পথরেখা অনলাইন : পাবনার ভাঙ্গুড়ায় বিরোধপূর্ণ পুকুরের মাছ তুলে বিক্রির অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় আব্দুর রশীদ ও তার ভাই বিএনপি নেতা শহিদুল ইসলামের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী পুকুরের মালিক দাবিদার মো. ইয়াহিয়া ও তার পরিবারের পথে বসার উপক্রম হয়েছে। তাদের দাবি, ১৭ বিঘার ওই পুকুরটিতে অন্তত একশ’ মন মাছ ছিল। যার অধিকাংশই তুলে বিক্রি করে দিয়েছেন অভিযুক্ত দুই ভাই।
সোমবার (৩০ সেপ্টেম্বর) ভোররাতে পাবনার ভাঙ্গুড়া উপজেলার খানমরিচ ইউনিয়নের চন্ডিপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। বিষয়টি নিয়ে ভাঙ্গুড়া থানা, ইউএনও ও সেনা ক্যাম্প বরাবর অভিযোগ দিয়েছে ভুক্তভোগী পরিবার।
লিখিত অভিযোগে বলা হয়, ১৭ বিঘার পুকুরটির অধিকাংশ মালিকানা (প্রায় ১০ বিঘা) প্রয়াত আজগার আলীর দুই সন্তান ও মেয়েদের। বাকি ৭ বিঘার মধ্যে সাড়ে চার বিঘা স্থানীয় গ্রামবাসীর এবং সোয়া দুই বিঘার মালিক আব্দুর রশীদ ও তার ভাই খানমরিচ ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি শহিদুল ইসলাম। এই দুই বিঘার ক্ষমতাবলেই পুকুর কাটার দেড় বছরের মাথায় পুরোটা দখলে নেন দুই ভাই।
ভুক্তভোগী ইয়াহিয়া বলেন, ‘আমি গত ৩ দফায় ধার করে এই পুকুর সাজিয়েছি। কিন্তু প্রতিবারই রশীদ এটি ভেঙে গ্রাস করে নিয়েছেন। পুকুর কাটার দুই বছরের মাথায় গ্রাম্য নেতাদের মাধ্যমে চাপ দিয়ে আমাকে এখান থেকে বের করে দেওয়া হয়। সে সময় লিজ বাবদ প্রতিবছর টাকা দেওয়ার কথা থাকলেও গত ১৪ বছরে আমাকে এক টাকাও দেননি রশীদ।’
তার দাবি, ‘শুধু লীজের এই টাকা (প্রচলিত নিয়মে ২০ হাজার) ধরলেও গত ১৪ বছরে রশীদের কাছ থেকে পাওনা ১ কোটি ৪৪ লাখ টাকা। তাই অবৈধ উপায়ে আজকের মাছ ধরা এবং গত ১৪ বছরের ক্ষতিপূরণ চান ভুক্তভোগী ইয়াহিয়া।’
এর আগে রশীদের বিরুদ্ধে আদিবাসীদের বসতবাড়ি থেকে উচ্ছেদ করার হুমকির অভিযোগ উঠে। পরে দিশা না পেয়ে পরিবারটি মামলা করে, যা বর্তমানে প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
এসব অভিযোগের বিষয়ে আব্দুর রশীদ বলেন, ‘গত ১১ বছর ধরে পুকুরটির মালিক আমি। অন্য মালিক এবং ইয়াহিয়ার অংশটুকুও আমার কাছে বিক্রি করে দিয়েছে। সে দলিলও আছে। ইয়াহিয়া যে অভিযোগ করছে এসব মিথ্যা। আমার পুকুরের মাছ আমি তুলবো, বিক্রি করবো এটাই স্বাভাবিক।’
তার দাবি, ‘আদিবাসীদের বসবাস করা জমিটি তার পূর্বপুরুষ কিনেছে। সে হিসেবে তারাই ওই জমির মালিক এবং এর দলিল-কাগজপত্র রয়েছে। সেই মালিকানা চাওয়ায় ২০০৭ সালে আদিবাসী পরিবারটি মামলা করে। বর্তমানে তার জমি প্রায় একশ’ বিঘার মতো বলে দাবি করেন তিনি।’
এত জমি কিভাবে হলো জানতে চাইলে কথা বলেননি তিনি। আরেক অভিযুক্ত রশীদের ভাই খানমরিচ ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘অনেক বছর ধরে আমরা পুকুর ভোগ দখল করছি। এখানে ইয়াহিয়ার কোনো জমি নেই। তাদের ভাইবোনের অংশ আমাদের কাছে বিক্রি করে দিয়েছে অনেক আগেই। তার দলিল কাগজপত্র সব আছে। তাদের কোনো জমি নেই। মিথ্যা অভিযোগ করছে।’
এ বিষয়ে ভাঙ্গুড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘সোমবার সকালে ফোনে জানানোর পর ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠিয়েছিলাম। বিকেলে লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
এ বিষয়ে ভাঙ্গুড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাজমুন নাহার বলেন, ‘সোমবার সন্ধ্যায় লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। উভয়পক্ষকে ডেকে নিয়ে বিষয়টি কার কি অবস্থা সব জেনে তারপর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
পথরেখা/এআর