পথরেখা অনলাইন : উমার মর্ত্যে আগমন উপলক্ষ্যে ভক্তদের মধ্যে চলছে নানা আয়োজন। লাল-সাদা রং দিয়েই শারদ সংগ্রহের দিকে সকলের ঝোঁক। শরত ও পূজার উত্সবমুখর আবহের সমন্বয় করার ভাবনা থেকেই শারদীয় ও শরতের রংগুলোকে প্রাধান্য দিয়ে চলছে শারদ সংগ্রহ। শরত আসলেই দেখা যায় কাশফুলের হালকা স্নিগ্ধ রঙের পোশাকে ঘুরতে যাওয়া হাজারো নারীদের।
শরত মানে পোশাকে এক সহজ সাধারণ নম্র হালকা নকশার ডিজাইন। তাই শরতকে কেন্দ্র করে পোশাকগুলো বেশ স্বচ্ছ, হালকা এবং স্নিগ্ধতায় তৈরি করা হয়। শরতকে কেন্দ্র করে নানান ফ্যাশন হাউজের নানা উদ্যোগের পাশাপাশি মানুষ নিজস্ব পছন্দসই পোশাক তৈরি করে থাকে।
শরতের সাজ-পোশাকে নীল ও সাদা রংকে প্রাধান্য দেওয়া হয় বেশি। প্রকৃতির সঙ্গে এই রং ওতপ্রোতভাবে জড়িত। এই সময়ে মানুষ ঘুরে বেড়াতে বেশ পছন্দ করে এবং ঘুরে বেড়ানোর জন্য খুব স্নিগ্ধ এবং সাধারণ পোশাক বেছে নেয় কারণ শরত্কালের গরমের একটা তীব্রতা থাকে। তবে শরতের উৎসবের আমেজে সাদা-নীলেই আটকে নেই পোশাক। সঙ্গে যুক্ত হয়েছে নানা রঙের সমাহার। চলতি বছর পূজা উপলক্ষ্যে পোশাকের ব্র্যান্ড ভারমিলিয়ন ‘শরতের আনন্দ ছড়িয়ে যাক, সবার মনে, সবার প্রাণে’ এই স্লোগানকে প্রাধান্য দিয়েছে।
ভক্তি, শক্তি, শ্রদ্ধা, জ্ঞান, প্রকৃতি-দূর্গাপূজার মাহাত্ম্যের এই দিকগুলোকে প্রাধান্য দিয়েই পোশাকের ডিজাইন করা হয়েছে। সাদা-লালের আধিক্য তো রয়েছেই। সেইসঙ্গে রয়েছে আলপনা ও পদ্মের জলছাপও। পূজার পাঁচটি দিনের অন্তত এক দিন শাড়িপরা চাই-ই। এমনকি যারা শাড়ি পরে অভ্যস্ত নন, তারাও মেনে চলেন এই নিয়ম। বিভিন্ন রঙের ডোরাকাটা দিয়ে পুরো শাড়িতে নকশা করে তার নাম রাখা হয়েছে ‘ডোরা’। শরতে আধিপত্য দেখানো নীল রং প্রাধান্য পেয়েছে এই শাড়িতে। তবে এই শাড়িতে আরও অনেক রঙের আধিক্য রয়েছে। বেলিফুলের সুবাস আর তার সৌন্দর্য বাতাসে ছড়িয়ে দিতে শারদ আয়োজনের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ সংযোজন ‘বেলি’। আকাশি আর বেগুনির দারুণ সমন্বয় এই শাড়ি। তা ছাড়া পাড় ও আঁচলের বেলিগুলো যেন স্নিগ্ধতা ও সুবাস ছড়িয়ে যাচ্ছে সারাক্ষণ। এই রোদ, এই বৃষ্টি-বেলিকে নিয়েই এই কাজ।
গ্রামীণ চিত্রকলা, স্থানীয় সংস্কৃতির ছোঁয়াও আনা হয়েছে মধুবনী চিত্রের মোটিফ দিয়ে শাড়ির পাড় আর আঁচলে। শাড়ির জমিনে রয়েছে জলছাপের লোকজ মোটিফ। অফ হোয়াইট আর ম্যাজেন্টা প্রাধান্য পেয়েছে ‘রজনী’তে। ঠিক টেরাকোটার বুনন এনেছে শাড়ির ওপর। পূজার দিনে স্নিগ্ধতায় ভরিয়ে রাখতে আছে ‘বীণা’। পদ্মকে প্রাধান্য দিয়ে করা হয়েছে ‘পদ্মাবতী’ নামে একটি শাড়ি। এই শাড়ির জমিন মাটিরঙা এবং পাড়ে পদ্মের ছাপ ও আলপনা জুড়ে দেওয়া হয়েছে। শারদীয় আমেজের ক্ষেত্রে ভিন্ন মেজাজের দিকেই এগিয়েছে ভারমিলিয়ন। আঁচলে পানির আলপনা ও মন্দিরের কাঠামোগত শেপের জটিলতা থাকার পরও ‘পদ্মাবতী’ শাড়ির স্নিগ্ধতা ইতোমধ্যে অনেককে আকর্ষণ করেছে। গরদ শাড়ির মতো আমেজ নিয়ে আসা হয়েছে ‘রজনী’ নামক শাড়িতে। প্রতিটি শাড়ির সঙ্গে কম্বো সেট করার ক্ষেত্রেও তারা ভেবেছে। পূজার আনন্দ সবার সঙ্গেই ভাগ করে নিতে হয়। এই ভাগ করে নেওয়া মানে পোশাক কেনায় পুরো পরিবারের অংশগ্রহণ। নাগরিকজীবনে একে একে প্রকৃতির ও গ্রামের ছোঁয়াও জরুরি। আর ফ্যাশন হাউজ ঋতুর প্রাকৃতিক রং আর শারদীয় লাল-সাদার মধ্যেও সরলতা আসতে পারে।
পূজায় ভক্তির সঙ্গে জমে ওঠে প্রেমও। তাই শাড়ি ও ব্লাউজের নকশা ও রঙের সঙ্গে মিল রেখে রাখা হয়েছে পাঞ্জাবিও। বাঙালি উত্সবে বনেদিয়ানা আর আভিজাত্য ফুটিয়ে তুলতে শাড়ি-পাঞ্জাবির জুড়ি মেলা ভার। পূজাতে থাকে অনেকগুলো দিন। দশমী ছাড়া বাকি ৪ দিন আড্ডা, বেড়ানো, আতিথেয়তা-আপ্যায়নে চাই স্বাচ্ছন্দ্য। তাই শাড়ির পাশাপাশি শারদ সংগ্রহে সমান গুরুত্ব পেয়েছে সালোয়ার-কামিজ, লং জামা, ক্রপটপ ও স্কার্ট। ফ্যাশন হাউজগুলোর মধ্যে ফিউশনের চেষ্টা ও সত্সাহস দেখা গেছে।
ভারমিলিয়নের কো-ফাউন্ডার ইমতিয়াজ রাসেল বলেন, ‘ভারমিলিয়ন এবার নিজস্ব সিল্ক নিয়ে কাজ করার চেষ্টা করেছে। ভারমিলিয়ন সিল্ক আমরা নিজেরাই বানাচ্ছি। এটিকে সরাসরি মসলিন বলা যাচ্ছে না। মসলিনেরই একটি ধরন বলতে হয়। আমরা পোশাকের ক্ষেত্রে ফ্যামিলি কম্বো, শরত আর পূজার আমেজকে গুরুত্ব দিতে চেয়েছি। তার প্রতিটির প্রতিফলনই রয়েছে আমাদের কাজে। আশা করি এই পূজার আয়োজন সবার পছন্দ হবে।’
পথরেখা/আসো