পথরেখা অনলাইন : দেশীয় প্রজাতির মাছকে সুরক্ষা প্রদানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে মৎস্য অভয়াশ্রম। নাটোরের ৪২টি অভয়াশ্রমের মধ্যে সর্বশেষ সংযোজন চলনবিলের ডাহিয়া মৎস্য অভয়াশ্রম। জেলা মৎস্য বিভাগ জানিয়েছে, জেলার বিভিন্ন নদী, খাল এবং বিলে ৪২টি মৎস্য অভয়াশ্রম রয়েছে। শুষ্ক মৌসুমে এসব অভয়াশ্রমে পানিসহ অক্সিজেনের প্রবাহ ঠিক রাখা, ডালপালা-ঝোপঝাড়ের আবরণ এবং পাহারা রেখে অভয়াশ্রমের মা মাছগুলোকে সুরক্ষা প্রদান করা হয়।
বর্ষা মৌসুমে এসব অভয়াশ্রম প্লাবিত হয়ে দেশীয় প্রজাতির মাছ মুক্ত জলাশয়ে ছড়িয়ে পড়ে। বারনই নদীর শ্যামনগরে দেশীয় প্রজাতির বিভিন্ন মাছের সঙ্গে দুষ্প্রাপ্য সিলন মাছের উপস্থিতি রয়েছে বলে জানান নলডাঙ্গা উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা সঞ্জয় কুমার সরকার। উপজেলার নাথুরঘাট অভয়াশ্রমও সমৃদ্ধ বলে জানান উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা। পানি উন্নয়ন বোর্ড নাটোর জেলা কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম চৌধুরী জানান, প্রায় ৯০ লাখ টাকা ব্যয়ে চলনবিল এলাকার ডাহিয়া মৎস্য অভয়াশ্রম খনন করা হয়েছে। নতুন এ অভয়াশ্রমে শুষ্ক মৌসুমে পানির সংকট দেখা দিলে উপজেলা প্রশাসন একটি ডিপ টিউবয়েল প্রতিস্থাপন করে দেয়।
সিংড়া উপজেলার সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোঃ শাহাদত হোসেন জানান, ডাহিয়া অভয়াশ্রমে চলনবিলের বিখ্যাত কৈ, শিং, গুচি মাছের আধিক্য রয়েছে। বর্তমানে এ অভয়াশ্রমের একটি অংশ বিলের পানিতে প্লাবিত হয়েছে। এলাকার মৎস্যজীবী খয়ের উদ্দিন, রুহুল আমিন জানান, ডাহিয়া মৎস্য অভয়াশ্রমের সুফল হিসেবে এ মৌসুমে বিলে দেশীয় প্রজাতির প্রচুর মাছ পাচ্ছি।
পক্ষীকুলের আশ্রয় ও নিরাপদ খাদ্য উৎপাদন প্রকল্পের উদ্ভাবক ও সমন্বয়কারী যশোধন প্রামানিক পানি উন্নয়ন বোর্ডের মাধ্যমে মৎস্য অভয়াশ্রম তৈরীর ক্যাম্পেইন করে যাচ্ছেন। তিনি বলেন, দেশীয় প্রজাতির মাছই শুধু নয় এসব অভয়াশ্রম শামুক, ঝিনুক আর কাঁকড়া’র নিরাপদ আবাস। জীববৈচিত্র্য রক্ষা করতে এসব অভয়াশ্রম রক্ষা করার পাশাপাশি এর পরিধি বৃদ্ধি করতে হবে।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা ড. আবুল কালাম আজাদ বলেন, দেশীয় প্রজাতির মাছের সুরক্ষা প্রদান এবং বিস্তার ঘটাতে মৎস্য অভয়াশ্রম অনন্য ভূমিকা পালন করে। বর্ষা মৌসুমে প্লাবিত এসব অভয়াশ্রম শুষ্ক মৌসুমে নিরাপদ রাখতে মৎস্য বিভাগ স্থানীয় মৎস্যজীবীদের প্রণোদনা ও প্রশিক্ষণ দিয়ে যাচ্ছে। তবে শুষ্ক মৌসুমে নদী এবং খাল থেকে সেচের পানি গ্রহণের সময় অন্তত পাঁচ ফুট পানির প্রবাহ রেখে পানি গ্রহণ করা হলে মৎস্য অভয়াশ্রমগুলো নিরাপদ থাকবে। এ ব্যাপারে বিএডিসি সতর্ক দৃষ্টি রাখলে মৎস্য অভয়াশ্রমগুলো সজীব থাকবে এবং মৎস্য খাত সমৃদ্ধ হবে।
পথরেখা/এআর