পথরেখা অনলাইন : সোনা ও হীরা চোরাচালানের মাধ্যমে দেশ থেকে বছরে ৯১ হাজার কোটি টাকার বেশি অর্থ পাচার হচ্ছে এমন হিসাব দিয়ে বাংলাদেশ জুয়েলার্স এসোসিয়েশন (বাজুস) চোরাকারবারিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে আইন শৃংখলা রক্ষা বাহিনীকে চিরুনি অভিযান পরিচালনার দাবি জানিয়েছে।
বাজুস চোরাচালানের মাধ্যমে ১১ হাজার কোটি টাকার হীরা দেশে এসেছে বলে দাবি করে। সংগঠনটি ব্যাগেজ রুল সংশোধনের মাধ্যমে সোনার বার আনা বন্ধের পাশাপাশি ট্যাক্স ফ্রি সোনার অলংকার সর্বোচ্চ ৫০ গ্রাম আনার বিধান করার প্রস্তাব দিয়েছে। সোমবার বাজুস আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন, বাজুসের স্ট্যান্ডিং কমিটি অন এন্টি স্মাগলিং অ্যান্ড ল’ এনফোর্সমেন্টের চেয়ারম্যান মো. রিপনুল হাসান। রাজধানীর বসুন্ধরা সিটিতে সংগঠনটির কার্যালয়ে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বাজুসের উপদেষ্টা রুহুল আমিন রাসেল, কার্যনির্বাহী কমিটির সহসভাপতি মাসুদুর রহমান, বাজুস স্ট্যান্ডিং কমিটি অন ট্যারিফ এন্ড ট্যাক্সেশনের চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন, ভাইস-চেয়ারম্যান ইকবাল উদ্দিন, সদস্য সচিব মো. আলী হোসেন, সদস্য শাওন সাহা প্রমুখ।
লিখিত বক্তব্যে রিপনুল হাসান বলেন, গত ১৯ বছরে যত হীরা আমদানি হয়েছে, তার ৮৭ শতাংশই ভারত থেকে এসেছে। দেশটির গুজরাটের সুরাটে বিশ্বের ৬৫ শতাংশের বেশি হীরা কাটিং ও পলিশিং করা হয়। খুব সহজে বহন করা যায় বলে দেশটি থেকে অবৈধ ভএব হীরা আসছে বলে অনেকের ধারণা। ২০২১ সালে বিজিবি সদস্যরা বাংলাদেশে পাচারের সময় সাতক্ষীরা সীমান্তে পৌঁনে দুই কোটি টাকার ১৪৪টি হীরার গয়না জব্দ করে। তার আগে ২০১৮ সালে ৭০ লাখ টাকার হীরা জব্দ করে। ধারণা করা হচ্ছে দেশে হীরার বাজার প্রায় ১১ হাজার কোটি টাকার। বন্ড সুবিধা ছাড়া অমসৃন হীরা আমদানি শুল্ক ৮৯ শতাংশ এবং মসৃন হীরার আমদানি শুল্ক ১৫১ শতাংশ। শুল্ককর ফাঁকি দিতেই মূলত অবৈধপথে বিপুল পরিমান হীরা আসছে দেশে।
রাজস্ব বোর্ডের তথ্য বলছে, গত ১৯ বছরে সরকার হীরা আমদানিতে মাত্র ১২ কোটি টাকা রাজস্ব পেয়েছে। সেটাও ২০২০ থেকে ২০২২ সালে শিল্পে ব্যবহারের জন্য ৪টি চালানে ২ কেজি ১৬০ গ্রাম ডায়মন্ড আমদানিতে। তবে হীরার কোন অলংকার আমদানি হয়নি। তিনি অভিযোগ করেন খুলনা বিভাগের মেহেরপুর, কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা, ঝিনাইদহ, যশোর ও সাতক্ষীরা জেলা সোনা চোরাচালানের নিরাপদ রুট হয়ে উঠেছে। প্রতিবেশি দেশে পাচার হওয়া সোনার একটি বড় অংশ এসব জেলার সীমান্ত দিয়ে পাচার হয়ে থাকে। প্রাথমিক ধারণা করা হচ্ছে প্রবাসী শ্রমিকদের রক্ত-ঘামে অর্জিত বৈদেশিক মুদ্রার অপব্যবহার করে প্রতিদিন সারাদেশের জল, স্থল, ও আকাশপথে প্রায় ২৫০ কোটি টাকার অবৈধ সোনার অলংকার, সোনার বার, ব্যবহৃত পুরোনো জুয়েলারি (ভাঙারি হিসেবে বিবেচিত) ও হীরার অলংকার (ডায়মন্ড জুয়েলারি) বাংলাদেশে আসছে। এই পুরো অর্থই সোনা ও হীরা চোরাকারবারিরা হুন্ডির মাধ্যমে বিদেশে পাচার করে থাকে। চলমান ডলার সংকট সমাধানে সোনা পাচার ও চোরাচালান বন্ধে সরকারকে উদ্যোগ নিতে হবে।
তিনি চোরাচালান বন্ধে গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর কঠোর নজরদারি দাবি করেন। রিপনুল হাসান জানান, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) তথ্যমতে, ২০২৩ সালে প্রায় ১০২ কোটি টাকার সোনা জব্দ করা হয়েছে। ২০১৪ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত বিজিবি দেশের সীমান্ত অঞ্চল থেকে প্রায় ৯২৬ কেজি সোনা জব্দ করেছে। চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত বিজিবি সীমান্ত এলাকা থেকে প্রায় ২৮ কেজি সোনা জব্দ করেছে। গত ১০ বছরে শুল্ক গোয়েন্দা, কাস্টমস হাউস, বিজিবি, পুলিশ ও বিমানবন্দরের আমর্ড পুলিশ ব্যাটেলিয়ান সারাদেশে অভিযান চালিয়েছে ২ হাজার ৫৮৩ কেজি সোনা জব্দ করেছে। এর মধ্যে আমর্ড পুলিশ ব্যাটেলিয়ান গত কয়েক বছরে ১৩১ কেজি সোনার বার জব্দ করেছে। দেশের অর্থ পাচার প্রতিরোধ সংস্থা বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্টস ইউনিটের (বিএফআইইউ) তথ্য মতে, এসব সোনা বৈধপথে আনা হলে সরকারের ১০ হাজার কোটি টাকার বেশি রাজস্ব আয় হত।
রিপনুল হাসান বলেন, সোনা ও হীরা চোরাচালানের মাধ্যমে অর্থ পাচার রোধে চোরাচালানে জড়িতদের ধরতে আইন-প্রয়োগকারি সংস্থাগুলোর জোরালো অভিযান পরিচালনা করতে হবে। চোরাচালান প্রতিরোধে বাজুসকে সম্পৃক্ত করে পৃথকভাবে সরকারি মনিটরিং সেল গঠন করতে হবে। ব্যাগেজ রুল সংশোধনের মাধ্যমে সোনার বার আনা বন্ধ এবং ট্যাক্স ফ্রি সোনার অলংকারের ক্ষেত্রে ১০০ গ্রামের পরিবর্তে সর্বোচ্চ ৫০ গ্রাম আনার বিধান করতে হবে। একই ধরণের অলংকার দুটির বেশি আনা যাবে না। একই সঙ্গে একজন যাত্রীকে বছরে শুধুমাত্র একবার ব্যাগেজ রুলের সুবিধা গ্রহণ করতে পারবে এমন বিধান করা। ব্যাগেজ রুলের আওতায় সোনার বার ও অলঙ্কার আনার সুবিধা অপব্যবহারের কারণে ডলার সঙ্কট ও চোরাচালানে কী প্রভাব পড়ছে, তা জানতে বাজুসকে সঙ্গে নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ড-এনবিআরকে সমীক্ষা চালানোর প্রস্তাবও করেন রিপনুল হাসান।
পথরেখা/এআর