• বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪
    ১১ পৌষ ১৪৩১
    ঢাকা সময়: ১০:৫০

পাকিস্তান অর্থনীতি বাঁচাতে গাঁজা চাষে ঝুঁকছে

পথরেখা অনলাইন : মায়ের পারকিনসন্স রোগের চিকিৎসার জন্য ২০১৪ সালে ভারতে গিয়েছিলেন আমির ধেধি। ভারতীয় ডাক্তাররা তার মায়ের ব্যথা নিরাময়ে ক্যানাবিডিওল (সিবিডি) তেল সংগ্রহ করার পরামর্শ দেন। করাচিভিত্তিক উদ্যোক্তা ধেধী সেবারই প্রথম ওষুধ হিসেবে গাঁজার ব্যবহার সম্পর্কে জানতে পারেন।

পাকিস্তানে ফেরার পর ওই ব্যবসায়ী যুক্তরাষ্ট্র থেকে অল্প পরিমাণ তেলের অর্ডার দেন। বলতে গেলে এই ওষুধ প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই তার মায়ের অসুস্থতা সারাতে বেশ ভালোই কাজ করেছে। এরপর থেকে সিবিডির উপকারীতার প্রতি দৃঢ় বিশ্বাসী হয়ে ওঠেন ধেধি।

৪৯ বছর বয়সী এই ব্যবসায়ী আল জাজিরাকে বলেন, ‘মায়ের অসুখ সারাতে এই তেলের কার্যকারীতা দেখে আমি ভিন্ন চিন্তা শুরু করি। এটি নিয়ে নতুন প্রজেক্ট করার পরিকল্পনা করি।’

কিন্তু ধেধির মা ২০২০ সালে মারা যান। তবে এই সিবিডি তেল ব্যবহারে তার মায়ের মতো অনেকেই উপকার পেয়েছেন বলে জানান তিনি। তিনি বলেন, ‘এখন আমি আমাদের স্থানীয় কৃষকদের গাঁজা চাষ বাড়াতে ও এর ব্যবহার ছড়িয়ে দিতে সাহায্য করতে চাই।’

ঔষধি গাঁজার জন্য একটি স্বদেশী শিল্প গড়ে তুলতে চায় এমন ব্যক্তি ধেধি একা নন। গাঁজা বাণিজ্যের বৈধ ফ্রেমওয়ার্ক তৈরি করছে পাকিস্তান। প্রায় চার বছর আগে দেশটি শিল্পখাতে গাঁজা ব্যবহারের অনুমোদন দিয়েছিল। বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ বাড়াতে বিকাশমান বাজারের সুযোগ নিতে চাইছে দেশটি।

ফেব্রুয়ারিতে একটি প্রেসিডেন্সিয়াল আদেশের মাধ্যমে পাকিস্তানের প্রথম গাঁজা নিয়ন্ত্রণ ও নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ২০২০ সালে শিল্পখাতে গাঁজা ব্যবহারের অনুমোদন সরকার দিলেও অভ্যন্তরীণ জটিলতায় নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ গঠনের উদ্যোগ থেমে ছিল।

নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি ১৩ সদস্যের একটি বোর্ডের মাধ্যমে দেখাশোনা করা হবে। এর মধ্যে বিভিন্ন সরকারি বিভাগ, গোয়েন্দা সংস্থার পাশাপাশি বেসরকারি খাতের প্রতিনিধিও থাকবে।

নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি ২০২০ সালে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের আমলে প্রস্তাবিত হয়েছিল। আয়ারল্যান্ড-ভিত্তিক রিসার্চ অ্যান্ড মার্কেটস সংস্থার মতে, বিশ্বব্যাপী ক্যানাবিডিওল বাজার ব্যাপক। ২০২২ সালে এর পরিমাণ ছিল ৭ বিলিয়ন ডলার। ২০২৭ সালের মধ্যে তা ৩০ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ গঠনের ফলে চিকিৎসায় গাঁজার ব্যবহারের সুযোগ বাড়বে। টেট্রাহাইড্রোক্যানাবিনল (টিএইচসি) ও ক্যানাবিডিওল (সিবিডি) পণ্য রোগীদের কাছে বিক্রি করা সম্ভব হবে। অপর দিকে এই গাছটি রশি, কাপড়, কাগজ ও নির্মাণ সামগ্রীতেও ব্যবহার করা হয়।

সরকারি মালিকানাধীন গবেষণা সংস্থা পাকিস্তান কাউন্সিল অব সায়েন্টিফিক অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল রিসার্চের (পিসিএসআইআর) চেয়ারম্যান ও সিসিআরএর গভর্নর বোর্ডের সদস্য সৈয়দ হুসেন আবিদি বলেন, নিয়ন্ত্রক তৈরি করা জাতিসংঘের আইনি প্রয়োজন ছিল।

তিনি আল জাজিরাকে বলেন, ‘জাতিসংঘের আইন বলে, যদি কোনো দেশ গাঁজা সংশ্লিষ্ট পণ্য উত্পাদন, প্রক্রিয়াকরণ ও বিক্রয় পরিচালনা করতে চায়, তবে তার একটি ফেডারেল সত্তা থাকতে হবে যা সরবরাহ চেইন নিয়ন্ত্রণ করবে। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক সম্মতি নিশ্চিত করবে।’

পাকিস্তানে এই আইন লঙ্ঘনের জন্য কঠোর শাস্তির ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে। আইন অমান্যকারীদের গুণতে হবে ১ কোটি পাকিস্তানি রুপি থেকে শুরু করে ২০ কোটি রুপি পর্যন্ত জরিমানা।

আবিদি বলেন, দেশটি তার সুবিধার জন্য ভেষজ চাষ ব্যবহার করতে পারে এবং রপ্তানি, বিদেশি বিনিয়োগ ও অভ্যন্তরীণ বিক্রয়ের মাধ্যমে অনিশ্চিত বৈদেশিক রিজার্ভ বাড়িয়ে রাজস্ব আয় করতে পারে।

এখন পর্যন্ত পাকিস্তানি আইনে গাঁজার চাষ নিষিদ্ধ। কিন্তু দেশটির উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল, বিশেষ করে খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশে হাজার হাজার হেক্টর জমি রয়েছে যেখানে শত শত বছর ধরে ফসল চাষ করা হচ্ছে।

কিন্তু ফেব্রুয়ারির অধ্যাদেশে তা পরিবর্তন করার উদ্দেশ রয়েছে। অধ্যাদেশ অনুয়ায়ী একদিকে যেমন এই অঞ্চলে গাঁজা চাষের নিয়ন্ত্রণের কথা রয়েছে তেমনি চাষীদের লাইসেন্স প্রদানের কথাও রয়েছে।

অন্যদিকে, নতুন নিয়ন্ত্রক সরকারকে লাইসেন্স ছাড়া যারা গাঁজা উৎপাদন করে তাদের শাস্তি দেয়ার আদেশ দিতে পারে। জাতীয় গাঁজা নীতিতে উল্লেখ করা আছে, প্রবিধানগুলোর বিস্তৃত লক্ষ্য হলো ‘অবৈধ ও প্রচলিত গাঁজার চাষ’ রোধ করা।

লাইসেন্স দেয়া হবে পাঁচ বছরের জন্য। আর ফেডারেল সরকার এমন এলাকা নির্ধারণ করবে যেখানে বৈধভাবে গাঁজা চাষ করা যায়।
পথরেখা/এআর

  মন্তব্য করুন
আরও সংবাদ
×

পথরেখা : আমাদের কথা

আমাদের পোর্টালের নাম— pathorekha.com; পথরোখা একটি অনলাইন নিউজ পোর্টাল। আমরা এই প্রতিষ্ঠানকে প্রতিদিনের সত্য-সংবাদের পথরেখা হিসেবে প্রমাণ করতে চাই। পথরেখা সারাদেশের পাঠকদের জন্য সঠিক ও বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ এবং মতামত প্রকাশ করবে। পথরোখা নিউজ পোর্টাল হিসেবে ২০২৩ সালের জুন মাসে যাত্রা শুরু করলো। অচিরেই পথরেখা অনলাইন মিডিয়া হিসেবে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ে নিবন্ধনের প্রক্রিয়া শুরু করবে। পথরোখা  দেশ কমিউনিকেশনস-এর অঙ্গ প্রতিষ্ঠান।
 
পথরোখা জাতীয় সংবাদের উপর তো বটেই এর সঙ্গে রাজনীতি, আন্তর্জাতিক, খেলাধুলা, কৃষি, বিনোদন, অর্থনীতি, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, তথ্য ও প্রযুক্তিসহ বিভিন্ন বিভাগকেও গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করে। মাল্টিমিডিয়া সাংবাদিকতা এবং চৌকস ফটোগ্রাফিকে বিশেষ বিবেচনায় রাখে।
 
পথরোখা’র সম্পাদক আরিফ সোহেল এই সেক্টরে একজন খুব পরিচিত ব্যক্তিত্ব। সাংবাদিক হিসেবে তার দীর্ঘ ৩০ বছর কর্মজীবনে তিনি দৈনিক বাংলাবাজার পত্রিকা, আজকের কাগজ, রিপোর্ট২৪ ডটকম প্রভৃতি প্রতিষ্ঠানে কাজ করেছেন। এ ছাড়া তিনি সরকারী ক্রীড়া পাক্ষিক ‘ক্রীড়া জগত’ ও লাইফস্টাইল ম্যাগাজিক অপ্সরা নির্বাহী সম্পাদক হিসেবে দীর্ঘদিন কাজ করেছেন। তিনি জনপ্রিয় অনলাইন দেশকণ্ঠের নির্বাহী সম্পাদক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন।
 
পথরেখা দেশের মৌলিক মূল্যবোধ, বিশেষ করে জাতীয় সার্বভৌমত্ব, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতার প্রতি অঙ্গীকারবদ্ধ। এছাড়াও, এটি দেশের নাগরিকের মানবিক ও নাগরিক অধিকারের পক্ষে কথা বলবে। ন্যায়পরায়ণতা, নির্ভুলতা এবং বস্তুনিষ্ঠতা বজায় রাখতে আমরা অঙ্গীকারাবদ্ধ। আমরা বিশ্বাস করি যে জনগণের বিশ্বাসযোগ্যতা আমাদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ। পথরেখা রাজনৈতিক ইস্যুতে নির্দলীয় অবস্থান বজায় রাখবে। একটি নিরপক্ষ অনলাইন হিসেবে আমরা নিজেদের কর্মকাণ্ডে প্রমাণ করার শতভাগ প্রছেষ্টা করব। তবে সঠিক পদ্ধতি অনুসরণ করেও কিছু ভুল হতেই পারে। যা ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ রাখছি সব মহলেই। সততা পথে অবিচল; আলোর পথে অবিরাম যাত্রায় আমাদের পাশে থাকুন; আমরা থাকব আপনাদের পাশে।
 
উল্লেখ্য, পথরেখা হিসেবে একটি প্রকাশনী দীর্ঘদিন থেকে প্রকাশিত হয়ে আসছে। এবার উদ্যোগ নেওয়া হলো অনলাইন অনলাইন নিউজ পোর্টাল হিসেবে প্রকাশ করার।