• সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
    ৯ পৌষ ১৪৩১
    ঢাকা সময়: ২০:৩৭

টাঙ্গাইলে রঙিন ফুলকপি চাষে কৃষকদের সফলতা

পথরেখা অনলাইন : টাঙ্গাইল সদর উপজেলায় রঙিন ফুলকপি চাষ করে প্রথমবারেই সফল হয়েছেন শহিদুল ইসলাম নামের এক কৃষক। সাদা রঙের ফুলকপির চেয়ে রঙিন ফুলকপির বাজারমূল্য বেশি হওয়ায় এ সফলতা এসেছে। সদরে রঙিন ফুলকপি চাষের বিষয়টি নতুন হওয়ায় আশপাশের অঞ্চলের মানুষ প্রতিদিন শহিদুলের ক্ষেত দেখতে ভিড় জমাচ্ছেন। সদর উপজেলার ঘারিন্দা ইউনিয়নের নিয়োগী জোয়াইর গ্রামের কৃষক শহিদুল ইসলাম। শুধু শহিদুল ইসলাম নয় তার মতো জেলায় আরও ১১ জন কৃষক সফল হয়েছেন।
 
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, বৃহত্তর ময়মনসিংহ অঞ্চলে ফসলের নিবিড়তা বৃদ্ধিকরণ প্রকল্পের আওতায় সদরে চলতি বছর শীত মৌসুমে রঙিন ফুলকপি চাষের উদ্যোগ নেওয়া হয়। ওই প্রকল্প থেকে জেলায় ১২ টি উপজেলার চাষিদের পরীক্ষামূলকভাবে ২৪ হাজার রঙিন কপির চারা দেওয়া হয়। এর মধ্যে ১২ হাজার হলুদ ও ১২ হাজার বেগুনি রঙের। ১২টি উপজেলায় ৬ বিঘা জমিতে রঙিন ফুল কপির চাষা করা হয়েছে। গত বছরের নভেম্বর মাসে তারা চারাগুলো রোপণ করেন কৃষকরা।
 
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে আরও জানা যায়, মাত্র দুই-আড়াই মাসের মাথায় সবজি ক্ষেতে শোভা পাচ্ছে হলুদ ও বেগুনি রঙের ফুলকপি। এর বাজার মূল্য ৭০-৮০ টাকা। জেলার সদর উপজেলার রঙিন ফুলকপি চাষি শহিদুল ইসলাম বলেন, আমি গত বছরের নভেম্বর মাসের ১০ তারিখে ১৫ শতাংশ জমিতে ২ হাজার রঙিন ফুল কপির চারা রোপণ করি। দুই থেকে আড়াই মাসের মাথায় ফুলকপি এসেছে। এতে রঙিন ফুলকপি চাষে আমার ১০-১২ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। আশা করছি ১ লাখ ৫০ হাজার টাকার ফুলকপি বিক্রি করতে পারবো। এ ফুলকপির চাহিদা অনেক বাজারে নেয়ার সঙ্গে সঙ্গে বিক্রি হয়ে যায়। আবার পাইকাররা আমার জমি থেকে নিয়ে যায়। রঙিন ফুলকপি ৭০-৮০ টাকা পিস বিক্রি করা যায়। সদা ফুলকপির থেকে রঙিন ফুল কপিতে দ্বিগুণ লাভ হয়। আমার দেখা দেখি আমার গ্রামের কৃষকরা আগ্রহ প্রকাশ করেছে। কৃষক থেকে আমাকে অনেক সহযোগিতা করেছে। আগামীতে চারা দিলে আরও বেশি জমিতে এ রঙিন ফুলকপি চাষ করবো।
 
সরেজমিনে দেখা যায়, আশপাশের বিভিন্ন গ্রাম থেকে মানুষ শহিদুলের ফুলকপি ক্ষেত দেখতে এসেছেন। কেউ কেউ রঙিন ফুলকপি হাতে নিয়ে ছবি তুলছেন। অনেকে বাগান থেকেই কপি কিনে নিচ্ছেন। রঙিন ফুলকপি ক্ষেত দেখতে আসা সদর উপজেলার সুরুজ গ্রামের আকবর আলী বলেন, আমারও ইচ্ছা আছে রঙিন ফুলকপি চাষ করার। এ জন্য সামনাসামনি দেখতে আসছি। ফুলকপিগুলো দেখতে খুব ভালো লাগছে। এর চাহিদাও দ্বিগুণ। খেক্ষে অনেক সুস্বাদু। কৃষি বিভাগ থেকে আমাকে সহযোগিতা করলে আমিও আগামীতে রঙিন ফুলকপি চাষ করবো। জেলার গোপালপুর উপজেলার চাষি রিপন মিয়া বলেন, রঙিন ফুলকপির ব্যাপক চাহিদা থাকায় ৭০-৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। প্রতিটি কপির ওজন হয়েছে দেড় থেকে দুই কেজি। এতে এক লাখ টাকার উপরে বিক্রি করতে পারবেন বলে আশা করছেন। তিনি আরও বলেন, চাষাবাদ শুরুর পর রঙিন ফুলকপি চাষে সবচেয়ে বেশি লাভবান হয়েছি। আমার এখানে প্রতিদিন গ্রামের ৫-৬ জন নারী কাজ করছেন। মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে পেরেছি, এটাও আমার আনন্দ। দূর-দূরান্ত থেকে প্রতিদিন অনেক কৃষক আগ্রহ নিয়ে নতুন এ ফুলকপি দেখতে আসছেন। অনেকেই আগামীতে এ কপি চাষের আগ্রহ দেখাচ্ছেন। তিনি জেলার ধনবাড়ী ও মধুপুরের আড়তে রঙনি ফুলকপি বিক্রি করেন।  
 
ধনবাড়ী উপজেলার মুশুদ্দি গ্রামের চাষি মিজানুর রহমান শিবলী মিয়া ও ইদ্রিস আলী বলেন, ১৫ শতক জমিতে বিদেশি জাতের ফুলকপি চাষ করেছি। ক্ষেত থেকেই পাইকারা উচ্চ মূল্য দিয়ে কিনে নিয়ে যাচ্ছে। আমাগীতে অধিক জমিতে চাষ করবো। দাম ভালো থাকায় অন্য কৃষকদের এ জাতের কপি চাষে আগ্রহ বাড়ছে। সদর উপজেলার ঘারিন্দা ইউনিয়নের সুরুজ ব¬কের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা নিলুফা ইয়াসমিন বলেন, এ এলাকার মানুষ আগে কখনো রঙিন ফুলকপি চাষ করেননি। তাই উপজেলার বিভিন্ন জায়গা থেকে এ সবজি দেখার জন্য প্রতিদিন মানুষ আসছেন। এমনকি কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারাও পরিদর্শন করে গেছেন।
 
সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রুমানা আকতার বলেন, কৃষকের মধ্যে কৃষিবিষয়ক নতুন তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার ছড়িয়ে দেওয়ার লক্ষ্যে কৃষি বিভাগ নিরলসভাবে মাঠপর্যায়ে কাজ করে যাচ্ছে। পরীক্ষামূলকভাবে উপজেলায় একমাত্র শহিদুল ইসলামকে এবার  রঙিন কপি চাষে সহযোগিতা করা হয়েছে। শহিদুল সফল হওয়ায় আগামী বছর রঙিন ফুলকপির চাষির সংখ্যা আরও বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে। বাজারে রঙিন ফুলকপির চাহিদাও বেশ। বাজারে নিয়ে বসে থাকতে হয় না আগ্রহ নিয়ে ক্রেতারা কিনে নিয়ে যাচ্ছে। এছাড়া রঙিন ফুলকপি পুষ্টিকর এবং খেতেও সুস্বাদু।
 
টাঙ্গাইলের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত উপপরিচালক দুলাল উদ্দিন বলেন, রঙিন ফুলকপি দেখে সকল মানুষের পছন্দ হয়েছে এবং খেতেও সুস্বাদু। বাজারে দামও অনেক ভালো সেজন্য কৃষকরা বেশি আগ্রহী। ক্রেতরা রঙিন ফুলকপি আগ্রহ নিয়ে কিনছে। তিনি আরও বলেন, কৃষি বিভাগ থেকে আমরা আশা করছি আগামীতে কৃষকদের প্রদর্শনী আকারে এ রঙিন ফুলকপি কিভাবে বেশি দেয়া যায় সে বিষয়ে আমরা কাজ করছি। এরই সাথে এ রঙিন ফুলকপির চারা কিভাবে বেশি সহজলভ্য করা যায় সে বিষয়েও আমরা কাজ করে যাচ্ছি। কৃষি বিভাগ কৃষকদের পাশে থেকে প্রযুক্তিগত সকল ধরনের সহায়তা ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করছি।
পথরেখা/আসো

  মন্তব্য করুন
আরও সংবাদ
×

পথরেখা : আমাদের কথা

আমাদের পোর্টালের নাম— pathorekha.com; পথরোখা একটি অনলাইন নিউজ পোর্টাল। আমরা এই প্রতিষ্ঠানকে প্রতিদিনের সত্য-সংবাদের পথরেখা হিসেবে প্রমাণ করতে চাই। পথরেখা সারাদেশের পাঠকদের জন্য সঠিক ও বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ এবং মতামত প্রকাশ করবে। পথরোখা নিউজ পোর্টাল হিসেবে ২০২৩ সালের জুন মাসে যাত্রা শুরু করলো। অচিরেই পথরেখা অনলাইন মিডিয়া হিসেবে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ে নিবন্ধনের প্রক্রিয়া শুরু করবে। পথরোখা  দেশ কমিউনিকেশনস-এর অঙ্গ প্রতিষ্ঠান।
 
পথরোখা জাতীয় সংবাদের উপর তো বটেই এর সঙ্গে রাজনীতি, আন্তর্জাতিক, খেলাধুলা, কৃষি, বিনোদন, অর্থনীতি, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, তথ্য ও প্রযুক্তিসহ বিভিন্ন বিভাগকেও গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করে। মাল্টিমিডিয়া সাংবাদিকতা এবং চৌকস ফটোগ্রাফিকে বিশেষ বিবেচনায় রাখে।
 
পথরোখা’র সম্পাদক আরিফ সোহেল এই সেক্টরে একজন খুব পরিচিত ব্যক্তিত্ব। সাংবাদিক হিসেবে তার দীর্ঘ ৩০ বছর কর্মজীবনে তিনি দৈনিক বাংলাবাজার পত্রিকা, আজকের কাগজ, রিপোর্ট২৪ ডটকম প্রভৃতি প্রতিষ্ঠানে কাজ করেছেন। এ ছাড়া তিনি সরকারী ক্রীড়া পাক্ষিক ‘ক্রীড়া জগত’ ও লাইফস্টাইল ম্যাগাজিক অপ্সরা নির্বাহী সম্পাদক হিসেবে দীর্ঘদিন কাজ করেছেন। তিনি জনপ্রিয় অনলাইন দেশকণ্ঠের নির্বাহী সম্পাদক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন।
 
পথরেখা দেশের মৌলিক মূল্যবোধ, বিশেষ করে জাতীয় সার্বভৌমত্ব, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতার প্রতি অঙ্গীকারবদ্ধ। এছাড়াও, এটি দেশের নাগরিকের মানবিক ও নাগরিক অধিকারের পক্ষে কথা বলবে। ন্যায়পরায়ণতা, নির্ভুলতা এবং বস্তুনিষ্ঠতা বজায় রাখতে আমরা অঙ্গীকারাবদ্ধ। আমরা বিশ্বাস করি যে জনগণের বিশ্বাসযোগ্যতা আমাদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ। পথরেখা রাজনৈতিক ইস্যুতে নির্দলীয় অবস্থান বজায় রাখবে। একটি নিরপক্ষ অনলাইন হিসেবে আমরা নিজেদের কর্মকাণ্ডে প্রমাণ করার শতভাগ প্রছেষ্টা করব। তবে সঠিক পদ্ধতি অনুসরণ করেও কিছু ভুল হতেই পারে। যা ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ রাখছি সব মহলেই। সততা পথে অবিচল; আলোর পথে অবিরাম যাত্রায় আমাদের পাশে থাকুন; আমরা থাকব আপনাদের পাশে।
 
উল্লেখ্য, পথরেখা হিসেবে একটি প্রকাশনী দীর্ঘদিন থেকে প্রকাশিত হয়ে আসছে। এবার উদ্যোগ নেওয়া হলো অনলাইন অনলাইন নিউজ পোর্টাল হিসেবে প্রকাশ করার।