পথরেখা অনলাইন : গোপালগঞ্জে ১ হাজার ৩০ মেট্রিক টন চীনা বাদাম উৎপাদিত হয়েছে। চলতি বছর জেলার ৫ উপজেলায় ৫১৫ হেক্টর জমিতে চীনা বাদোমের আবাদ করেন কৃষক। সে হিসাবে প্রতি হেক্টরে গড়ে ২ মেট্রিক টন বাদাম ফলেছে। বাদামের বাম্পার ফলন পেয়ে কৃষক লাভবান হেয়েছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের গোপালগঞ্জ খামারবাড়ির উপপরিচালক কৃষিবিদ আ. কাদের সরদার বলেন, গোপালগঞ্জ সদর উপজেলায় ৪৫০ হেক্টরে বাদামের আবাদ করা হয়। সেখানে ৯০০ মেট্রিক টন বাদাম উৎপাদিত হয়েছে। মুকসুদপুরে ১০ হেক্টরে উৎপাদিত হয়েছে ২২ মেট্রিক টন, কাশিয়ানীতে ৩৫ হেক্টরে ৬৮ মেট্রিক টন, কোটালীপাড়ায় ১৫ হেক্টরে ২৯ মেট্রিক টন, টুঙ্গিপাড়া উপজেলায় ৫ হেক্টরে ১১ মেট্রিক টন চীনা বাদাম উৎপাদিত হয়েছে। কৃষক উচ্চ ফলনশীল বিনা ও বারি চীনা বাদামের জাত আবাদ করেছেন । এ কারণে তারা চীনা বাদামের বাম্পার ফলন পেয়ে লাভবান হয়েছেন।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের গোপালগঞ্জ খামারবাড়ির অতিরিক্ত উপপরিচালক কৃষিবিদ সঞ্জয় কুমার কুন্ডু বলেন, ভোজ্য তেলের উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে সরকারের পক্ষ থেকে চলতি বছর বাদাম চাষাবাদে জেলার ৫ উপজেলার ৬৮০ জন কৃষককে প্রণোদনার বীজ ও সার দেওয়া হয়। কৃষক প্রতি ১০ কেজি করে চীনা বাদাম বীজ, ১০ কেজি করে ডিএপি ও ১০ কেজি করে এমওপি সার দেওয়া হয়। প্রণোদনার বীজ সার পেয়ে কৃষক ৬৮০ বিঘা জমিতে চীনা বাদামের আবাদ বৃদ্ধি করেন। এভাবে বাদামের উৎপাদন বৃদ্ধি পেলে দেশে ভোজ্য তেলের আমদানী নির্ভরতা কমবে। গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার কৃষক সাইফুল আলম খান বলেন, আমি গোপালগঞ্জ বিনা উপকেন্দ্র থেকে বিনামূল্যে বিনাচীনাবাদাম-৬ বীজ ও সার পেয়ে আমার ১ শ’ ৫০ শতাংশ জমিতে বাদামের আবাদ করি। প্রতি শতাংশে আমি এ জাতের বাদাম ১২ কেজি ফলন পেয়েছি। সে হিসাবে ২৪৬.৫১ শতাংশের ১ হেক্টরে এ বাদাম ফলন দিয়েছে ২ টন ৯শ’ ৫৮.১২ কেজি । এটি রেকর্ড ফলন বলে মন্তব্য করেন ওই কৃষক।
সাইফুল আলম খান আরো বলেন, আমার দেড় একর জমিতে বাদাম আবাদে খরচ হয়েছে ৬০ হাজার টাকা। এখান থেকে আমি ১ হাজার ৮শ’ কেজি বাদাম পেয়েছি। প্রতি কেজি বাদাম ১শ’ টাকা দরে বিক্রি করেছি। উৎপাদিত বাদাম ১ লাখ ৮০ হাজার টাকায় বিক্রি হয়েছে। খরচ বাদে লাভ হয়েছে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা। ধান ও পাটের তুলনায় বাদামে লাভ অনেক বেশি। বাদামের পর আমি বিনা আমন ধান করব। আমন কেটে স্বল্পজীবনকাল সম্পন্ন বিনা সারিষা চাষ করে আসছি। বিনার শস্য বিন্যাস অনুসরণ করে আমি প্রতি বছর একই জমিতে ৩টি ফসল করতে পারছি। এতে আমার আয় বেড়েছে। আর্থসমাজিক অবস্থার ব্যাপক পরিবর্তন ঘটাতে পেরেছি।
বিনা গোপালগঞ্জ উপকেন্দ্রের উর্ধতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও ইনচার্জ ড. মো. কামরুজ্জামান বলেন, বিনাচীনাবাদাম-৬ হেক্টরে ২টন ৯শ’ কেজি পর্যন্ত ফলন দিতে পারে। কিন্তু কৃষক সাইফুল এ বাদাম চাষ করে বাড়তি পরিচর্যা করেছেন। তাই তিনি রেকর্ড পরিমান ২ টন ৯৫৮ কেজি ফলন পেয়েছেন। এ চীনাবাদামের জীবনকার ১৪০ থেকে ১৫০ দিন। বাদামের ভেতরের দানা পুষ্ট। তাই তেলের পরিমান ৪৮%। এ বাদাম আবাদ করে কৃষক লাভবান হচ্ছেন। এ বাদামের বদৌলতে কৃষক একই জমিতে বছরে ৩টি ফসল করতে পারেন। এ বাদামের চাষ সম্প্রসারণ করতে পারলে দেশে ভোজ্য তেলের আমাদানী হ্রাস ও তেলের উৎপাদন বৃদ্ধি করা সম্ভব বলে ওই কৃষি বিজ্ঞানী মন্তব্য করেন।
পথরেখা//আসো