেলে তুরান আহমেদ (৮) ও মেয়ে নাভা আক্তার (৫)। পিকনিকের ট্রলারে থাকা তুরান ও নাভার মা সমাপ্তি বেগম তীরে উঠতে পারেলও দুই সন্তানকে রক্ষা করতে পারেননি। সিঙ্গাপুরে প্রবাসী বাবা আরিফ শেখ খবর পেয়ে পাগলপ্রায়। রোববার রাত ১২টায় তার ঢাকা শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করার কথা রয়েছে।
সমাপ্তি বেগমের বাবার বাড়ি খিদিরপুর গ্রামে। তাই বাবার বাড়ির স্বজনের সঙ্গে পদ্মা সেতু ঘুরতে গিয়েছিলেন। কিন্ত আনন্দ মুহূর্তেই বিষাদে পরিণত হয়েছে। আর গ্রামটির একই পরিবারের ৪ জনের লাশ উদ্ধার হয়েছে। আরও নিখোঁজ রয়েছে একজন।
এপি আক্তার (৩০) ও তার দুই ছেলে সাকিবুল (০৮), রাকিবুল (১২) এবং বড় বোন পপি আক্তারের (৩৫) লাশ উদ্ধার হয়েছে। তবে এপির ভাতিজা মাহিমের সন্ধান মেলেনি। স্বজন হারানো পরিবারক-পরিজনদের বুকফাটা আর্তনাদ চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা যাবে না। নিখোঁজ তিন শিশুকে উদ্ধারের যৌথ অভিযান সন্ধ্যা পর্যন্ত চলমান ছিলো। সোমবার সকাল থেকে আবার শুরু হবে।পথরেখা/আসো