পথরেখা অনলাইন : ‘কৌশলগত পারমাণবিক আক্রমণের’ অনুকরণে সামরিক মহড়া চালিয়েছে উত্তর কোরিয়া। শনিবার (২ সেপ্টেম্বর) পরিচালিত এই মহড়ায় দুটি দূরপাল্লার ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র অন্তর্ভুক্ত ছিল। এছাড়া উত্তর কোরিয়ার জাহাজ নির্মাণ এবং যুদ্ধাস্ত্র কারখানা পরিদর্শন করেছেন পূর্ব এশিয়ার এই দেশটির সর্বোচ্চ নেতা কিম জং উন। রোববার (৩ সেপ্টেম্বর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, উত্তর কোরিয়া শনিবার ‘কৌশলগত পারমাণবিক আক্রমণের’ অনুকরণে মহড়া চালিয়েছে এবং এই মহড়ায় দুটি দূরপাল্লার ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র অন্তর্ভুক্ত ছিল বলে দেশটির রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম রোববার জানিয়েছে।
দেশটির সরকারি সংবাদমাধ্যম দ্য কোরিয়ান সেন্ট্রাল নিউজ এজেন্সি (কেসিএনএ) জানিয়েছে, ‘শত্রুদের সতর্ক করার জন্য’ শনিবার ভোরে এই মহড়া চালানো হয়। মূলত উত্তর কোরিয়া যে পারমাণবিক যুদ্ধের ক্ষেত্রে প্রস্তুত থাকবে সেটি জানান দিতেই এই মহড়া চালানো হয়। কারণ ওয়াশিংটন এবং সিউলের বিরুদ্ধে সামরিক প্রতিরোধ জোরদার করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে পিয়ংইয়ং। রয়টার্স বলছে, শনিবারের এই মহড়ার সময় নকল পারমাণবিক ওয়ারহেড বহনকারী দুটি ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র কোরীয় উপদ্বীপের পশ্চিম সাগরের দিকে নিক্ষেপ করা হয় এবং ১৫০ মিটারের পূর্বনির্ধারিত উচ্চতায় ওই ক্ষেপণাস্ত্র দুটি ১৫০০ কিলোমিটার (৯৩০ মাইল) পথ উড্ডয়ন করে। অন্যদিকে পৃথক এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, পিয়ংইয়ংয়ের নৌবাহিনীকে শক্তিশালী করার গুরুত্বের ওপর জোর দিতে পুকজং মেশিন কমপ্লেক্স পরিদর্শন করেছেন কিম জং উন। এই কমপ্লেক্সটিতে সামুদ্রিক ইঞ্জিন তৈরি করা হয় এবং এটি উত্তর কোরিয়ার বড় একটি অস্ত্র কারখানা। অবশ্য কিম ঠিক কবে সেখানে সফর করেছেন তা ওই বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়নি।
রয়টার্স বলছে, ‘কৌশলগত পারমাণবিক আক্রমণের’ অনুকরণে সামরিক মহড়া এবং ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপের ঘটনা এমন এক সময়ে ঘটল যখন দক্ষিণ কোরিয়া এবং যুক্তরাষ্ট্রের বার্ষিক সামরিক মহড়া মাত্রই সম্পন্ন হয়েছে। গত আগস্ট মাসের তৃতীয় সপ্তাহে দক্ষিণ কোরিয়া এবং যুক্তরাষ্ট্র তাদের বার্ষিক সামরিক মহড়া শুরু করে। উভয় দেশের ১১ দিনের সম্মিলিত এই সামরিক মহড়া গত বৃহস্পতিবার শেষ হয় এবং এর দুদিনের মাথায় এই ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ করা হলো। দক্ষিণ কোরিয়ার মিডিয়া অনুসারে, দক্ষিণ কোরিয়া এবং যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যকার এই মহড়ায় অন্তত একটি মার্কিন বি-১বি কৌশলগত বোমারু বিমান কোরীয় উপদ্বীপের ওপরে উড্ডয়ন করে। এর আগে গত সপ্তাহে দক্ষিণ কোরিয়ায় পারমাণবিক হামলার অনুকরণে মহড়া চালায় উত্তর কোরিয়া। পূর্ব এশিয়ার পরমাণু শক্তিধর এই দেশটি সেসময় জানায়, তারা দক্ষিণ কোরিয়ার সামরিক লক্ষ্যবস্তুতে পারমাণবিক হামলার অনুকরণে দুটি স্বল্প-পাল্লার কৌশলগত ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে।
উত্তর কোরিয়ার রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম বলেছিল, এই অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের কৌশলগত বোমারু বিমান মোতায়েনের বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি হিসেবে কৌশলগত ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে বুধবার এই পরীক্ষাগুলো চালানো হয়। রয়টার্স বলছে, ওয়াশিংটন এবং সিউলের বিরুদ্ধে উত্তর কোরিয়া তার সামরিক প্রতিরোধ সক্ষমতা বাড়িয়ে চলেছে। এছাড়া সামরিক সহযোগিতার আরও উন্নতির বিষয়ে গত মাসে যুক্তরাষ্ট্র ও দক্ষিণ কোরিয়ার মধ্যে একটি চুক্তিরও সমালোচনা করেছে দেশটি। এর আগে গত ২১ আগস্ট উত্তর কোরিয়া কৌশলগত ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা চালায় এবং সেই পরীক্ষা তদারকি করেন দেশটির সর্বোচ্চ নেতা কিম জং উন। যুদ্ধজাহাজ থেকে এই ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা নিরীক্ষণ বা তদারকির জন্য পূর্ব উপকূলে অবস্থানরত নৌবাহিনীর একটি নৌবহরও পরিদর্শন করেন তিনি। কেসিএনএ সেসময় জানায়, ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণের লক্ষ্য ছিল ‘জাহাজের যুদ্ধ কার্যকারিতা এবং এর ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থার বৈশিষ্ট্য’ যাচাই করার পাশাপাশি ‘প্রকৃত যুদ্ধে আক্রমণ’ চালানোর জন্য নাবিকদের সক্ষমতা আরও বাড়ানো। আর তাই সফরের সময় জাহাজটিকে ‘উচ্চ গতিশীলতা ও কঠোর আঘাত করার শক্তি এবং আকস্মিক পরিস্থিতি মোকাবিলায় লড়াইয়ের জন্য অবিরাম প্রস্তুতি’ বজায় রাখার ওপর জোর দেন কিম।
পথরেখা/অআ