নিলয় আহমেদ : ফার্মেসি স্বাস্থ্য বিজ্ঞানের একটি বিশেষ শাখা। অল্প টাকায় অনেক লাভজনক এবং সম্মানজনক একটি পেশা ফার্মেসি ব্যবসা। যারা ফার্মেসি ব্যবসা করতে চাচ্ছেন বা অলরেডি ফার্মেসি ব্যবসা করছেন তাদের কিছু কাজ সম্পূর্ণ করে নিতে হয়। যেমন- ড্রাগ লাইসেন্স করা, ফার্মাসিস্ট কোর্স কমপ্লিট করা, ফান্ডিং ম্যানেজ করা ইত্যাদি। আজ আপনাদের জানাবো ফার্মাসিস্ট কোর্স করার নিয়ম সম্পর্কে। ফার্মাসিস্ট কোর্স কিভাবে করবেন, ফার্মাসিস্ট কোর্স কোথায় করা যায়, ফার্মাসিস্ট কোর্স করার যোগ্যতা, ফার্মাসিস্ট কোর্স ফি কত ইত্যাদি।
আগে জেনে নিউ ফার্মাসিস্ট কোর্সের ধরন নিয়ে। ফার্মাসিস্ট কোর্স তিন ধরনের হয়ে থাকে। যথা- এ, বি ও সি ক্যাটাগরি। আপনি যদি ফার্মাসিস্ট কোর্স সম্পূর্ণ করে শুধু ফার্মেসির ব্যবসা করতে চান, তাহলে আপনার জন্য সি ক্যাটাগরি হলেই চলবে। সি ক্যাটাগরি কোর্সের সার্টিফিকেট বা লাইসেন্স থাকলেই আপনি ঝামেলা ছাড়াই ফার্মেসি ব্যবসা করতে পারবেন। সি ক্যাটাগরি ফার্মেসি কোর্স ও অন্যান্য ক্যাটাগরি কোর্সের সার্কুলার প্রকাশিত হয় ‘বাংলাদেশ ফার্মেসি কাউন্সিল’ থেকে। আপনি গুগলে খোঁজ করলে পেয়ে যাবেন বাংলাদেশ ফার্মেসি কাউন্সিল অফিসের ঠিকানা।
ফার্মাসিস্ট কোর্স করতে চাইলে বাংলাদেশ ফার্মেসি কাউন্সিলের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে নজর রাখবেন; কখন সার্কুলার প্রকাশিত হয়। আগেই বলে রাখি কখনো কখনো ওয়েবসাইটিতে প্রবেশের ক্ষেত্রে সমস্যা হতে পারে। এমনটি হলে অপেক্ষা করে পরে পুনঃ চেষ্টা করবেন। সি ক্যাটাগরির ফার্মাসিস্ট কোর্সের মেয়াদকাল তিন মাস। আপনি জানুয়ারি মাসে ভর্তি হলে মার্চ মাসের মধ্যে আপনার কোর্স সম্পন্ন হয়ে যাবে। কখনো কখনো এর বেশি সময় লাগতে পারে। সিরিয়াল পেতে এক বছর সময়ও লাগতে পারে।
এরপর বাংলাদেশ ফার্মেসি কাউন্সিল আরেকটি নতুন ব্যাচ শুরু করবে এবং প্রতি ব্যাচে ১০০জন করে নেওয়া হয়। বাংলাদেশ ফার্মেসি কাউন্সিল থেকে কোর্স বন্ধের নোটিশ না আসা পর্যন্ত এভাবেই তিন মাস পর পর একটি ব্যাচ বের হবে এবং একটি ব্যাচ কোর্স শুরু করবে। আপনি আপনার সুবিধা মতো যেকোনো ব্যাচের সঙ্গে ফার্মাসিস্ট কোর্সে ভর্তি হতে পারেন। আবেদনকারীকে এসএসসি/সমমান পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হবে। বয়স ১৭-৫০ বছরের মধ্যে হতে হবে। ড্রাগ লাইসেন্স আছে এমন ফার্মেসির মালিক কিংবা ওই ফার্মেসিতে কাজ করে এমন কোন ব্যক্তি।
এ ক্যাটাগরি এবং বি ক্যাটাগরির ফার্মাসিস্ট কোর্স করার জন্য অবশ্যই আপনাকে সাইন্স থেকে এসএসসি এবং এইচএসসি পাস করতে হবে। তারপর চার বছর মেয়াদী একটি ডিপ্লোমা কোর্স করার মাধ্যমে ‘এ’ ক্যাটাগরি‘ বি’ ক্যাটাগরির ফার্মাসিস্ট হতে পারবেন। অন্যদিকে সি ক্যাটাগরির জন্য সাইন্স বাধ্যতামূলক না। আবেদনপত্রের সঙ্গে এসএসসি/সমমানের সার্টিফিকেটের ফটোকপি, কর্মরত ফার্মেসির ড্রাগ লাইসেন্সের ফটোকপি বা মনোনীত ব্যক্তির নিজের ফার্মেসীর ভাউচারে মালিক কর্তৃক প্রত্যয়নপত্র, জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি,সদ্য তোলা দুই কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি ও পে-অর্ডারের মাধ্যমে কোর্সের নির্ধারিত ফি (অফেরৎ যোগ্য) জমা দিতে হবে। বিজ্ঞপ্তিতে কোর্সের ফি উল্লেখ করা থাকে। একজন এমবিবিএস ডাক্তারের সাধারণত যে ধরনের প্রেসক্রিপশন স্লিপ থাকে বা প্যাড থাকে, সে ধরনের প্যাডের মধ্যে লিখিতভাবে ড্রাগ লাইসেন্স ধারণকারীর স্বাক্ষর অঙ্গীকারনামা লাগবে। এসব কাগজপত্র জমা দিলে তারা যাচাই করে ঠিক মনে করলে আপনি এই ফার্মেসি কোর্স করতে পারবেন।
সব থেকে বেশি প্রশ্ন আসে- কোথায় ভর্তি হবেন, কিভাবে ভর্তি হবেন? আপনার উপজেলা বা জেলায় বাংলাদেশ ড্রাগিস্ট অ্যান্ড কেমিস্ট্রি কার্যালয়ে ভর্তি হবেন। ভর্তির বিজ্ঞপ্তি বাংলাদেশ ফার্মেসি কাউন্সিল দিলেও ভর্তি নিয়ে থাকে বাংলাদেশ ড্রাগিস্ট অ্যান্ড কেমিস্ট কার্যালয়। দেশের প্রত্যেকটি জেলায় বাংলাদেশ ড্রাগিস্ট অ্যান্ড কেমিস্ট্রি কার্যালয় রয়েছে। এমনকি আপনার উপজেলায়ও এর কার্যালয় থাকতে পারে। ফার্মেসি কাউন্সিলের ওয়েবসাইটে দেশের সব কার্যালয়ের ঠিকানা দেওয়া আছে। আপনার উপজেলার বা জেলার বাংলাদেশ ড্রাগিস্ট অ্যান্ড কেমিস্ট্রি কার্যালয়ে যোগাযোগ করবেন। সেখানে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা আপনাকে বিস্তারিত জানাবেন। সে অনুযায়ি ফার্মাসিস্ট কোর্সে ভর্তি হতে পারবেন। এছাড়াও আপনার এলাকার বা আপনার পরিচিত কোনো ফার্মাসিস্টের সঙ্গে কথা বলতে পারেন। ফার্মাসিস্ট কোর্স করার নিয়ম জানা থাকলেও ভর্তি হওয়ার পূর্বে কোনো অভিজ্ঞ ফার্মাসিস্টের সঙ্গে আলোচনা করলে বেশ উপকৃত হবেন। তিন মাস মেয়াদী সি ক্যাটাগরি ফার্মাসিস্ট কোর্সের জন্য শুধু ‘সহজ ঔষুধবিজ্ঞান’ বইটি পড়তে হয়। ফার্মেসি কাউন্সিল বইটি প্রকাশ করে থাকে। কোর্সে ভর্তি হলে সরাসরি অফিস থেকেই আপনি বইটি সংগ্রহ করতে পারবেন। তবে ফার্মাসিস্ট কোর্স করে আপনি চিকিৎসা দিতে পারবেন না। যদি চিকিৎসা দেন, তাহলে বেআইনি হবে। আপনি প্রেসক্রিপশন দেখে শুধু ঔষধ বিক্রি করতে পারবেন।
পথরেখা/আসো