পথরেখা অনলাইন প্রতিনিধি, কালীগঞ্জ (গাজীপুর) : গাজীপুরের কালীগঞ্জে ৬ বছরের শিশুকে বলাৎকার শেষে হাত-পা বেধে শ্বাসরোধ করে হত্যা চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনা ধামাচাপা দিতে মোটা অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে দফারফায় নেমেছে স্থানীয় এক স্কুল শিক্ষক। ওসিকে তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নিতে গাজীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের নির্দেশ দিয়েছেন।
সরেজমিনে জানা যায়, ১৭ সেপ্টেম্বর বিকালে উপজেলার জামালপুর ইউনিয়নের চুপাইর (দিঘীরপাড়) এলাকায় কাওছার শেখের শিশু পুত্র (৬) বাড়ির পাশের বাগানে খেলতে যায়। এসময় স্থাণীয় মো. জাহাঙ্গীরের ছেলে বখাটে মো. হাসিব (১৮) ও মো. সফিকুলের ছেলে বখাটে মো. সোহাগ মিয়া (১৬) শিশুটিকে জোরপূর্বক পার্শ্ববর্তী জঙ্গলে নিয়ে বলাৎকার করে হত্যার উদ্দেশ্যে শিশুটির হাত-পা বেধে মুখে হাফপ্যান্ট গুজে দিয়ে জঙ্গলে ফেলে চলে যায়। সন্ধ্যার দিকে স্থানীয় গৃহবধু শরিফা মাঠে চড়ানো ছাগল আনতে গিয়ে জঙ্গলের ভিতরে গোংড়ানীর শব্দ পেয়ে চিৎকার করলে স্থানীয়রা এসে শিশুটিকে বিবস্ত্র অবস্থায় উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়।
এ ঘটনা জানাজানি হলে চুপাইর উচ্চ বিদ্যালয়ের ক্রীড়া শিক্ষক মো. আলী নেওয়াজ মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে ধামাচাপা দিতে দফারফায় নামেন। তিনি মূল অপরাধীদের বাঁচাতে প্রতিবেশী চাঁন মিয়ার বুদ্ধি প্রতিবন্ধী পুত্র রাজীব শেখের উপর বলাৎকারের দোষ চাপিয়ে দেন। এতে স্থানীয়রা ক্ষীপ্ত হয়ে মূল ঘটনা প্রকাশ্যে আনেন। এ ঘটনার পর থেকে এলাকার কোমলমতি শিক্ষার্থীরা স্কুলে যেতেও ভয় পাচ্ছে।
স্কুল শিক্ষক তার মিশন সফল করতে গাজীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের নাম ভাঙ্গিয়ে ভূক্তভোগী পরিবারকে পরোক্ষভাবে হুমকি ও ভয়ভীতি দেখিয়ে ম্যানেজের চেষ্টা করেন। গণমাধ্যম কর্মীরা এ বিষয়ে সরেজমিনে সংবাদ সংগ্রহ করার সময় ঐ স্কুল শিক্ষক অপরাধীদের পক্ষ নিয়ে তাদের সাথে খারাপ আচরণ করেন। এ ঘটনায় এলাকায় চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে।
এ বিষয়ে শিশুর মা মাহমুদা বেগম জানান, কিছু দিন পূর্বে প্রতিবেশী জাহাঙ্গীরের ছেলে হাসিব তার বাড়ির ছাদের উপর নিয়ে বলাৎকার করে। পরে আমার ছেলে এ ঘটনা আমাদেরকে জানালে বিষয়টি হাসিবের পিতাকে জানাই। গত রবিবার বিকেলে আমার ছেলেকে পুনরায় তারা বলাৎকার শেষে হাত-পা বেধে গভীর জঙ্গলে ফেলে দিয়ে হত্যা চেষ্টা করে। আমি এ ঘটনার বিচার চাই। এ বিষয়ে চুপাইর উচ্চ বিদ্যালয়ের ক্রীড়া শিক্ষক মো. আলী নেওয়াজ বলেন, সকালে এডিশনাল এসপি আমাকে ফোন দিছে। বলল কি ঘটনা? আমি বিস্তারিত বলছি। বললাম স্থাণীয় মেম্বার, চেয়ারম্যান নিয়ে আপোষ মীমাংসা করে কাগজ পাঠিয়ে দিব। এডিশনাল এসপি সাব বিষয়টি মীমাংসার জন্য আমাকে দায়িত্ব দিয়েছেন।
স্থানীয় ইউপি সদস্য মো. আব্দুল মান্নান মোল্লা জানান, এ ঘটনা অত্যন্ত দুঃখজনক। আমি ও চেয়ারম্যান সাহেব ঘটনাস্থলে গিয়ে ছিলাম। ভূক্তভোগী ও স্থাণীয়দের সাথে কথা বলে ঘটনার সত্যতা পেয়েছি। পরে এ বিষয়ে কালীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ ফায়েজুর রহমান জানান, সংবাদ পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠাই। এখনো পর্যন্ত থানায় কোন অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নিব। গাজীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) মো. সানোয়ার হোসেন পিপিএম বার জানান, বিষয়টি অবগত হয়েছি। কালীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জকে তদন্ত পূর্বক ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিয়েছি।
পথরেখা/আসো