পথরেখা অনলাইন : বাংলাদেশ ও ভারতের সম্পর্ক যে নতুন উচ্চতায় উন্নীত হয়েছে, তাকে আরও এগিয়ে নেওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন উভয় দেশের প্রধানমন্ত্রী। ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বৈঠকে এ প্রত্যয় ব্যক্ত করা হয়।
২২ জুন শনিবার বিকেলে ভারতের নয়াদিল্লির হোটেল তাজ প্যালেসে সাংবাদিকদের এ কথা জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ।
শনিবার সন্ধ্যায় ভারতের রাষ্ট্রপতি এবং উপ-রাষ্ট্রপতির সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাক্ষাতের আগে এ ব্রিফিংয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, গত ৯ জুন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির শপথ অনুষ্ঠানে যোগদানের পর আবারও তার আমন্ত্রণে অত্যন্ত কম সময়ের ব্যবধানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ২১-২২ জুনের ভারত সফর অত্যন্ত সফল।
তিনি বলেন, ‘মন্ত্রিপরিষদ সদস্য ও কর্মকর্তাসহ দলগতভাবে আলোচনা শেষে দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী একান্ত বৈঠক করেন। বৈঠকে অত্যন্ত আন্তরিকতাপূর্ণ পরিবেশে দ্বিপক্ষীয় সকল বিষয় আলোচনা হয়। এর পর ভারতের প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে মধ্যাহ্নভোজে আমন্ত্রণ জানান।’
১০ সমঝোতা স্মারক:
বৈঠক শেষে চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ-ভারত ডিজিটাল পার্টনারশিপ, বাংলাদেশ-ভারত গ্রিন পার্টনারশিপ, সমুদ্র সহযোগিতা ও সুনীল অর্থনীতি, ভারতের ইন-স্পেস এবং বাংলাদেশের ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের সমঝোতা, বাংলাদেশ ও ভারতের রেল মন্ত্রণালয়ের মধ্যে সংযোগ সংক্রান্ত সমঝোতা, বাংলাদেশ ওশানোগ্রাফিক রিসার্চ ইনস্টিটিউট ও ভারতের ন্যাশনাল ওশানোগ্রাফিক ইনস্টিটিউটের মধ্যে গবেষণা সহযোগিতা, কৌশলগত ও অপারেশনাল খাতে সামরিক শিক্ষা সহযোগিতায় ডিফেন্স সার্ভিসেস স্টাফ কলেজ, ওয়েলিংটন-ইন্ডিয়া এবং মিরপুর ডিফেন্স সার্ভিসেস কমান্ড অ্যান্ড স্টাফ কলেজের মধ্যে নতুন সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর এবং স্বাস্থ্য ও ওষুধসংক্রান্ত সমঝোতা নবায়ন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও প্রশমনে ভারতের ন্যাশনাল ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট অথরিটি এবং বাংলাদেশ ত্রাণ ও দুর্যোগ মন্ত্রণালয়ের বিদ্যমান সমঝোতা নবায়ন এবং মৎস্য সম্পদের উন্নয়নে বিদ্যমান সমঝোতা নবায়নসহ মোট ১০টি সমঝোতাপত্রে স্বাক্ষরের কথা বর্ণনা করেন ড. হাছান মাহমুদ।
কানেক্টিভিটি, সীমান্ত হত্যা, নদী ব্যবস্থাপনা, বিদ্যুৎ খাতে সহযোগিতায় বিশেষ গুরুত্ব:
দুই দেশের মধ্যে সংযোগ বা কানেক্টিভিটি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনার কথা উল্লেখ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দর যাতে ভারতের উত্তর-পূর্ব, বিশেষ করে পূর্বাঞ্চলের জন্য ব্যবহার করা যায়, সে বিষয়ে তাদের আগ্রহ ও আমাদের অগ্রগতি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে।
সীমান্তহত্যা শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনতে রাজনৈতিকভাবে দুই দেশের ঐক্যমতের অভাব নেই, জানিয়ে হাছান মাহমুদ বলেন, এরপরও যে ঘটনাগুলো ঘটছে, সেগুলোও যাতে একদম কমানো যায়, সে বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।
বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে ৫৪টি অভিন্ন নদী আছে। এগুলোর নাব্যতা রক্ষাসহ সামগ্রিক ব্যবস্থাপনা, তিস্তা নদী ব্যবস্থাপনা, জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত মোকাবিলা, বন্যা মোকাবিলা এবং পরিবেশ সংরক্ষণ নিয়েও গুরুত্বসহকারে আলোচনার কথা উল্লেখ করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
তিনি বলেন, দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী তাদের সাথে বিদ্যুৎ খাতে সহযোগিতার প্রসার, ভারতের মধ্য দিয়ে নেপাল ও ভুটান থেকে জলবিদ্যুৎ আমদানিতে সহায়তা এবং ভারত যে ৩ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুতের নতুন সঞ্চালন লাইন করছে, সেটি থেকে কীভাবে সহায়তা পাওয়া যেতে পারে সে বিষয়ে আলোকপাত করেন। পেঁয়াজ, তেল, গম, চিনিসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য আমদানিতে বাংলাদেশের জন্য নির্দিষ্ট কোটা সংরক্ষণ ও আমদানি যাতে বন্ধ না হয়, সে বিষয়েও আমরা আলোচনা করেছি।
বহুপাক্ষিক ফোরামে সমর্থন:
পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ জানান, ব্রিকস সদস্য বা অংশীদার যে কোনো পদে আমরা ভারতের সমর্থন চেয়েছি এবং তারা ইতিবাচক সাড়া দিয়েছে। পাশাপাশি বিমসটেক, ইন্ডিয়ান ওশান রিম অ্যাসোসিয়েশনসহ বহুপাক্ষিক ফোরামগুলোতে অবস্থান শক্তিশালী করা, অর্থনৈতিক সহযোগিতা বৃদ্ধির বিষয়েও আলোচনা ছিল ইতিবাচক।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে আশ্রিত প্রায় ১৩ লাখ রোহিঙ্গাকে মিয়ানমারে প্রত্যাবাসন নিয়ে আলোচনায় চীনের ভূমিকা বৃদ্ধির কথাও এসেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চীন সফরে এটি আলোচনা করবেন বলেছেন।
ভিসা নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে হাছান মাহমুদ জানান, বাংলাদেশিদের জন্য ভারত বছরে প্রায় ২০ লাখ ভিসা দেয়। মেডিক্যাল ভিসা ত্বরান্বিত করতে ও অন্যান্য ভিসার অযথা বিলম্ব রোধে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তাদের মিশনগুলোকে নতুন নির্দেশনা দিয়েছেন।
ভারতে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার মুস্তাফিজুর রহমান এবং প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব নাঈমুল ইসলাম খান ব্রিফিংকালে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন।
পথরেখা/এআর