পথরেখা অনলাইন : চলমান তাপপ্রবাহে কৃষকের পাশে রয়েছে গোপালগঞ্জ সদর উপজেলা কৃষি অফিস। কৃষি অফিসের কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে গঠিত টিমের সদস্যরা বোরো ধানের মাঠে যাচ্ছেন। কৃষকদের পরামর্শ দিচ্ছেন। এতে ফসল রক্ষার পাশাপাশি কৃষকরা উপকৃত হচ্ছেন।কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ঢাকা খামারবাড়ির পরিচালক (ক্রপস্ উইং) মকবুল আহাম্মদ, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের গোপালগঞ্জ খামারবাড়ির উপপরিচালক আঃ কাদের সরদার, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের গোপালগঞ্জ খামারবাড়ির অতিরিক্ত উপ-পরিচালক বিধান রায় সহ পদস্থ কর্মকর্তারাও গোপালগঞ্জ সদর উপজেলা কৃষি অফিসের টিমের সাথে কৃষকের মাঠে গিয়ে পরামর্শ দিয়েছেন।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের গোপালগঞ্জ সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাফরোজা আক্তার বলেন, চলমান তাপপ্রবাহের হাত থেকে ফসল রক্ষায় আমরা একটি টিম গঠন করেছি। আমিসহ এ টিমের সদস্যরা ক্ষেতে গিয়ে কৃষককে তাপপ্রবাহ মেকাবেলায় বিভিন্ন পারামর্শ দিচ্ছি। কৃষকরা সেভাবে কাজ করে ফসল রক্ষা করছেন। আমাদের সব ব্লকের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তারা ব্লকে যাচ্ছেন। কৃষকের সমস্যা চিহ্নিত করে পরামর্শ দিচ্ছেন।
ওই কর্মকর্তা বলেন, আগামী কয়েক দিন তাপদাহ অব্যাহত থাকবে বলে পূর্বাভাস রয়েছে। এ সময় দিনের তাপমাত্রা ৩৫-৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস, এমনকি বেশিও বিরাজ করতে পারে। তাই, বোরো ধান চাষে বিভিন্ন বিষয় বিবেচনায় রাখতে আমরা পরামর্শ দিচ্ছি। এরমধ্যে হিটশক বা হিট ইনজুরি। বৃষ্টিহীন গরম ঝড়ো বাতাসে অনেক জায়গায় ফুল আসা ধান হিট শক/হিট ইনজুরিতে পড়ে চিটা বা শিষ সাদা হয়ে যেতে পারে। এ সময় বোরো ধানের যে সকল জাত ফুল ফোটা পর্যায়ে আছে বা এখন ফুল ফুটছে বা সামনে ফুল ফুটবে সে সকল জমিতে পানি ধরে রেখে ধানের ফুল ফোটা পর্যায়ে হিট শক/হিট ইনজুরি থেকে রক্ষা করতে হবে।
দিনের তাপমাত্রা হলো ৩৫ সেলসিয়াস বা তার বেশি। ফুল ফোটার সময় (সকাল ৭ টা থেকে ১১ টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত) যদি ১/২ ঘণ্টা ওই তাপমাত্রা বিরাজ করে তাহলে ধান চিটা হয়ে যাওয়ার আশংকা থাকে। প্রচন্ড ঝড়ো বাতাস বা গরম বাতাসের এতে ফুলের অঙ্গগুলোর গঠন বাধাগ্রস্ত হয়। আবার ঝড়ো বাতাস পরাগায়ন, গর্ভধারণ ও ধানের মধ্যে চালের বৃদ্ধি ব্যাহত করে। এতে ধানের সবুজ খোসা খয়েরি বা কালো রঙ ধারণ করে। ফলে ধান চিটা হয়ে যেতে পারে। খরার কারণে শিষের শাখা বৃদ্ধি ব্যাহত হয় এবং বিকৃত ও বন্ধ্যা ধানের জন্ম দেয়ায় চিটা হয়ে যায়।
হিটশক বা হিট ইনজুরি প্রতিরোধে করণী সম্পর্কে ওই কর্মকর্তা বলেন, প্রচন্ড গরম ও ঝড়ো বাতাসের কারণে কোথাও ধান চিটা হতে দেখা গেলে হিটশক থেকে বোরো ধান রক্ষা করতে জমিতে ৫-৭ সেমি বা ২-৩ ইঞ্চি পানি কাইচ থোড় থেকে ফুল ফোঁটা পর্যন্ত ধরে রাখতে হবে।
দ্বিতীয়ত এমওপি সার ১০ লিটার পানিতে ১০০ গ্রাম মিশিয়ে ৫ শতাংশ হিসেবে স্প্রে করতে হবে। অথবা বিঘা প্রতি ৫ কেজি হিসেবে দানাদার এমওপি সার উপরিপ্রয়োগ করতে হবে। এছাড়া বি এল বি,ব্লাস্ট ,বাদামি গাছ ফড়িং এর আক্রমণ প্রতিরোধের ব্যবস্থা সঠিক সময়ে নিতে হবে।
গোপালগঞ্জ সদর উপজেলা কৃষি অফিসের উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা মোঃ লিয়াকত হোসেন বলেন, গত ২০ এপ্রিল গোপালগঞ্জে ৪০.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করে কৃষি আবহাওয়া অফিস । প্রতিদিনই তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের আশপাশে ওঠা নামা করছে। তারপরও আমরা ও কৃষক ভায়েরা সতর্ক থাকায় এখানে বোরো ধানে হিটশক বা হিট ইনজুরি হয়নি। আমারা তাদের আগাম সতর্ক করেছি। গোপালগঞ্জ সদর উপজেলায় ১০ দিন আগে থেকে ধান কাটা শুরু হয়েছে। আশা করছি গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার ধান কৃষক ভালোভাবে গোলায় তুলতে পারবেন।
গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার ভাটিয়াপাড়া গ্রামের স্মৃতি বিশ্বাস বলেন, ব্লকের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা সব সময় আমাদের খোঁজ খবর রাখছেন। এছাড়া বড় কর্মকর্তারা এখানে এসে ক্ষেত পরিদর্শন করছেন। আমাদের ধানে উল্লেখযোগ্য কোন সমস্যা হয়নি। ছোট-খাট সমস্যা উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা পার্বতী বৈরাগীর পরামর্শে সমাধান হয়েছে। কৃষি বিভাগ সজাগ থাকায় আমরা উপকৃত হচ্ছি। শেষ পর্যন্ত ভালভাবে ক্ষেতের ধান ঘরে তুলতে পারব। আমার ক্ষেতে বোরো ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে।
পথরেখা/এআর