পথরেখা অনলাইন : ঠাকুরগাঁওয়ে একটি সেতুর জন্য ৩ যুগ ধরে অপেক্ষা করছে ৩টি ইউনিয়নের ২০ গ্রামের দুই লক্ষেরও বেশি মানুষ। মাঝে সেতুটির নির্মাণ কাজের কথা শুনে এলাকাবাসী আনন্দে আত্মহারা হলেও পরক্ষণেই মিলিয়ে যায় সে আনন্দ। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের গাফিলতির কারণে বন্ধ হয়ে যায় এর নির্মাণ কাজ এবং তৈরি হয় আইনি জটিলতার। তবে সব জটিলতা কাটিয়ে শীঘ্রই অপেক্ষা করে থাকা এসব মানুষদের আশার আলো দেখাচ্ছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল কর্তৃপক্ষ।
রানিশংকৈল উপজেলার ল্যাহেম্বা ইউনিয়ন ও হোসেনগাঁও ইউনিয়ন এর মাঝ দিয়ে বয়ে গেছে কুলিক নদী। ১৯৮২ সালে পানি উন্নয়ন বোর্ড কুষকদের সুবিধার্থে এবং সহজ যোগাযোগ স্থাপনে ১৫০ মিটার বাধ ও বাধের উপরে ব্রিজ নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণ করেন। কার্যক্রম শেষ করে ব্রিজটি নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হলে ১৯৮৬ সালের শেষের দিকে সাধারণ মানুষের জন্য উন্মুক্ত করে দেন পাউবো কর্তৃপক্ষ। তবে কৃষকরা কোন প্রকার সুবিধা পাওয়ার আগেই ১৯৮৭ সালের বন্যায় ব্রিজটি ভেঙ্গে যায়। তারপর থেকে আশেপাশের ২টি ইউনিয়নের বর্মপুর, বিরাশি, ল্যাহেম্বা, শ্যামলাডাঙ্গী, রসুলপুর, কার্তিপুর, কোচলসহ ২০টিরও বেশি গ্রামের মানুষকে বর্ষাকালে নৌকা ও খরা মৌসুমে বাঁশের সাঁকো দিয়ে নদী পার হয় সেই ১৯৮৭ সাল থেকে।
রাউতনগর উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আঁখি, লতা, নিহার বলেন, একটি ব্রিজের কয়েকটি খুঁটি এখনও দাড়িয়ে আছে। দাদা-দাদীর কাছে শুনেছি ব্রিজ হয়েছিল কিন্তু চলাচলের আগেই ভেঙ্গে যায়। আমরা সকলে চাই এ ব্রিজটির কাজ দ্রুত শুরু হোক। তাহলে বন্যা বর্ষায় এত কষ্ট করে আমাদের স্কুলে যেতে হবে না বা কয়েক কিলোমিটার ঘুরেও যেতে হবে না।
হরিপুর লেহেম্বা ইউপি চেয়ারম্যান আবুল কালাম জানান, ৮৭ সালের বন্যায় সুইচ গেটসহ ব্রিজটি ভেঙ্গে গেলেও এখন পর্যন্ত ব্রিজটির মুখ আমরা দেখতে পাইনি। নতুন করে কাজ শুরু হলেও ঠিকাদারের গড়িমসির কারণে আবারও থমকে যায় লাখো মানুষের স্বপ্ন। তবে আশা করছি দ্রুত সমাধান পাবে এলাকাবাসী। দীর্ঘদিন পড়ে থাকার ফলে নির্মাণ কাজ হবে শুনে এলাকাবাসী নতুন করে স্বপ্ন বুনে। কারণ বসত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজটি করতে ব্যর্থ হলে এলাকাবাসী আবারো হতাশ হয়। তবে সত্যিই এ সেতুটির নির্মাণকাজ শুরু হলে এখানে ৩টি ইউনিয়নের ২০টি গ্রামের ২ লক্ষাধিক মানুষের মাঝে ঈদের খুশির মত অবস্থা বিরাজ করবে।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর, ঠাকুরগাঁওয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ মামুন বিশ্বাস জানান, টেন্ডার ডকুমেন্ট অনুযায়ী ঠিকাদার কাজটি না করায় পিপিআর মোতাবেক কাজটি বাতিল করা হয়েছে এবং জরিমানা আরোপ করে তা আদায় করে রাজস্ব কোষাগারে জমা দেওয়া হবে। কিন্তু ইতোমধ্যে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এর বিরুদ্ধে মামলা করায় মহামান্য হাইকোর্টে এ মামলাটি প্রক্রিয়াধীন, যার কারণে টাকাটা সরকারি কোষাগারে জমা দেওয়া সম্ভব হচ্ছেনা। হাইকোর্টের নির্দেশনার প্রেক্ষিতে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তথাপিও এ কাজ বাতিল করে আমরা পুনরায় টেন্ডার করেছি। আগামী মে মাসে এ টেন্ডারটি ড্রপিং হলে নতুন ঠিকাদারের মাধ্যমে এ কাজ বাস্তবায়ন হবে। এ ব্যাপারে এমপি মহোদয় সহযোগিতা করেছেন এবং স্থানীয় লোকজন নিজের টাকায় জমি কিনে দিয়ে কাজে সহযোগিতা করেছেন। আগের ঠিকাদার কাজটি সঠিক সময়ে না করায় এলাকাবাসী দীর্ঘদিন কষ্ট করেছে। আশা করছি খুব দ্রুতই এলাকাবাসীর এ কষ্ট আমরা লাঘব করতে পারবো।
পথরেখা/আসো