পথরেখা অনলাইন : সূর্যমুখী ফসল চাষের পর ওই ফসল ঘরে উঠতে অল্প কিছুদিন বাকী। তবে ফসলে ফুল দেখে সূর্যমুখীর হাসির মতো কৃষকের মুখে হাসি মিলেছে। সয়াবিনের বিকল্প উৎসের সন্ধ্যান হিসেবে এবং অল্প সময়ে লাভজনক ফসল হিসেবে ইতোমধ্যে পীরগঞ্জ উপজেলার কৃষকদের মাঝে সুর্যমূখী চাষের আগ্রহ বেড়েছে। ৯০-১১০দিনের মধ্যে উত্তোলন, বাজারে উচ্চ মূল্যের লাভজনক ফসল হওয়ায় জেলার পীরগঞ্জ উপজেলার কৃষকরা ২০২০ সালে সুর্যমুখী ফসল চাষে উৎসাহিত হয়েছিল।
ইংরেজিতে ঝঁহভষড়বিৎ, উদ্ভিদতাত্ত্বিক মতে হিসেবে পরিচিত সূর্যমুখী ফসল। এতে উন্নতমানের তৈল থাকে ও বীজে লিনোলিক এসিড বিদ্যমান। হৃদরোগীদের জন্য সূর্যমুখীর তৈল খুবই উপকারী। এছাড়াও সূর্যমুখীর খৈল গরু ও মহিষের উৎকৃষ্টমানের খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এর বীজ ছাড়ানোর পর মাথাগুলো গরুর খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করা যায়। গাছ ও পুষ্পস্তবক জ্বালানী হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
পীরগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ সাদেকুজ্জামান সরকার জানান, কৃষি বান্ধব সরকারের প্রণোদনা কর্মসূচি ও কৃষক উদ্বুদ্ধকরণের মাধ্যমে চলমান মৌসুমে পীরগঞ্জের ১৫টি ইউনিয়নে প্রায় ১০০একর জমিতে ২৫০ জন কৃষক সূর্যমুখী ফসলের চাষ করেছে। ২০২০ সালের আগে এ উপজেলায় সূর্যমুখী ফসলের চাষ হয়নি। এ ধরণের কর্মসূচি অব্যাহত রাখার মাধ্যমে একদিকে যেমন উৎকৃষ্ট মানের ভোজ্যতেল উৎপাদন করা সম্ভব হবে অন্যদিকে কৃষিকে একটি লাভজনক পেশায় নিয়ে যাওয়া সম্ভবপর হবে। আমরা প্রতিনিয়ত সম্পৃক্ত-অসম্পৃক্ত তেল ভোজ্য হিসেবে ব্যবহার করছি। অথচ সূর্যমূখীর তেলে কোস্টেরোল মাত্রা নেই, স্বাহ্যের জন্য ভালো, স্বাস্থ্য ও পুষ্টি সম্পন্ন তেল ব্যবহারে সুর্যমুখী উৎপাদন ও বাজার জাত করা দরকার।
উপজেলা সদর ইউনিয়নের মকিমপুরের রানা মিয়া, আব্দুল খালেক, কিশোরগাড়ীর শাহিনুর রহমান, বড়দরগাহ ইউনিয়নের শাহাপাড়া হাজিপুরের আব্দুল ওয়াহেদ, শফিকুল ইসলাম, সিরাজুল ইসলাম, আব্দুর রাজ্জাক জানান, রায়পুর ইউনিয়নের কুমারগাড়ির রবিউল ইসলাম ও ইসমাইল হোসেন জানান, সূর্যমুখী চাষ করা কৃষকদের সাথে কথা হলে জানান, নিজেরা ১ বিঘা করে জমিতে সূর্যমুখী ফসল চাষ করেছি। বর্তমানের বাজারদর অনুপাতে সূর্যমূখী ফসল চাষে ভালো মুনাফার সম্ভাবনা দেখছেন কৃষকরা।
রংপুর জেলার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. রিয়াজ উদ্দিন জানান, সূর্যমুখী একটি উচ্চমূল্যের বাণিজ্যিক তেলজাতীয় ফসল, বিধায় কৃষিকে বাণিজ্যিকভাবে লাভবান ও শস্য বৈচিত্রকরণ বৃদ্ধিতে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, রংপুর জেলা উক্ত ফসল চাষাবাদে কৃষকদের উৎসাহিত করে যাচ্ছে। চলতি মৌসুমে মেট্রোসহ জেলার ৮টি উপজেলায় সূর্যমূখী চাষে ৫০ হেক্টর জমির লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও ৪৩ হেক্টর জমিতে সূর্যমূখীর আবাদ হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে এতে ১১০ মেট্রিকটন শস্য উৎপাদন হবে।
রংপুর অঞ্চলের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক মো. ওবায়দুর রহমান মন্ডল জানান, সরকার প্রতি বছর বিপুল পরিমাণ ভোজ্যতেল আমদানী করে থাকে। বর্তমানে দেশে চাষাপযোগী সূর্যমুখী ফসল উৎপাদনের মাধ্যমে উৎকৃষ্টমানের ভোজ্যতেল উৎপাদনের সুযোগ তৈরী হয়েছে। ফলে দেশের প্রচুর পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হবে।
স্থানীয় এমপি স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী জানান, কৃষি প্রণোদনা ও পুনর্বাসন কার্যক্রমের আওতায় এ মৌসুমে উপজেলায় ১৮ হাজার ২০০জন কৃষককে প্রণোদনার আওতায় ধান, গম, ভুট্টা, সরিষাসহ বিভিন্ন ফসলের বীজ ও সার বিনামূল্যে সরবরাহ করা হয়েছে। এর ফলে পীরগঞ্জে পানি সাশ্রয়ী ফসল চাষে সম্প্রসারণ হবে। আশা করছি এতে একদিকে যেমন পানি সাশ্রয়ী পরিবেশ বান্ধব ফসলের চাষাবাদ বৃদ্ধি পাবে অন্যদিকে ওই সব ফসল বাজারজাতে কৃষক আর্থিকভাবে লাভবান হবে।
পথরেখা/আসো