পথরেখা, সিলেট প্রতিনিধি : আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০ ডিসেম্বর সিলেট হযরত শাহজালাল (রহ.) ও হযরত শাহ পরান (রহ.) এর মাজার জিয়ারত করেছেন।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলের নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করতে ২০ ডিসেম্বর সকালে এখানে পৌঁছান শেখ হাসিনা। প্রথমে তিনি বিভাগীয় নগরীতে হযরত শাহজালাল (রহ.) এর মাজার জিয়ারত করেন। তিনি সেখানে কিছু সময় কাটান, পবিত্র কোরআন থেকে তেলাওয়াত, ফাতেহা পাঠ ও মোনাজাত করেন। পরে প্রধানমন্ত্রী হযরত শাহ পরান (রহ.)-এর মাজার জিয়ারত করেন। সেখানে তিনি পবিত্র কোরআন থেকে তেলাওয়াত করেন এবং ফাতেহা পাঠ ও মোনাজাত করেন। উভয় স্থানেই প্রধানমন্ত্রীর ছোট বোন শেখ রেহানা তার সঙ্গে ছিলেন। রাস্তার দুই পাশে দাঁড়িয়ে থাকা হাজার হাজার মানুষ শ্লোগান এবং হাততালি দিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে মাজারে যাওয়ার পথে স্বাগত জানায়।
বিকালে আয়োজিত জনসভায় প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেছেন, অগ্নি-সন্ত্রাসীদের দেশের মানুষ প্রত্যাখ্যান করেছে। সাধারণ মানুষ ভোট চায়, উন্নয়ন চায়। আর তাই বিএনপি—জামায়াতের হরতাল অবরোধে তারা সাড়া দিচ্ছেন না। ইনশাল্লাহ দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনেও জনগণ আমাদের ভোট দিয়ে নৌকাকে নির্বাচিত করবেন। ২০ ডিসেম্বর বুধবার দুপুরে সিলেটের হযরত শাহজালাল (র.) এর মাজার জিয়ারত ও দোয়া শেষে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে দেশের মানুষের কল্যাণ হয়, উন্নয়ন হয়। এই মুহূর্তে সিলেটে কোনো ঘরহীন বা ভূমিহীন মানুষ নেই। আমরা এভাবে জনগণের মৌলিক চাহিদা পূরণ করছি। ইনশাল্লাহ, পর্যায়ক্রমে অন্যান্য চাহিদাও পূরণ করা হবে। আমরা উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা অর্জন করেছি। তা ধরে রাখতে হবে।তিনি বলেন, দেশের মানুষ আগুন দিয়ে মানুষ হত্যার রাজনীতি প্রত্যাখ্যান করেছে।
প্রধানমন্ত্রী প্রশ্ন রাখেন, আগুন দিয়ে পুড়িয়ে বা রেল লাইন উপড়ে মা ও শিশুদের হত্যা বা অসহায় মানুষকে হত্যা করা—এ কেমন রাজনীতি। বাংলার মানুষ এমন হত্যার রাজনীতি প্রত্যাখ্যান করেছে। তারা নির্বাচন চায়, ভোট উৎসব চায়।তিনি বলেন, তারা মানুষ হত্যার রাজনীতির মাধ্যমে ভিতি সৃষ্টি করে নির্বাচন পণ্ড করতে চায়। কিন্তু ২০১৩ ও ২০১৪ সালে তাদের এমন রাজনীতি দেশের মানুষ প্রত্যাখ্যান করেছে। ২০১৮ সালেও তারা প্রত্যাখ্যাত হয়েছে। তিনি আরও বলেন, ভোট জনগণের অধিকার। ভোটে বা নির্বাচনে কেউ বাধা দিলে জনগণ তাদের উৎখাত করবে। অগ্নি-সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।
বিশাল জনসভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ২০০১ সালের নির্বাচনে আমাদেরকে ক্ষমতায় আসতে দিল না। কেন দিল না। বাংলাদেশের একমাত্র প্রাকৃতিক গ্যাস। ওই আমেরিকা প্রস্তাব করল গ্যাস বিক্রি করতে হবে। কারণ আমেরিকার কোম্পানি এখানে গ্যাস উত্তোলন করে। আমি বলেছিলাম আমি গ্যাস বেচবো না। এই গ্যাস আমাদের জনগণের, এই গ্যাস জনগণের কল্যাণে ব্যবহার হবে। জনগণের কল্যাণে ব্যবহার করে যদি ৫০ বছরের রিজার্ভ রেখে অতিরিক্ত থাকে তাহলে বেচবো। তারা খুব নাখোশ হলেন। সিদ্ধান্ত নিলেন আমাকে ক্ষমতায় আসতে দেবে না। তা ছাড়া আমাদের দেশেরও কিছু লোক ছিল।
তিনি বলেন, ২০০১ সালে ক্ষমতায় এলো বিএনপি-জামায়াত জোট। যে বিএনপি ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে জনগণের ভোট চুরি করেছিল। ভোট চুরির অপরাধে এ দেশের মানুষ আন্দোলন করে ওই খালেদা জিয়াকে ক্ষমতাচ্যুত করেছিল। সেই ক্ষমতাচ্যুত, ভোট চোর, জনগণের সম্পদ চোর বিএনপিকে ক্ষমতায় বসালো ভোট কারচুপির মাধ্যমে। গ্যাস বিক্রির মুচলেকা দিয়েছিল খালেদা জিয়া। সে ক্ষমতায় গেলে গ্যাস বেচবে। সেজন্য তার পিঠে বাহবা দিয়ে ক্ষমতায় বসালো। তার রেজাল্ট কী? দুর্নীতি, জঙ্গিবাদ, দুঃশাসন।
সিলেটের এ জনসভার মধ্য দিয়ে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক প্রচারণা শুরু করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওসমানী বিমানবন্দরে প্রধানমন্ত্রীকে অভ্যর্থনা জানাতে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন, প্রবাসী ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদ, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল, সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মাসুক উদ্দিন আহমদ, সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সভাপিত শফিকুর রহমান চৌধুরী, সিলেট সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী ও বৃহত্তর সিলেটের আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।
পথরেখা/আসো