পথরেখা অনলাইন : দেশে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা রক্ষা ও টেকসই প্রবৃদ্ধি অর্জনে অর্থ প্রতিমন্ত্রী ওয়াসিকা আয়শা খান শিক্ষাবিদ,পরিকল্পনাবিদ এবং উন্নয়ন সহযোগীদের শক্তিশালী ও দক্ষ আর্থিক ব্যবস্থাপনার কৌশল তৈরিতে সহায়তা করার আহ্বান জানিয়েছেন।
পাবলিক ফাইন্যান্সিয়াল ম্যানেজমেন্ট (পিএফএম) রিফর্ম স্ট্র্যাটেজি ২০২৫-৩০ তৈরির কার্যক্রমের আনুষ্ঠানিক সূচনা করে আজ রোববার ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে প্রতিমন্ত্রী বাংলাদেশের আর্থিক স্থিতিশীলতা রক্ষা, কর্মসংস্থান তৈরি এবং টেকসই প্রবৃদ্ধি অর্জনে স্ট্র্যাটেজি প্রণয়নের গুরুত্ব তুলে ধরেন। তিনি বলেন, শক্তিশালী কর্মকৌশল প্রণয়নে সরকারের রাজনৈতিক স্বদিচ্ছা রয়েছে। এখন দরকার সকলের সহযোগিতায় একটি কার্যকর পিএফএম কৌশল তৈরি করা।
প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন,পিএফএম কর্মকৌশল এমন এক গুরুত্বপূর্ণ সময়ে প্রণয়ন করা হচ্ছে যখন বাংলাদেশ বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পরিমন্ডলের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করছে। একইসাথে নানাবিধ সুযোগের মধ্যে দিয়ে সময় অতিক্রম করছে। তিনি বলেন,‘যেহেতু আমরা কোভিড ১৯ মহামারির প্রভাব মোকাবিলা করছি, তাই আমাদের কাছে আর্থিক স্থিতিশীলত রক্ষা এবং টেকসই উন্নয়নের জন্য সময়োপযোগী ও কার্যকর আর্থিক ব্যবস্থাপনা অপরিহার্য হয়ে পড়েছে।’
তিনি পিএফএম কৌশল প্রণয়নের জন্য সর্বাত্মক উদ্ভাবনী মতামত ও সহযোগিতা প্রদানের আহবান জানান।বিশ্ব ব্যাংক, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও গ্লোবাল অ্যাফেয়ার্স কানাডার সহায়তা অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ এই উদ্বোধনী আলোচনা সভার আয়োজন করে।
অর্থ সচিব ড. মো. খায়েরুজ্জামান মজুমদারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন বিশ্বব্যাংকের বাংলাদেশ ও ভুটানের ভারপ্রাপ্ত কান্ট্রি ডিরেক্টর বার্নাড হেভেন। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন অর্থ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব সিরাজুন নূর চৌধুরী। বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশে ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধি (হেড অব কো-অপারেশন) ড. মিকাল ক্রেজান, কানাডা হাইকমিশনের কর্পোরেট বা উন্নয়ন সহায়তা প্রধান জো গুডিংস এবং গ্লোবাল অ্যাফেয়ার্স ক্যানাডার সিনিয়র ডেভেলপমেন্ট অ্যাডভাইজর সিলভিয়া ইসলাম। অর্থ বিভাগের যুগ্ম সচিব আবু দাইয়ান মোহম্মদ আহসান উল্লাহ ‘পাথওয়ে টু পিএফএম রিফর্ম স্ট্র্যাটেজি ২০২৫-৩০’ বিষয়ক প্রবন্ধ উপস্থাপনা করেন।
ড. মো. খায়েরুজ্জামান বলেন, পিএফএম একটি অপরিহার্য হাতিয়ার যার মাধ্যমে বিদ্যমান সম্পদ ব্যবহার, সেবা প্রদান এবং সরকারের নীতি ও লক্ষ্যসমূহ অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ সহায়তা করে। উন্নত সেবা প্রদান এবং টেকসই উন্নয়নে সহায়তার লক্ষ্যে বাংলাদেশ এখন পিএফএম ব্যবস্থাকে প্রযুক্তি ও দক্ষ সরকারি ব্যয় ব্যবস্থাপনায় রূপান্তরের কাজ করছে। তিনি আরও উল্লেখ করেন বাংলাদেশে পিএফএম সংস্কারের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য উন্নতি হলেও এর থেকে সর্বোচ্চ সুবিধা পাওয়ার জন্য সকল স্টেকহোল্ডারদের আরও সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে।
অনুষ্ঠানে বার্নার্ড হেভেন বলেন, নতুন প্রযুক্তি ব্যবহার করে পাবলিক ফাইন্যান্সিয়াাল ম্যানেজমেন্টে বাংলাদেশ উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে। অ্যাকাউন্টিং সিস্টেম, ই-প্রকিউরমেন্ট এবং স্বয়ংক্রিয় অর্থ প্রদানের মতো পদ্ধতিগুলোকে আমি অসাধারন অগ্রগতি বলে মনে করি।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পর দুটি কারিগরি অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়। প্রথম অধিবেশনে-‘সরকারের মূল স্টেকহোল্ডারদের রিফলেকশন’ বিষয়ে বক্তব্য রাখেন পরিকল্পনা কমিশন সদস্য (সচিব) রেহানা পারভিন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডর সদস্য (শুল্ক, নীতি ও আইসিটি) মো. মাসুদ সাদিক এবং অর্থ বিভাগের সচবি অতিরিক্ত সচিব মো. মফিদুর রহমান। এই অধিবেশন সঞ্চালনা করেন আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব মো. আব্দুর রহমান খান। বিশ্বব্যাংকের লিড গভর্নেন্স স্পেশালিস্ট (ফিনান্সিয়াল ম্যানেজমেন্ট) সুরাইয়া জন্নাতের সঞ্চালনায় দ্বিতীয় অধিবেশনে-‘অন্যান্য মূল স্টেকহোল্ডারদের অভিমত’ বিষয়ে বক্তব্য রাখেন প্রাক্তন কম্পট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেল মোহাম্মদ মুসলিম চৌধুরী, ইনস্টিটিউট অব পাবলিক ফাইন্যান্সের মহাপরচিালক রমেন্দ্র নাথ বিশ্বাস এবং বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজের গবেষণা পরিচালক ড. মনজুর হোসেন।
অর্থ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব্ ও স্ট্রেনদেনিং পাবলিক ফাইন্যান্সিয়াল ম্যানেজমেন্ট প্রোগ্রাম টু এনাবল সার্ভিস ডেলিভারির (এসপিএফএমএস) জাতীয় কর্মসূচির পরিচালক মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম অনুষ্ঠানে সমাপনী বক্তব্য রাখেন।কারিগরি অধিবশেনে আলোচকরা বলেন, পাবলিক ফাইন্যান্স কার্যকরভাবে পরিচালনা, স্বচ্ছতা বৃদ্ধি এবং জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে পিএফএম পদ্ধতিকে শক্তিশালী করার কোন বিকল্প নেই। কার্যকরী পিএফএম সিস্টেম শক্তিশালী প্রতিষ্ঠান তৈরি, অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা রক্ষা, সম্পদের দক্ষ ব্যবহার এবং মান সম্মত জনসেবা নিশ্চিত করার জন্য পরিচালিত হয়। উল্লেখ্য, গত চার দশকে বাংলাদেশ পিএফএম পদ্ধতির সংস্কারে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে।
পথরেখা/এআর