পথরেখা অনলাইন : একাত্তরে পাকিস্তানি হানাদাররা আগ্রাসন শুরুর আগ মুহূর্তে বন্দি করে অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। কিন্তু স্বাধীনতার পর দেশের শাসনভার পেয়ে মাত্র তিন বছরে বঙ্গবন্ধু দেখিয়ে দেন যুদ্ধবিধ্বস্ত একটি দেশকে নিয়ে কীভাবে ঘুরে দাঁড়াতে হয়। তার গৃহীত পদক্ষেপগুলো আজও দেশের অগ্রগতিতে অনুপ্রেরণা যোগাচ্ছে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
৯ মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ। অতঃপর রক্তিম বিজয়। বাংলার আকাশে পতপত করছে লাল সবুজ পতাকা। কিন্তু বিজয়ের মহান স্থপতি তখনও বন্দি পাকিস্তানের কারাগারে। আপামর মানুষের অধীর অপেক্ষা আর তুমুল চাওয়া প্রিয় নেতার ফেরার।
অবশেষে দীর্ঘ নয় মাস কারাভোগের পর একবুক স্বপ্ন নিয়ে ১৯৭২ সালে ৮ জানুয়ারি পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্তি পান শেখ মুজিবুর রহমান। সেদিন সকাল সাড়ে ৬টায় তিনি পৌঁছান লন্ডনের হিথরো বিমানবন্দরে।
সকাল ১০টার পর থেকে বঙ্গবন্ধু কথা বলেন ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী এডওয়ার্ড হিথ, ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীসহ অনেকের সঙ্গে। পরের দিন ৯ জানুয়ারি ব্রিটেনের বিমান বাহিনীর একটি বিমানে যাত্রা করেন দেশের পথে। ১০ জানুয়ারি পা রাখেন সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশে।
বাঙালিও নিরাশ করলেন না এই অবিসংবাদিত নেতাকে। বরণ করে নিল সাধ্যমতো। বঙ্গবন্ধু সেদিন দেশবাসীকে জানিয়েছিলেন অকৃত্রিম ভালোবাসা-কৃতজ্ঞতা।
‘যে মাটিকে আমি এত ভালোবাসি, যে মানুষকে আমি এত ভালোবাসি, যে জাতিকে আমি এত ভালোবাসি, আমি জানতাম না সে বাংলায় আমি যেতে পারব কি না। আজ আমি বাংলায় ফিরে এসেছি বাংলার ভাইদের কাছে, মায়েদের কাছে, বোনদের কাছে। বাংলা আমার স্বাধীন, বাংলাদেশ আজ স্বাধীন।’ বললেন বঙ্গবন্ধু।
১৯৭২ সালের ১১ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধুর সভাপতিত্বে এক বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয় দেশে সংসদীয় ব্যবস্থা চালু করার। ১২ জানুয়ারি দেশের রাষ্ট্রপতির পদ থেকে সরে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নেন বঙ্গবন্ধু।
স্বাধীন দেশে রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব পান বিচারপতি আবু সাইদ চৌধুরী। এছাড়া, মন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন আরও ১১ জন। সেই দিনই বুঝিয়ে দেয়া হয় কার্যভার।
১৯৭২ সালের ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত সব ধরনের কৃষি জমির খাজনা মওকুফের সিদ্ধান্ত হয়। একইসঙ্গে দেশের জাতীয় সংগীত এবং রণসংগীত নির্ধারণ করা হয়।
এর পর শুরু হয় দেশ গঠন। কিন্তু মড়ার উপর খাড়ার ঘা হয়ে আসে দুর্ভিক্ষ। তবে শেখ মুজিব বিদেশ থেকে পাওয়া সহায়তার উপযুক্ত ব্যবহার করেন। আর তাতেই ঘুরে দাঁড়ায় পুরো দেশ।
এছাড়া দেশকে এগিয়ে নেয়ার দৃঢ় প্রত্যয় ছিল শেখ মুজিবের। অস্থায়ী শাসনতন্ত্র আদেশ জারি, আদমজী জুট মিল উদ্বোধন, আমদানিনীতি ঘোষণা, ইসলামিক ফাউন্ডেশন গঠন, গণপরিষদ আদেশ জারিসহ বিভিন্ন উদ্যোগ নেন।
১৯৭২ থেকে ১৯৭৫- এ সময়ে বঙ্গবন্ধু দেখিয়েছেন যুদ্ধবিধ্বস্ত একটি দেশকে নিয়ে কীভাবে ঘুরে দাঁড়াতে হয়। অনেক বিশেষজ্ঞের মত, স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের পর বঙ্গবন্ধুর গৃহীত পদক্ষেপ আজও দেশের অগ্রগতির মূল অনুপ্রেরণা।
পথরেখা/এআর